ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেপটাউনে টেস্ট দিয়ে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

কেপটাউনে টেস্ট দিয়ে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এখন সময়টা বিরাট কোহলিদের। দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছে তারা তিন ফরমেটেই। তবে কোন অনুশীলন ছাড়াই এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামতে হচ্ছে সফরকারী ভারতীয় দলকে। মাত্র কিছুদিন আগে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয়ার সুখস্মৃতি নিয়েই প্রোটিয়া ভূমিতে গেছে ভারত। সেই সিরিজেই প্রস্তুতি যতটা সম্ভব নিয়েছে কোহলিরা। সেটাই এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ভিন্ন পরিবেশ ও উইকেটে প্রয়োগ করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। অবশ্য প্রোটিয়া ভূমিতে গতিময় উইকেটে খেলতে হবে সেজন্য দেশের মাটিতেও তেমন উইকেটেই এবার লঙ্কানদের বিরুদ্ধে খেলেছে ভারত। সেই সঙ্গে ওপেনার শিখর ধাওয়ান পুরোপুরি ফিট খেলার জন্য। রবীন্দ্র জাদেজার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে হয়তো খেলবেন না কিন্তু রবিচন্দ্রন অশ্বিন থাকছেন। আজ কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে ৩ টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারতের জন্য তবু বড় পরীক্ষা দুই নম্বরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। প্রোটিয়া দলে ফিরেছেন নিয়মিত অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস এবং পেসার ডেল স্টেইন। তবে স্টেইন শতভাগ ফিটনেস ফিরে না পাওয়ায় প্রথম টেস্টে হয়তো খেলবেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে উইকেটগুলো বেশ গতিময় ও বাউন্সি। আর সে কারণেই ধীরগতি ও স্পিনবান্ধব উইকেটে খেলা উপমহাদেশের দলগুলোকে বেশ সংগ্রাম করতে হয়। সেই সঙ্গে স্পিনাররা তেমন সুবিধা আদায় করতে পারেন না। ভারতীয় দলকেও আগের সবগুলো সফরে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে নিউল্যান্ডসে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্নতর। টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচের দুই ভেন্যু সেঞ্চুরিয়ন এবং ওয়ান্ডারার্সের তুলনায় এখানে উইকেট কিছুটা কম গতির। আর ম্যাচের শেষদিকের কয়েকটা দিন স্পিনাররাও বেশ সুবিধা পেয়ে থাকেন। দিন গড়ানোর সঙ্গে বলে যথেষ্ট স্পিন পাওয়া যায়। কেপটাউনে বিশ্রী রকমের খরার কারণে উইকেট এবং মাঠ কোনটাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পায় না। তবে এরপরও উইকেটে যথেষ্ট ঘাস রাখা হয়েছে। বিরল কিছু ফাটল হয়তো দিন গড়ানোর পর চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসবে। তখন স্পিনাররা নিজেদের কিছু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। আবহাওয়া রিপোর্ট বলছে যথেষ্ট রৌদ্রোজ্জ্বল থাকবে পরিবেশ, হাল্কা বাতাসও থাকবে। সে কারণে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রীর ওপরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দেশের মাটিতে এরচেয়ে বেশি তাপমাত্রায় খেলে গেছেন কোহলিরা। তাই এটার সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটাও সমস্যায় ফেলবে সফরকারীদের। তবে রবিবার ম্যাচের তৃতীয়দিনে কিছুটা ঝড়োহাওয়া এবং সামান্য বৃষ্টি খেলায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। স্পিন আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতীয় দলকে কিছুটা ঝামেলায় পড়তে হবে জাদেজার অভাবে। এই লেগস্পিনার স্বাস্থ্যগত সমস্যায় খেলতে পারবেন না। এ কারণে ভারতীয় দলের স্পিন আক্রমণটা পুরোপুরিই সামাল দিতে হবে অশ্বিনকে। তবে ব্যাটিং বিভাগে ভারতীয় দলের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে ধাওয়ানের ফেরা। বাউন্সি উইকেটে বেশ ভাল রেকর্ড তার। আর স্টেইনকে প্রথম টেস্টেই পাচ্ছে না প্রোটিয়ারা। ফিটনেস পুরোপুরি ফিরে না পাওয়ায় আপাতত তাকে না খেলানোর চিন্তাই করছে তারা। তবে ভারতের বিরুদ্ধে বেশ ভাল রেকর্ড আরেক পেসার মরনে মরকেলের। এ বছর ৯ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে ভারতীয় দলকে স্পিনার কেশব মহারাজের বিরুদ্ধেও পরীক্ষা দিতে হবে। মহারাজ গত বছর ১০ টেস্টে ৪৫ উইকেট নিয়েছেন। সেখানে অবশ্যই অশ্বিন এগিয়ে সমান ম্যাচে ৫০ উইকেট শিকার করেন। গত বছরের ব্যাটিং নৈপুণ্যের দিক বিবেচনা করলে দক্ষিণ আফ্রিকাই এগিয়ে আছে। ওপেনার ডিন এলগার ১০ ম্যাচে ৯১৭ রান করেছেন। এছাড়া হাশিম আমলার আছে সমান ম্যাচে ৭৮৪ রান। কিন্তু ভারতের চেতেশ্বর পুজারা ১০ ম্যাচে ১০০৩ এবং অধিনায়ক কোহলি ৯ টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি দেখিয়ে করেছেন ৮১৭ রান। এই পরিসংখ্যানগুলো ব্যাট-বলের দারুণ লড়াই হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করছে। তাছাড়া ভারতের পেস বোলিংটাও বর্তমান সময়ে দুরন্ত হয়ে উঠেছে। ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব এবং মোহাম্মদ শামিরা দারুণ ফর্মে আছেন। আর প্রোটিয়া পেস আক্রমণে থাকছেন পূর্ণ ছন্দে ফেরা ভারনন ফিল্যান্ডার, মরকেল ও কাগিসো রাবাদা। ব্যাটিং শক্তিটা বেড়েছে অভিজ্ঞ এবি ডি ভিলিয়ার্স পুরোপুরি খেলার মধ্যে ফেরা এবং অধিনায়ক প্লেসিস আসাতে। হেড-টু-হেড বিবেচনায় এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরস্পরের মধ্যে হওয়া টেস্টগুলোর মধ্যে ১৩ জয় প্রোটিয়াদের, ১০ জয় ভারতের এবং বাকি ১০ ম্যাচ হয়েছে ড্র। তারচেয়ে বড় কথা গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে উপমহাদেশের দল বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করেছে প্রোটিয়ারা নিজেদের মাঠে পেয়ে। আর ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিবেশী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম চারদিনের টেস্ট খেলে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে। সেসব তো এগিয়েই রাখছে স্বাগতিকদের। আর প্রোটিয়া ভূমিতে ২০০৬ সালে প্রথমবার টেস্ট জিতেছিল ভারত। তবে ২০১৪-১৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের পর আর কোন টেস্ট সিরিজ হারেনি কোহলিরা। প্রতিবেশী বাংলাদেশের চেয়ে ব্যাটে-বলে যথেষ্ট শক্তিধর এবং সাম্প্রতিক সাফল্যে উজ্জীবিত ভারত বর্তমানে। তাই জমজমাট লড়াইয়েরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। শুধু অনুশীলনের ঘাটতি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ-পরিস্থিতি ও অতীত রেকর্ডটাই চ্যালেঞ্জের কারণ ভারতীয় দলের। সেই পরীক্ষার শুরু আজ সিরিজের প্রথম টেস্টে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে।
×