ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেলায় নজর কাড়ছে সুন্দরবন ইকো পার্ক

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

মেলায় নজর কাড়ছে সুন্দরবন ইকো পার্ক

ওয়াজেদ হীরা ॥ সুন্দরবনের কেউরা, গোলপাতা লাগানো আছে বিভিন্ন অংশে। চারপাশে বয়ে গেছে পানির স্রোত ধারা যা খালের আদলে তৈরি। সেই পানির স্রোত ধারায় রয়েছে কুমির, বকও! হরিণ আর বাঘও রয়েছে কিনারায়। জীবন্ত না হলেও কৃত্রিমভাবে তৈরি এই বাঘ আর হরিণের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় সুন্দরবন ইকো পার্কে। এ যেন মেলায় মধ্যে এক টুকরো সুন্দরবন। দর্শনার্থীদের কাছে প্রাকৃতিক নৈসর্গকে তুলে ধরতে আর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন সম্পর্কে ধারণা দিতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও মেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই আগত দর্শনার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে ৫০ বাই ১২০ ফিটের এই সুন্দরবন ইকো পার্কটি। সুন্দরে প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যারাই মেলায় আসছেন তারাই কিছুক্ষণের জন্য হলেও থেমে যান এই সুন্দরবন ইকো পার্কের সামনে। দর্শনার্থীদের মধ্যে এই ইকো পার্কের প্রতি বেশি আগ্রহী হয় শিশু ও তরুণরা। তবে মাঝ বয়সীরাও বাদ যায়নি। তারাও এর সামনে সুন্দর দৃশ্যকে মুঠোফোনে সেফলি দিয়ে বন্দি করে নিতেও দেখা গেছে। দিন যত যাবে এর সামনে দেখার জন্য ভিড়ও ততোই বাড়বে বলে মনে করছেন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরা। ২০১৩ সাল থেকে মেলায় এই নতুন সংযোজন আনা হয়। প্রতি বছরই এই তৈরি করা সুন্দরবনের প্রতি দর্শক আগ্রহতা দেখা গেছে। অতীতের বাণিজ্যমেলায়ও ছুটির দিন ছাড়াও অন্যান্য দিনে এর প্রতি বিশেষ ভাললাগা ফুটে উঠেছে দর্শনার্থীদের। এবছরও এই ইকো পার্কে কাছে এসে বিভিন্ন বয়সের মানুষের স্বস্তির বিনোদন পেতে দেখা গেছে। মেলায় আগত ছোট শিশু শিমুল বলেন, সুন্দরবন খুব ভাল লেগেছে। তার বাবা জানান, সন্তানকে কখনও সুন্দরবনে নিয়ে যাওয়া হয়নি তাই এর মধ্যদিয়ে একটা ধারণা দিলাম। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার পূর্বদিক বরাবর এ মিনি সুন্দরবন তৈরি করা হয়েছে সরকারী উদ্যোগে। মিনি সুন্দরবনের ডিজাইন করেছেন ডিজাইনার জামিউর রহমান লেমন। ডিজাইনিং এ্যাডভারটাইজিং প্রতিষ্ঠানের নামে মূলত তিনিই এ মিনি সুন্দরবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন এবং লোকবল দিয়ে মিনি সুন্দরবনের সাজসজ্জার কাজ করেছে। প্রতিনিয়ত এর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন ব্যক্তি। জামিউর রহমান লেমন জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের এ প্রয়াস। প্রধানত পর্যটন শিল্পকে প্রমোট করা, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা। উন্নত বিশে^র মেলাগুলোতে তাদের ঐহিত্য তুলে ধরা হয় সে আলোকেই মূলত আমাদের এই প্রচেষ্টা। ইপিবির সচিব ও মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান আবু হেনা মোরশেদ জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা যেটা চেয়েছি বিশ^ এতিহ্য হিসেবে সুন্দরবনকে ফুটিয়ে তুলা এটা একটা উদ্দেশ্য আর জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশগত একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে বিষয়ে সচেতন করাটাও একটা উদ্দেশ্য। আসলে বাণিজ্যমেলায় যে বিষয়টি থাকে তা হলো বাণিজ্য বৃদ্ধি, মানুষের জন্য বিনোদন এবং জাতীয় উন্নতির সামগ্রিক বিষয়ে সচেতন করা। আমরা সব সময়ই একটা ভাল উদ্যোগ নেই এবং চেষ্টা করি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন ইকো পার্কে রাখা হয়েছে বাঘ, কুমির, ভাল্লুুক, হরিণ, অজগর, বানর এবং বিভিন্ন পাখির মূর্তি। এছাড়া জীবন্ত রাখা হয়েছে বন মুরগি, টার্কি, খরগোশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়া সুন্দরবনে নদীর ধারে যে গোলপাতার গাছ থাকে তাও রাখা হয়েছে। মেলার এই বনে স্থান পেয়েছে ১৫-১৬ প্রজাতির উদ্ভিদ। রয়েছে বড় গাছও। শুরু থেকেই এই সুন্দরবনের জন্য বেশ স্পন্সর পাওয়া গেলেও এখন আর পাওয়া যায় না বলে জানান জামিউর রহমান লেমন। দর্শনার্থী সিমিরান আফসানা বলেন, সুন্দরবনে যাওয়া হয়নি তবে এখানে মিনিবন দেখে একটা আইডিয়া পেলাম। ঘুরে আসার আগ্রহ জেগেছে। দেখি চেষ্টা করব যাওয়ার। বেসরকারী চাকরিজীবী আসিফ সরোয়ার বলেন, আমাদের দেশের ঐতিহ্যগুলো এভাবে ফুটিয়ে উঠালে দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। যেতে না পারলেও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যায়। মিনি সুন্দরবনের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, বনের মধ্যে বিভিন্ন লাইট দেয়া হয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় বন একরকম আর রাতের বেলায় আলোয় একটু হলেও ভিন্ন রকম দেখা যায়। তবে এ বছর সাউন্ড সিস্টেম লাগানো হয়নি বলেও জানা গেছে। মেলার ক্রমেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে সেই সঙ্গে এই বনের প্রতি হচ্ছে আকৃষ্ট। আর এই বন দেখা থেকে কেউ কেউ স্বপ্ন বুনছেন প্রাকৃতিক সেই সুন্দর নৈসর্গকে দেখতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ারও।
×