ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাল-সবুজের বিশ্বতারকারা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২ জানুয়ারি ২০১৮

লাল-সবুজের বিশ্বতারকারা

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। গত বছরের প্রতিটি মঙ্গলবার আমরা তুলে ধরেছি তরুণদের সাফল্যের গল্প অনুপ্রেরণার কথা আজকের ডিপ্রজন্মে থাকছে একটি বিশেষ আয়োজন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর তরুণদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রতিবছর ৬০ জন তরুণকে তুলে দেন তাদের কাজের স্বীকৃতির সম্মাননা। ২০১৫ থেকে ২০১৮ এ সময়ে বাংলাদেশী ছয়জন তরুণ জিতে নিয়েছেন মর্যাদার এই ‘দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার্স এ্যাওয়ার্ড।’ বছরের প্রথম ডিপ্রজন্মে থাকছে ছয়জনের বর্তমান কাজ এবং ২০১৮ এর ভাবনা। লিখেছেনÑ বেনজির আবরার হ সামীর শিহাব দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার্স এ্যাওয়ার্ডেড ২০১৫ দেশের প্রথম বিজয়ী সামীর শিহাব একজন দারুণ মানুষ। দেশের হয়ে প্রথম এই মানুষটি জিতেছিলেন তরুণদের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য রানীর এই বৈশ্বিক স্বীকৃতি। সামীর প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই), প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই)। ডিপ্রজন্মকে তিনি জানান, ‘আমি ২০১৬ তে গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বর্তমানে বেজিংয়ের পিকিং ইউনিভার্সিটিতে আছি একজন ইয়েনচিং স্কলার হিসেবে। এখানেই আগে কাজ করেছিলাম চায়নার সাবেক বৈদিশিক সহ মন্ত্রী প্রফেসর হে ইয়াফেই এর সঙ্গে।’ তিনি গবেষণা করছেন চায়নার গুরুত্ববহ অবস্থান বৈশ্বিক জলবায়ু প্রেক্ষাপটে এবং পরিবেশবান্ধব সরকার বিষয়ে। সামীর শিহাব আশা করেন তার চায়না থেকে অর্জিত এক্সপেরিয়ান্স, নলেজ এবং শেখাটাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তন পরিকল্পনা কৌশল এবং আইনগত পরামর্শ দিতে পারবেন। ২০১৮ তে BYEI নিয়ে পরিকল্পনা কি, প্রশ্নের উত্তরে শিহাব জানালেন, আমরা এবার আশা করছি প্রতিষ্ঠা করতে-ÔCollaborative capacity buildinn program for young community leaders, professionals and students for Marine Conservation Research and Extension in the Bay of Bengal countries. প্রতিষ্টা করব আশা করছি এটার মাধ্যমে দেশের একটি বড় সহযোগিতা করতে পারব বলে মন থেকে বিশ্বাস করি । হ ওসামা বিন নূর দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার্স এ্যাওয়ার্ডেড ২০১৬ প্রতিষ্ঠাতা, ইয়ুথ অপরচুনিটিস ২০১৭ সাল ইয়ুথ অপরচুনিটিসের জন্য আর ওসামা বিন নূরের জন্য ছিল সফল একটি বছর। নতুন ওয়েবসাইট এবং লোগো দিয়ে নতুনভাবে শুরু করা, তারপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় নিজেদের এ্যাান্ড্রয়েড মোবাইল এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেবা প্রদান শুরু করেন। যার উদ্বোধন করেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ইয়ুথ অপরচুনিটিস মোবাইল এ্যাপ বাংলাদেশ জাতীয় মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন এ্যাওয়ার্ডে চ্যাম্পিয়ন হয়। ওসামা বিন নূর জানালেন, ‘২০১২ সাল থেকে ইয়ুথ অপরচুনিটিসের অফিস ছিল হয়ত আমার বাসার ছাদ, বা মানিকের বাসার ছাদ, আবার কখনও কখনও লাইব্রেরি বা পার্ক। এভাবেই চলছিল আমাদের কার্যক্রম, কিন্তু ২০১৭ সালে এসে আইসিটি ডিভিশন থেকে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে অফিস স্পেস বরাদ্দ করা হয়। শুরু হয় আমাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।’ ওসামা বিন নূর আরও যুক্ত করলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তথ্যের অবাধ প্রসার বিশেষ করে তরুণদের জন্য থাকা অপরচুনিটিসের তথ্যগুলো জানিয়ে সহযোগিতা করা। যা সারা বিশ্বে সারা তরুণদের মাঝে সাড়া জাগায়। লক্ষাধিক তরুণ ২০০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রতিনিয়ত অপরচুনিটিস খুঁজতে আসে ওয়েবসাইটে। ২০১৭ থেকে শুরু হয় বিজনেস মডেল প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা করা। আমরা ভাল সাড়া পেয়েছি। এই বছরেই আমরা ইন্দোনেশিয়ার জন্য আলাদা প্লাটফর্ম করেছি ইন্দোনেশিয়ান তরুণদের জন্য এবং বাংলাদেশী তরুণদের জন্যও আলাদা একটি প্লাটফর্ম করা হয়েছে। সবদিক থেকে ২০১৭ অসাধারণ ছিল।’ আর এ বছরেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ওসামা বিন নূর, ব্যক্তিগত জীবনেও এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। ২০১৮ তে কেমন প্রত্যাশা- ‘২০১৮ তে আমরা ইয়ুথ অপরচুনিটিস এর সেবা নিয়ে আরও বেশি তরুণদের মাঝে পৌঁছাতে চাই, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তার পাশাপাশি নতুন বিজনেস মডেল তৈরি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা চালানো। আইওএস এ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ হচ্ছে, বট নিয়ে কাজ হচ্ছে, ইয়ুথ অপরচুনিটিস বাংলা ভাষায় ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ হচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতে আমাদের সেবাগুলো আরও গভীরভাবে উপভোগ করতে পারবে তরুণরা। ২০১৮ সালে নতুন আরও কিছু দেশে ইয়ুথ অপরচুনিটিসের কার্যক্রম শুরু হবে। বাংলাদেশের তরুণদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম করা হবে যা তাদের সহযোগিতা করবে অপরচুনিটিসগুলো কাজে লাগিয়ে সফলতায় রূপ দিতে। স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে তরুণদের জন্য অপরচুনিটিসের তথ্য পৌঁছাতে বিশেষভাবে কাজ করবে। ইনশাআল্লাহ্।’ হ সাজিদ ইকবাল দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার্স এ্যাওয়ার্ডেড ২০১৭ প্রতিষ্ঠাতা, চেঞ্জ ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল, নতুন কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো সমাধান করব। সুপ্ত মনের আশাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং বিজ্ঞানের ওপর বিএসসি এবং এমএসসি সম্পন্ন করি। নিজ উদ্যোগে, বস্তি এবং শিল্পএলাকাগুলোয় দিনের আলোর ব্যবহার বাড়ানোর ‘ওহফড়ড়ৎ ঝঁহ’ নামক প্রকল্প গ্রহন করি। জার্মান সহায়তায় ংশুষরমযব নামক একটি ডিভাইস নিয়ে গবেষণা এবং পাইলটিং করি। এছাড়া, ইউএসের সহায়তায় এক বছর ধরে তরুণদের নবায়নযোগ্য শক্তির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। এভাবেই গত এক বছর সম্পর্কে বলছিলেন গত বছর রানীর এ্যাওয়ার্ডজয়ী তরুণ সাজিদ ইকবাল। ডিপ্রজন্মকে জানালেন, ‘এ ছাড়াও, Trade in Global Value Chain Initiatives (TGVCI) প্রোজেক্ট এর আওতায়, ভিনটেজ ডেনিম গার্মেন্টসের ২০ হাজার শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং অক্ষম মানুষদের চাকুরির ব্যবস্থা করি।’ ২০১৮ এর পরিকল্পনা, Industrial daytime lighting device: Indoor Sun প্রযুক্তিটি দেশব্যাপী প্রচার করার মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় এবং Ges CO2 emission কমানো। পাশাপাশি, একজন প্রাক্তন ক্যাডেট হিসাবে, এই বছর বিএনসিসি এর ৬ লাখ ক্যাডেটদের বিভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি।’ হ রাহাত হোসাইন দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার্স এ্যাওয়ার্ডেড ২০১৭ সহপ্রতিষ্ঠাতা, ক্রিটিকালিংক রাহাত হোসাইন, সুন্দর মনের ব্যতিক্রমী একজন তরুণ। বাকিদের সঙ্গে তার কাজের পার্থক্য রয়েছে তা বোঝা গেল তার প্রথম কথাতেই, ‘আমরা আমাদের যে সাধারণ কার্যক্রমগুলো করি যেমন ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষণ এর বাইরে আমরা শুরু করেছি ফায়ার সেফটি আর ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ। যেহেতু ক্রিটিকালিংক প্রথমত সড়ক দুর্ঘটনায় কাজ করে, আমরা প্রথমত রেসপন্স করছি আমাদের মোবাইল এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে।’ ২০১৮ একটি বড় বছর হতে যাচ্ছে ক্রিটিকালিংক পরিবারের জন্য, কারণ তারা এবছরই চালু করতে যাচ্ছেন নতুন আপডেট মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন। এ ছাড়াও তারা সরকারী এবং বেসরকারী পার্টনারশিপের মাধ্যমে বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তনে কাজ করার দিকে মনোযোগ দেবেন বলে জানালেন রাহাত হোসাইন। তিনি আরও জানালেন, দ্রুত মেডিক্যাল সেবা দেয়া তাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা। রাহাতের নিজের পরিকল্পনাও ভিন্ন, ইম্পাওয়ারিং ল এনফোর্সমেন্ট তার ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং এ বছরই এটা অর্জন করতে চান তিনি। এবারের যে দুজন ভূষিত হয়েছেন মর্যাদার এই এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে, তাদের একজন হলেনÑ আয়মান সাদিক অন্যজন জায়বা তাহিয়া। এ্যাওয়ার্ডটি তারা গ্রহণ করবেন আগামী জুলাইয়ের ২৪-২৮ তারিখের মধ্যে। চলুন জেনে নেই সামীর শিহাব, ওসামা বিন নূর, সাজিদ ইকবাল, রাহাত হোসাইনের ঘরে যুক্ত হওয়া নতুন দুজন অতিথির বর্তমান কাজ আর ২০১৮ এর পরিকল্পনা- হ আয়মান সাদিক প্রতিষ্ঠাতা, টেনমিনিট স্কুল প্রথম বিষয় হচ্ছে আমরা প্রতিনিয়ত টেনমিনিট স্কুলে দেড় লাখ স্টুডেন্টকে পড়াই। এ রকম বাংলাদেশে এমন কোন স্কুল-কলেজ- ইউনিভার্সিটি এত বেশিসংখ্যক স্টুডেন্টকে একদিনে পড়ায় না। যেহেতু টেনমিনিট স্কুল কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য এবং এটার যখন আমরা স্বীকৃতি পাই তখন যে কি আনন্দ সেটা কখনও দেখা বা বোঝানো যায় না- এভাবেই নিজের অনুভূতি বলছিলেন সময়ের জনপ্রিয় শিক্ষক আয়মান সাদিক। স্বভাবসুলভ হাসিতে আয়মান আরও জানালেন ‘এটা শুধু আমার জন্য না, আমার সঙ্গে যারা কাজ করে- রবি-আইসিটি ডিভিশন, আমার প্রত্যেকজন স্টুডেন্ট সবাইকে এটা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। আমাদের বিশ্বাস করতে শেখায় যে, আমরা যে কাজটা করছি সেটা ঠিক আছে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন করতে কাজ করতে পারব।’ রানীর এ্যাওয়ার্ড গ্রহণের বছর এটা। আয়মানের গত বছর কেটেছে খুবই অসাধারণ, এ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে - ‘একটা এ্যাপ শুরু করতে যাচ্ছি আমাদের, যেখানে ভিডিও, কুইজ, স্মার্টবুক এবং লাইভ ক্লাস থাকবে। আমি আশা করছি এর মাধ্যমে প্রতিদিন পাঁচ লাখ স্টুডেন্ট পড়াতে পারব ইনশাআল্লাহ্।’ বর্তমানে টেনমিনিট স্কুল পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫৩ জন। আয়মানের স্বপ্নগুলো আসলেই বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখায়, জানিয়ে দিলেন আরেকটা কথা- ‘যে জন্য টেনমিনিট স্কুল এ্যাওয়ার্ড পেল, পুরস্কার নিতে আগে এটার চেয়ে পাঁচগুণ বড় অবস্থায় পৌঁছানোর কাজ করছি আমরা।’ হ জায়বা তাহিয়া প্রতিষ্ঠাতা, ফিমেল ইম্পাওয়ারমেন্ট মুভমেন্ট (ঋঊ গ) ছোটবেলার দিকে বাইরে ছিলেন, পরে বাংলাদেশে কয়েক বছর পড়েছেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেই আবার ইউনিভার্সিটির জন্য দেশের বাইরে গিয়েছেন। কিন্তু সবসময় ইচ্ছা ছিল সমাজ নিয়ে কাজ করবেন, বিশেষ করে নারী নির্যাতন নিয়ে। তাই আমি একটি প্রজেক্ট নিয়ে নামলাম, ‘প্রজেক্ট আত্মরক্ষা’ যেখানে ক্যারাতের মাধ্যমে আমরা মেয়েদের নিজেদের আত্মরক্ষা করতে শেখাই। বাকি সবার সঙ্গে এই লেখকের আগে কথা হলেও জায়বার সঙ্গে প্রথম হচ্ছিল। জায়বা জানালেন, ‘অনেক ক্রিটিসিজম পেলাম, বিশেষ করে কারণ আমার যোগাযোগে প্রবলেম ছিল ওটার পরেও চালিয়ে গেলাম। এখন আমরা কড়াইল বস্তিতে একটা হাব খুলেছি শুধু মেয়েদের জন্য। এখানে আমরা তাদের কারাতে, কম্পিউটার, সাইকেল চালানো আর ইংরেজী শেখাই। পুরস্কার প্রাপ্তি আর ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানালেন তিনি, ‘আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছেÑ এ রকম একটা হাব সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। একটা হাব নিয়ে আমরা দেখেছি মেয়েদের চেষ্টা, আত্মবিশ্বাস। পরিকল্পনা রয়েছে, ছোট ছোট গ্রামে গিয়েও একই কাজ করব।
×