ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আহমেদ শিপলু

ফুলমালা ও মিলন মেলার ২০১৭

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ফুলমালা ও মিলন মেলার ২০১৭

দেশ, জাতি, সমাজ ও সভ্যতার যে সংস্কৃতি বা আচার, অথবা ধর্ম; এ সবকিছুতেই ঘটে চলেছে বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ। আর এই বিকাশমানতায় অনন্য ভূমিকায় রয়েছে কাব্য ও সাহিত্য। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষেরা ক্রমশ দ্বিধান্বিত, সন্ত্রস্ত, বিভক্ত। সমাজে রাজনীতি এবং ধর্মের যথেচ্ছ ব্যবহার মানুষকে বিভ্রান্ত ও অস্থির করে তুলেছে। আরেক দিকে বাণিজ্যিক সংস্কৃতি আর আকাশ সংস্কৃতির পথ ধরে হাতের মুঠোয় ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল। এর অনেক ভাল দিক থাকলেও অযথাই মানুষের সময় খেয়ে নিচ্ছে যেন। একদিকে রোজগারি ব্যস্ততা, আরেকদিকে সহজলভ্য বিনোদন। সনদ অর্জন ব্যতীত কেউ এখন বই পড়ার প্রয়োজনবোধ করে না। এমনকি টেলিভিশনও এখন ঠিক মতো দেখে না অনেকেই। তাই, কাব্য-সাহিত্যের প্রতি মানুষের সেই আগ্রহটা যেন ক্রমেই কমতির দিকে। আগে বিভিন্ন জেলায় বইমেলা হতো, ঢাকায় বৃহৎ আকারে বইমেলা হতো দুটো। এছাড়াও ঢাকার অনেক জায়গায় মেলা হতো। এখন কয়েক বছর ধরে ঢাকা বইমেলাটাই বন্ধ। বাংলা একাডেমিতে একুশের বইমেলা-ই যেন একমাত্র সম্বল। সারা বছর তেমন একটা বই বিক্রি না হলেও তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকে সবাই এই মেলার জন্য। আগে সারা বছর লিটল ম্যাগাজিন বেরুলেও, এখন বেশিরভাগ লিটল ম্যাগ মেলাকে কেন্দ্র করেই প্রকাশ হয়। মেলার পরিসর আগের চেয়ে এখন অনেক বড়। বাংলা একাডেমি ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল এলাকা জুড়ে তার ব্যাপ্তি। তবে অনেককেই বলতে শুনেছি মেলা দুইভাগ হওয়ায়, একাডেমির ভেতরের বই স্টল এবং লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গণ, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ, প্রায় নব্বই ভাগ দর্শনার্থী সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকেই ঘুরে যায়। তাই মেলাকে এক জায়গায় আনার কথা বলেছেন অনেকেই। বছর ঘুরে আসে নতুন বছর। সংখ্যা বদলের মতো বদলে যাবে অনেক কিছু। সে যাই হোক, বছরের অন্তে এসে ফিরে দেখি সাহিত্যের সালতামামি স্মরণ প্রথমেই দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করছি বাংলা সাহিত্যের যেসব উজ্জ্বল নক্ষত্রকে আমরা হারিয়েছি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের ৬ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন কবি ও সাংবাদিক সাযযাদ কাদির। একই মাসের ১১ তারিখে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। এছাড়াও নোবেলজয়ী ক্যারিবীয় কবি ও নাট্যকার ডেরেক ওয়াল কট এর ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় চলতি বছরের ১৭ মার্চ। সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ এর পুরো বছরজুড়েই ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাহিত্য পুরস্কার প্রদান ও সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠান। এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ ঘোষণা হয় ২৩ জানুয়ারি ২০১৭। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার পুরস্কার পেয়েছেন কবিতায় আবু হাসান শাহরিয়ার, কথা সাহিত্যে সাহাদুজ্জামান, প্রবন্ধে মোরশেদ শফিউল হাসান, অনুবাদ সাহিত্যে নিয়াজ জামান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে এমএ হাসান, আত্মজীবনী/ স্মৃতিকথায় নুরজাহান বোস ও শিশুসাহিত্যে রাশেদ রউফ। এছাড়াও বাংলা একাডেমির পরিচালনায় দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির স্মৃতি রক্ষার্থে স্বজনদের অর্থানুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত পুরস্কার প্রদানের আয়োজন করে। এর মধ্যে রয়েছে সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, মজহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার ও কবির চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার। এ বছর সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দিন হোসেন। মজহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার পেয়েছেন কবি আবুবকর সিদ্দিক এবং কবির চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, বাংলা একাডেমির ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ : প্রদান করা হয় ১৯ জানুয়ারি ২০১৭। পুরস্কার পেয়েছেন কবি অসীম সাহা, তাঁর ‘ম-বর্ণের সাহিত্যমুকুট’ কবিতাগ্রন্থের জন্য এবং কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ তাঁর ‘তলকুঠুরির গান’ উপন্যাসের জন্য। এছাড়া বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইদকে সামাজিক ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আইএফআইসি ব্যাংক ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান করে। এছাড়াও আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ পেয়েছেন খসরু চৌধুরী ও শাকুর মজিদ। স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সাহিত্যে রাবেয়া খাতুন ও মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শী। একুশে পদক ভূষিত হয়েছেন ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক। এর মধ্যে মরণোত্তর কবি ওমর আলী ও শিশুসাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া পেয়েছেন ভাষা ও সাহিত্যে। আহমদ ছফা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি হায়াৎ মামুদ, শিক্ষাবিদ-গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান, কথাসাহিত্যিক সুদীপ্ত হান্নান। এছাড়াও ‘খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৩’ পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী, ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা এবং ‘সিটি আনন্দআলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ লাভ করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, আনিসুল হক, প্রশান্ত মৃধা, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, মুহম্মদ সামাদ, হাসেম খান ও লুৎফর রহমান রিটন। কালি ও কলম পুরস্কার ২৯ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে পাঁচ তরুণকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। কবিতায় নওশাদ জামিল, কথাসাহিত্যে রফিক হারিরি, প্রবন্ধ ও গবেষণায় হাসান ইকবাল ও শিশু-কিশোর সাহিত্যে শরিফুল হাসান। এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ১৩ নবেম্বর কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য বরেণ্য লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং ‘অতীত একটা ভিন দেশ’ গল্পগ্রন্থের জন্য লেখক মোজাফফর হোসেনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, কবি মোহাম্মদ রফিক, তরুণ লেখক আশরাফ জুয়েল, মামুন অর রশিদ ও নুসরাত নুসিন। অনন্যা সাহিত্য পুরষ্কার পাক্ষিক অনন্যা বহুবছর ধরে সাহিত্যে পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন কথা সাহিত্যিক বেগম মুশতারি শফি। লোক সাহিত্য পুরস্কার ৮ ডিসেম্বর জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে মোস্তাক আহমাদ দীন ও কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদকে ‘লোক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ প্রদান করা হয়। অরণি সাহিত্য পুরস্কার অরণি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬ ও ২০১৭ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালের পুরস্কার পেয়েছেন কবি বিমল গুহ, কথাসাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ২০১৭ সালের পুরস্কার পাচ্ছেন কবি ফারুক মাহমুদ ও কথা সাহিত্যিক নলিনী বেরা। নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরো। ৬ অক্টোবর সুইডিশ একাডেমির সেক্রেটারি সার দানিউস এই নাম ঘোষণা করেন। ম্যান বুকার পুরস্কার ব্রিটিশ সাহিত্যের সবচেয়ে বড় ‘ম্যান বুকার পুরস্কার ২০১৭’ লাভ করেছেন মার্কিন লেখক জর্জ সন্ডার্স। ‘লিংকন ইন দ্য বার্ডো’ নামের উপন্যাসের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। বইটিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের জীবনের শোকাবহ ঘটনা স্থান পেয়েছে। ১৭ অক্টোবর লন্ডনের গিল্ড হলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে সন্ডার্সের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন ডাচেস অব কর্নওয়াল। কবি শঙ্খ ঘোষের জ্ঞানপীঠ লাভ বাংলা ভাষার খ্যাতিমান কবি শঙ্খ ঘোষ সম্প্রতি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেছেন। এটি ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার হিসেবে গণ্য। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ভারত সরকার ১৯৬৫ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করে। উৎসব-অনুষ্ঠান ঢাকা লিটফেস্ট বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এশিয়ার সবচেয়ে বড় সাহিত্য উৎসব ‘ঢাকা লিটফেস্ট ২০১৭’ এর উদ্বোধন করেন সিরিয়ার কবি আহমদ সাইদ আসবার (যিনি কবি য়্যাডোনিস নামে পরিচিত) সঙ্গে ছিলেন ঢাকা লিটফেস্টের তিন পরিচালক কাজী আনিস, সাদাফ সায, আহসান আকবর ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে ছিল নব্বইটি সেশন। অংশ নেন দেশের বাইরে থেকে আসা ৭৫ লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ এবং বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন দেড় শতাধিক লেখক, গবেষক, শিক্ষক ও পারফর্মার। দক্ষিণ এশিয়া সাহিত্য সম্মেলন ২৪, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয় সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ফেস্টিভাল। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শতাধিক কবি সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাসহ পনেরো জন কবি ও লেখক। এ বছর ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। এছাড়াও কবি আহসান হাবীব ও কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের এ বছরেই পূরণ হয় জন্মশতবর্ষ। প্রতিবছরের মতো এ বছরেও জাতীয় কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার চত্বরে দুই দিনব্যাপী উৎসবে অংশ নেন সারাদেশের কবিদের সঙ্গে ভারত, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, আর্জেন্টিনা ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত কবি-সাহিত্যিকগণ। দাবি দাওয়া কপিরাইট ও লেখক সম্মানী ২১ মে ২০১৭ বাংলাদেশ লেখক ঐক্য আয়োজিত সেমিনারে কপিরাইট ও লেখক সম্মানী বিষয়ে ১৮টি প্রস্তাব দেয়া হয়। গ্রন্থ প্রকাশ, বাণিজ্যিক পত্রিকায় লেখা প্রকাশ, সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনায় লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে চুক্তি ও সম্মানীর বিষয়ে এসব প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া সরকারের কাছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও লেখকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক জাকির তালুকদারের লেখা সেমিনারের মূল প্রবন্ধটি পাঠ করেন বাংলাদেশ ‘লেখক ঐক্যের প্রচার সম্পাদক আলমগীর খান। ‘টাকার জন্য লিখি না। কিন্তু লেখা ছাপা হবার পর সম্মানী চাই’, কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উক্তিই ছিল সেমিনারের প্রতিপাদ্য। পরিশিষ্ট রোজগারি প্রতিযোগিতার এই যুগেও অনেক মানুষ যুক্ত হচ্ছে লেখালেখির সঙ্গে, প্রচুর বইও বেরুচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে এক ধরনের পাঠক শ্রেণীও যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় তা অত্যন্ত অপ্রতুল। মানুষের মধ্য থেকে উঠে যাচ্ছে মননশীলতা। নতুন প্রজন্মকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে এক গাদা বই তুলে দেয়া হচ্ছে। অথচ বর্তমান প্রজন্মের দিকে তাকালেই দেখা যায় অন্তঃসার শূন্যতার প্রকাশ। দেশপ্রেম যেন শূন্যের কোঠায়। একটা প্রগতিশীল আধুনিক সচেতন প্রজন্ম গড়তে হলে সৃজনশীল পঠনপাঠনের বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে স্কুল পর্যায় থেকেই কার্যক্রম শুরু করা উচিত। আর এর জন্য বিভিন্ন সংগঠন, লেখক প্রকাশক ও সরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন অনেকেই।
×