ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আফসারা তাসনিম

বিলুপ্তির পথে পুরুষ প্রাণী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বিলুপ্তির পথে পুরুষ প্রাণী

কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের নতুন গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ট্রফি হান্টিং এবং এরূপ অন্যান্য কার্যক্রম যেখানে উচ্চ স্তরের পুরুষ প্রাণীদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এগুলো কতিপয় কিছু প্রজাতি যারা ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশগত অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে, তাদের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে। যেসব পুরুষ প্রাণীর মধ্যে আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যেমন হরিণের শিং এবং সিংহের কেশর, এরা প্রায়ই বিনোদনের উদ্দেশ্যমূলক শিকারের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে, কিছু পতঙ্গ সংগ্রহকারী গুবরে পোকার মতো প্রাণীদের নমুনার জন্য উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতেও আগ্রহী থাকে, শুধু এদের বৃহদাকার আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্যের কারণে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকৃতপক্ষে বিবর্তনের ধারায় সব থেকে উপযুক্ত পরিবর্তন, যার ফলে যদি এগুলো অপসারণ করা হয় তাহলে প্রজাতি তার সর্বোৎকৃষ্ট জিন হারায়। গবেষকদের মতানুসারে, কোন কোন পরিস্থিতিতে যখন একটি প্রজাতি পরিবর্তনরত পরিবেশের মুখোমুখি হয় তখন উচ্চস্তরের পুরুষ প্রাণীদের ৫ শতাংশের মতো নিম্ন বংশ বৃদ্ধির হার প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারে। এই গবেষণাপত্রটি প্রোসিডিংস অব রয়্যাল সোসাইটি : বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রের প্রধান রচয়িতা, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বায়োলজিক্যাল এ্যান্ড কেমিক্যাল সায়েন্সের ড. রব নিল বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে যে যেখানে পরিবেশগত পরিবর্তন একটি চিন্তার বিষয়, ট্রফি হান্টিং এমন কিছু প্রজাতির বিলুপ্তির সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে প্রজাতিগুলো অন্যথায় সচ্ছল। কেননা, এই বৃহদাকার আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পুরুষ প্রাণীগুলো অধিক আনুপাতিক হারে জন্মদান করে থাকে। এই বংশধরদের মধ্যে সমৃদ্ধ জিনগুলো দ্রুত গতিতে বিকশিত হতে পারে, ফলস্বরূপ প্রবল যৌন বৈশিষ্ট্যের প্রাণিকুল নতুন পরিবেশে সহজে অভিযোজিত হতে পারে। অন্যদিকে, এই পুরুষদের নিধন ঠিক উল্টো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এবং এর পরিণতি অপ্রত্যাশিত ও গুরুতর। আমরা দেখেছি যে ‘বাছাইকৃত বংশ বৃদ্ধি’ সামান্যই প্রভাব ফেলে যদি কিনা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ধ্রুব থাকে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে পরিবেশের ক্রমাগত পরিবর্তন বর্তমানের নির্মম বাস্তবতা, যা অধিকাংশ প্রজাতির জন্য বিপজ্জনক। ট্রফি হান্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। উপ-সাহারান আফ্রিকান অঞ্চলের একটি বিরাট অংশ জাতীয় পার্কের পরিবর্তে শিকারের জন্য সংরক্ষিত থাকে এবং যেহেতু শিকারিরা সাধারণত পুরুষ প্রাণীদের লক্ষ্য করে থাকে, সে কারণে ধারণা করা হয় যে অধিক হারে বংশ বৃদ্ধিকারী প্রজাতির ওপর এটি খুব একটা প্রভাব বিস্তার করে না। তবে, কম্পিউটার সিমুলেশন মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা বিশেষভাবে আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পুরুষ প্রাণীদের নিধন করার ফলাফল এবং তা কিভাবে পরিবেশকে প্রভাবিত করে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সতর্কিত সক্রিয় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি তারা পরামর্শ দেন শুধু বয়স্ক পুরুষদের শিকার করতে যারা এরই মধ্যে বংশানুক্রম বজায় রাখার সুযোগ পেয়েছে। ড. নিল জানান, ‘আমাদের গবেষণার ফলাফল থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে বয়সের সীমাবদ্ধতা আরোপ করার ফলে পুরুষ প্রজাতি শিকার হওয়ার পূর্বেই বংশ বৃদ্ধি করতে পারে, এই প্রক্রিয়াটি প্রজাতির অভিযোজনরত সংখ্যার ওপর বাছাইকৃত বংশ বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব হ্রাস করতে কার্যকরী। ‘সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ট্রফি হান্টিং সংরক্ষণের জন্য শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যে কারণে আমরা এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরিবর্তে একটি ভিন্ন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রস্তাব করছি।’ কেবল ট্রফি হান্টিংয়ের শিকারি এবং পতঙ্গ সংগ্রহকারীরাই যে আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে পুরুষ প্রাণীদের লক্ষ্য করছে তা নয়, খাদ্যের জন্য অনেক প্রাণী জনগোষ্ঠীর পরিচালনা করা হয়ে থাকে শুধু পুরুষ প্রজাতি সংরক্ষণের মাধ্যমে এবং এদের মধ্যে অন্তত কিছু প্রজাতি, যেমন নির্দিষ্ট কাঁকড়া প্রজাতি যাদের পুরুষদের আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলোকে শিকারের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপরন্তু, হাতির দাঁত আংশিকভাবে আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভূমিকা রাখে এবং শিকারিরা দাঁতের আকারের ওপর ভিত্তি করে হাতি শিকার করে থাকে। এই গবেষণাটি ইঙ্গিত করে যে এই প্রজাতিগুলো পূর্বে যেমন ধারণা করা হয়েছিল তার তুলনায় সম্ভবত আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×