ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সুরক্ষায় প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সুরক্ষায় প্রস্তাব

রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান, আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের মিয়ানমারে প্রবেশ ও কাজ করার সুযোগ সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। গত রবিবার অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপিত হলে এর পক্ষে ভোট দেয় ১২২টি দেশ, ভোটদানে বিরত থাকে ২৪টি দেশ এবং বিপক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ। চীন ও রাশিয়ার মিয়ানমারে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থজড়িত থাকায় বিরোধিতার বিষয়টি বোধগম্য হলেও অন্য দেশগুলোর ভূমিকা সুস্পষ্ট নয়। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সামরিক অভিযান তথা হত্যা-খুন-ধর্ষণসহ পোড়ামাটি নীতি অবিলম্বে বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এর বাইরেও জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে প্রস্তাবে। এ বিষয়ে তহবিল বরাদ্দের জন্য বাজেট কমিটিরও সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেছে। এতে অবিলম্বে সাড়া না দিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হতে পারে মিয়ানমার। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারির পক্ষ থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে মিয়ানমারের জেনারেল মাউং মাউং সোয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাপী কালো তালিকাভুক্ত ৫৮ ব্যক্তির অন্যতম একজন এই জেনারেল। অন্যদিকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং তাতে সমর্থন দেয়ার সুনির্দিষ্ট কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত আউং সান সুচির বিরুদ্ধেও নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক তদন্ত দল পাঠাতে চাইলেও সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার তার অনুমতি দিচ্ছে না। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়েরের জন্য ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। ইতোমধ্যে সুচির নানা আন্তর্জাতিক পদক ও সনদ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশের পক্ষ থেকে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের অনেক দেশে প্রবেশসহ প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার যদি বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশ ও তালিকা অনুযায়ী রাখাইনে বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না করে তাহলে আগামীতে তাদের একঘরে হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তখন মনে হয় না এমনকি চীন, রাশিয়া, ভারতও অন্তত নৈতিক ও মানবিক কারণে সমর্থন দেবে মিয়ানমারকে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ৫টি প্রস্তাব পেশ করেছে। এগুলো হলো, সে দেশে চিরতরে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন বন্ধ করা; জাতিসংঘ মহাসচিবের অধীনে একটি নিজস্ব অনুসন্ধানী দল প্রেরণ; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং তা পূরণে সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা; রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে, যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, তাদের নিজ নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; সর্বোপরি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত, পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ, বিপুল জনগোষ্ঠী ও স্বল্পপরিসরে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সমর্থ নয়। প্রধানমন্ত্রীর উদারতা, মানবিকতা ও সহানুভূতির কারণে বাংলাদেশ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সহায়সম্বলহীন শরণার্থীদের জন্য। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই ঔদার্য ও মানবিকতা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য।
×