ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১২ বছরে বিপিসির পাওনা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি টাকা

দুটি ডলফিন জেটির বার্থ হায়ার চার্জ পরিশোধ করছে না বন্দর কর্র্র্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

দুটি ডলফিন জেটির বার্থ হায়ার চার্জ পরিশোধ করছে না বন্দর কর্র্র্তৃপক্ষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুটি ডলফিন জেটির বার্থ হায়ার চার্জ পরিশোধ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ২০০৫ সালে নিজস্ব অর্থায়নে ডলফিন অয়েল জেটি-৫ (ডিওজে-৫) ও ডলফিন অয়েল জেটি-৬ (ডিওজে-৬) নির্মাণের পর থেকে বন্দরের কাছ থেকে বার্থ হায়ার চার্জ পায়নি বিপিসি। আর এ চার্জ আদায়ে চুক্তির জন্য ১২ বছরে বিপিসির দেয়া প্রায় ২০টির অধিক চিঠির জবাব দেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে চার বছর ধরে ঝুলে রয়েছে ডলফিন জেটিগুলো নিয়ে বিপিসির অডিট আপত্তিও। জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন এ্যান্ড প্ল্যানিং) সৈয়দ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ডলফিন জেটি দুটি নির্মাণের পর থেকে বন্দর থেকে বার্থ হায়ার চার্জ পাচ্ছি না। চুক্তি করতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছি। মন্ত্রণালয়েও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কোন প্রকার সাড়া পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। জানা গেছে, পুরনো আর এম জেটি ভেঙ্গে বিপিসির অর্থায়নে নির্মাণ করা ডিওজে-৫ ও ডিওজে-৬ জেটি দুটি অপারেশনে যায় ২০০৫ সালে। ডিওজে-৫ জেটিটি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এবং ডিওজে-৬ জেটিটি পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান স্থাপনায় অবস্থিত। ওই জেটিগুলোতে কোস্টাল ট্যাংকার ও আমদানি করা তেলবাহী ট্যাংকার বার্থিং এবং খালাস হয়। পাশাপাশি বন্দরের অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্যাংকারও বার্থিং নেয়। জেটি দুটিতে বার্থিং করা জাহাজ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বার্থ হায়ার চার্জ আদায় করে। নিয়মানুযায়ী বার্থ হায়ার চার্জের একটি অংশ নির্মাণকারী সংস্থা বিপিসির পাওয়ার কথা। কিন্তু বন্দরের সঙ্গে চুক্তি না থাকায় বার্থিং হায়ার চার্জ হিসেবে বন্দরের আদায় করা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপিসি। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ডলফিন অয়েল জেটি-৫ (ডিওজে-৫) বার্থিং হায়ার চার্জের নিজেদের অংশ পেতে ২০০৭ সালে এমপিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ এবং ডলফিন অয়েল জেটি-৬ (ডিওজে-৬) এর চার্জ আদায়ের চুক্তি করতে ২০০৭ সালে ১০ ডিসেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিবকে চিঠি দেন তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জামাল খান চৌধুরী। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে আমলে না নেয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি সমাধানে ২০০৮ সালে জ্বালানি সচিবকে পত্র দেন বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আনোয়ারুল করিম। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান বিসয়টি সমাধান কল্পে ট্রাস্কফোর্স গঠনে বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। ট্রাস্কফোর্স গঠন হলেও সভা হয়নি। ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ ফের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিককে চিঠি দেন বিপিসির সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ রেজা খান। বিপিসির বিগত চার চেয়ারম্যান ব্যর্থ হওয়ার পর সর্বশেষ গত ২০ জুলাই বিপিসির বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। ওই পত্রে বন্দর চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিপিসি চেয়ারম্যান। কিন্তু এরপরও সাড়া দেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে জেটির আয়ের অংশ না পাওয়ায় আপত্তি তোলে বিপিসির বাণিজ্যিক অডিট দল। ইফিসিয়েন্সি অডিট টিম ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে বার্থ হায়ার চার্জ হিসেবে বন্দর থেকে অর্থ না পাওয়ায় বিপিসি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। এখনও ঝুলে আছে বিষয়টি। ১২ বছরে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বিপিসির পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ অপারেশনাল প্রয়োজনে প্রাইভেট জেটি ব্যবহার করে। যাদের জেটি ব্যবহার হয়, চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে তাদের হিস্যা দেয়া হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ডলফিন জেটি ব্যবহারে বার্থ হায়ার চার্জ নিয়ে চুক্তি না হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
×