(গতকালের পর)
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ এই পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট প্রায় ২৩৩ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এসব দুর্যোগের মধ্যে বন্যার মতো দ্রুত গতির দুর্যোগে প্রায় ৫৪ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৬ কোটি ডলার। অন্যদিকে নদী বা উপকূলীয় ভাঙ্গনের মতো ধীরগতির দুর্যোগে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার। আর লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য এই সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বলে অনুমান করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩২০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়ে থাকে। আর এর বাইরে রয়েছে জীবন, জীবিকা ও কাজের সুযোগ হারানো, ঐতিহ্যবাহী স্থান ধ্বংস প্রভৃতির মতো অসংখ্য ক্ষয়ক্ষতি, যা অর্থমূল্যে প্রকাশ করা সম্ভব না।
ক্রমবর্ধমান এই দুর্যোগের জন্য বিশেষজ্ঞরা বায়ুম-লে অধিকহারে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। বৈশ্বিক জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের শিল্পায়িত ও ধনী দেশগুলো প্রধানত দায়ী হলেও এর দায় বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের বিপন্ন মানুষকে। ফলে স্বভাবতই দাবি এসেছে শিল্পায়িত ও ধনী দেশগুলোর দায় গ্রহণের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ২০১৫ সালে সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন হলেও বিশ্বের তাপমাত্রা এই শতাব্দির শেষ নাগাদ ৩ থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এই অভূতপূর্ব বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা ও শক্তিকে এতো গুণ বৃদ্ধি করবে যে তার মোকাবেলার ক্ষমতা বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেই। এ কারণেই এসেছে; ‘ক্ষয়ক্ষতির’ প্রশ্ন এবং উন্নত দেশগুলোর দায় গ্রহণের দাবি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ‘লস এ্যান্ড ড্যামেজ’ এখন এমন একটি বাস্তবতা, যাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আন্তর্জাতিক আলোচনাতেও এটা এখন স্বীকৃত। আগে জলবায়ু আলোচনা মূলত এ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এখন তিনটি ধারায় আলোচনা হবে এবং সেটা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আলাদা একটা চ্যাপ্টার হিসেবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লস এ্যান্ড ড্যামেজকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও কিভাবে তাকে এড্রেস করা হবে তার কৌশল এখনো পুরোপুরি নির্ধারণ করা হয়নি। ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম হয়েছে, এর একটা এক্সিকিউটিভ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী দুই তিন বছর কাজ করবে কিভাবে বেসিক এলিমেন্টসগুলোর ওপর কাজ করা যায়। এই বেসিক এলিমেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঝুঁকি ট্রান্সফার যেমন ইন্স্যুরেন্স, ঝুঁকি রিডাকশন- যা করলে লস এ্যান্ড ড্যামেজ কমে যাবে, রিক্স ট্রান্সফর করলেও ঝুঁকি কমে যাবে। অন্যান্য এলিমেন্টের মধ্যে রয়েছে, ডিসপ্লেসমেন্ট ও মাইগ্রেশনকে কিভাবে এড্রেস করা যায়। কিন্তু উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যে ক্ষতিপূরণের দাবি করে আসছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে তা উপেক্ষা করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয় ও ক্ষতির দায় তারা নেবে না এবং এজন্য তারা কোন ক্ষতিপূরণের দেবে না।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের সম্পদ ও জীবিকার ক্ষয় ও ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষয়ক্ষতি অভিযোজনের বাইরে। অভিযোজন দিয়ে এই ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যাবে না। এ কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির দাবিটি জোড়ালোভাবে এসেছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের এই ইস্যুটির স্বীকৃতি অত সহজে আসেনি। ১৯৯১ সালে ইস্যুটি প্রথম জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় নিয়ে আসে ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশগুলোর জোট এ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেট (এওএসআইএস)। অভিযোজন সংক্রান্ত আলোচনায় এই জোট দুর্যোগ প্রবণ দেশগুলোর জন্য ইন্স্যুরেন্স পুল গঠনের দাবি জানায়। যেখানে উন্নত দেশগুলো বাধ্যতামূলকভাবে অর্থায়ন করবে। তবে ওই দাবিটি নিয়ে তখন সফল হয়নি ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশগুলো। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে বালি এ্যাকশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় এজেন্ডা হিসেবে প্রবেশ করে লস এ্যান্ড ডেমেজ তথা ক্ষয় ও ক্ষতি ইস্যু। বালি এ্যাকশনের পর এই ইস্যুটি নিয়ে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বেশ দরকষাকষি চলে। ২০১০ সালে কানকুন জলবায়ু সম্মেলনে এই ইসুটিকে ওয়ার্ক প্রোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এর সুনির্দিষ্ট আওতা নির্ধারণ করার। দুই বছর পর দোহা জলবায়ু সম্মেলনে এই ইস্যুটি আলোচনার শীর্ষে চলে আসে এবং একে আরও আলোচনার ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরের বছর ওয়ারশো জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর প্রভাব চিহ্নিত করার জন্য গঠন করা হয় ‘ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজম ফর লস এন্ড ডেমেজ।’ ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই ম্যাকানিজমের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী নির্বাহী কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে বলা হয়, দুই বছরের মধ্যে একটি ওয়ার্ক প্রোগ্রাম প্রণয়নের জন্য। কমিটি নয়টি এ্যাকশন এরিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি ওয়ার্ক প্রোগ্রাম প্রণয়ন কর, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্যোগ ঝুঁকির ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে শেষ পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষয় ও ক্ষতির ক্ষতিপূরণের দাবি ধোপে টেকেনি। চুক্তিতে লস এ্যান্ড ডেমেজকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন দায় নেবে না এবং ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছে।
বর্তমানে লস এ্যান্ড ডেমেজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জলবায়ুর ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর এই ইস্যুকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এর জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে তার কোন মেকানিজম এখনো ঠিক করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড একটা সুযোগ হতে পারত কিন্তু সেখানে এ্যাডাপটেশন, মিটিগেশন, প্রাইভেট সেক্টর ফ্যাসিলিটি এগুলো থাকলেও লস এ্যান্ড ড্যামেজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এখন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যারা দীর্ঘদিন ধরে লস এ্যান্ড ড্যামেজকে আলোচনায় জিয়িয়ে রেখেছে এবং একটা মেকানিজম গঠন করেছে তাদের উচিত লস এ্যান্ড ড্যামেজের জন্য আলাদা অর্থায়ন দাবি করা। সেটা ক্ষতিপূরণের আদলেই হোক বা অন্য কোন আদলেই হোক। যদিও ক্ষতিপূরণ হয়তো পাওয়া যাবে না, কিন্তু রিকস ট্রান্সফার, রিক্স রিডাকশন অথবা অন্য কোন ম্যাকানিজম উদ্ভাবন করা যেতে পারে অর্থায়নের জন্য। এক্ষেত্রে সোশ্যাল সেফটি নেট বা সামাজিক নিরাপত্তার আকারেও হতে পারে। কিন্তু দাবি থাকতে হবে লস এ্যান্ড ড্যামেজের জন্য আলাদা এনটিটির।
আবার অর্থের সংস্থান হলেও ওই টাকা রাষ্ট্র কিভাবে খরচ করবে সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য দেশে একটা মেকানিজম স্থাপন করা উচিত। কেন না ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজমের লিংক হচ্ছে ন্যাশনাল মেকানিজম। বাংলাদেশ একটা ন্যাশনাল মেকানিজম তৈরির চেষ্টা করেছে এবং একাট খসড়াও তৈরি করেছে। এটা মূলত ইনস্টিটিউশনাল মেকানিজম। অর্থাৎ কোন কোন প্রতিষ্ঠান লস এ্যান্ড ড্যামেজকে এড্রেস করতে পারবে। আমাদের দেশে লস এ্যান্ড ড্যামেজকে এড্রেস করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনাতে বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেয়। তার মানে লস এ্যান্ড ড্যামেজকে এড্রেস করতে এবং এর ফাইন্যান্সকে ভালভাবে ব্যবহার করতে হলে দুটি মন্ত্রণালয়ের এক ধরনের সমন্বয় লাগবে। এই ধরনের ইনিস্টিটিউশনাল মেকানিজম ও প্রোগ্রামেটিক মেকানিজম প্রণয়ন করে রাষ্ট্রগুলো তার আলোকে টাকা দাবি করতে পারে। যদি এই ধরনের মেকানিজম ডেভেলপ না হয় তাহলে গ্লোবাল মেকানিজমে টাকা থাকলেও আমরা সে টাকায় প্রবেশাধিকার পাব না। আশা করছি, ড্রাফট ডেভোলপ হয়েছে, সেই ড্রাফটের আলোকে বাংলাদেশ সরকার একটা পাইওনিয়ারের ভূমিকা পালন করবে। জলবায়ু আলোচনায় বলবে যে, এটা হচ্ছে আমার ন্যাশনাল মেকানিজম, এর আলোকে আমরা লস এ্যান্ড ড্যামেজ মেকাবেলায় টাকা চাই।
এই দাবি যদি ক্রমান্বয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো থেকেও আসতে থাকে তাহলে আমি আশা করা যায়, গ্লোবাল লিডারশিপ লস এ্যান্ড ড্যামেজকে স্বীকৃতি দেবে এবং লস এ্যান্ড ড্যামেজের শিকার দেশগুলোতে অর্থ প্রবাহ আসবে।
এ কথা আজ নিশ্চিত যে, জলবায়ুু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে আবহাওয়া ও জলবায়ু ঘটিত চরম ঘটনাসমূহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলে জলবায়ু সম্পর্কিত ক্ষতি ও ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম ঘটনাগুলোর কারণে বছরে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এসব ক্ষতি প্রতি বছর ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের অসময়ে প্লাবন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় হার্ভেবা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানা সাইক্লোন মারিয়া প্রভৃতি আবহাওয়াঘটিত দুর্যোগের পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কোন না কোনভাবে দায়ী। আর তাই এসব দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও চলমান।
প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতিকে অন্তর্ভুক্তকরণ বা ‘ওয়ারশ্ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজম অন লস এ্যান্ড ড্যামেজ’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিল্পায়িত ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সভাপতি থাকাকালীন জার্মান সরকার কর্তৃক ২০১৫ সালে প্রবর্তিত ‘ইনসো-রেজিলিয়ান্স’ উদ্যোগের কথা বলা যায়। এই ‘ইনসো-রেজিলিয়ান্স’ এর অন্যতম হলো ৪০ কোটি দরিদ্র মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির বীমা সেবা প্রদান। অবশ্য ক্ষয়ক্ষতির বীমা সেবা প্রদানের পাশাপাশি জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহে ‘সোস্যাল সেফটিনেটের’ আওতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাগুলোও গ্রহণ করা প্রযোজন।
গত ৬ থেকে ১৭ নবেম্বর জার্মানির বন শহরে ২৩তম জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের সম্মেলনের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অগ্রগতি তেমন একটা নেই বললেই চলে। কৌশলগত ইস্যুতে কিছুটা অগ্রগতি হলেও কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে এখনও বড় ধরনের মতবিরোধ রয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের আলোচকরা এখন চোখ রাখছেন প্যারিসে। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে প্যারিস চুক্তির দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সেখানে সম্মেলনের আয়োজন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোন।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘রুলবুক’ তৈরির কাজ ছিল কপ২৩-এর অন্যতম উদ্দেশ্য। আগামী বছরের মধ্যে এই রুলবুক তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। কার্বন নির্গমন কমাতে বিভিন্ন দেশ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার বাস্তবায়ন কতদূর এগোল, সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির নিয়ম থাকবে রুলবুকে। প্রতিনিধিরা মনে করছেন, রুলবুকের মতো কৌশলগত ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতবিরোধ ততটা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির কারণে রুলবুক নিয়েও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
বন সম্মেলনের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল অর্থের জোগান নিশ্চিত করা। উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থ সহায়তা বিষয়ে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে আরও নিশ্চয়তা চেয়েছে। বন সম্মেলনে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, চলমান কপ-২৩ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন আলোচনা খুব বেশি এগোচ্ছে না। শিল্পোন্নত দেশগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনে কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো খনিজ জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে ধনী দেশগুলোর সঙ্গে বেশ শক্ত লড়াই চলেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর। এ ধরনের জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশটির বিভিন্ন প্রতিবেশীসহ যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মেক্সিকো। এর মানে আগামী বছর পোল্যান্ডে যে কপ সম্মেলনে হতে যাচ্ছে, সেখানেও খনিজ জ্বালানির ভবিষ্যত নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক হবে। তবে অনেক দেশের সরকারই মনে করছে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ালে কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সুবিধা হবে। আশার কথা হলো, অন্তত ২০ দেশ কয়লা জ্বালানি নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে একমত হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে।
আরও আশার কথা হচ্ছে, এবারের সম্মেলনে কৃষি এবং জেন্ডার ইস্যুতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। সম্মেলনে ইউএনএফসিসিসি একটি জেন্ডার এ্যাকশন প্ল্যান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, নির্গমন হ্রাস এবং প্রাসঙ্গিক অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও হস্তান্তর এবং দক্ষতা উন্নয়ন এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল নীতি গ্রহণের কথা এই জেন্ডার এ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়েছে।
কিন্তু সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী, লস এ্যান্ড ড্যামেজ বিষয়ে বলার মতো কোন অগ্রগতি হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য কানকুনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে ‘লস এ্যান্ড ড্যামেজ’ বিষয়টির আবির্ভাব হয়েছিল। প্যারিস চুক্তিতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু বন সম্মেলনে এসে বিষয়টি প্রায় হারিয়ে গেছে।
(সমাপ্ত)
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: