ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

রোহিঙ্গা সমস্যা ॥ আশু করণীয়

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২২ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা ॥ আশু করণীয়

মিয়ানমার সরকার কর্তৃক সৃষ্ট সাম্প্রতিক মাসের রোহিঙ্গা সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের আরাকান থেকে বিতাড়নের কার্যক্রমের ওপর বিতৃষ্ণা ও নিন্দাসূচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা এবং জাতিসংঘ কর্তৃক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। বিশ্ববিখ্যাত টাইমস পত্রিকা রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার ও তাদের নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়নকে মিয়ানমারের লজ্জা অবয়বে সারা পৃথিবীতে প্রচার করেছে। সিএনএন, বিবিসি ও আলজাজিরা বারবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম অত্যাচারের কথা ও কাহিনী প্রচার করে আসছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা পাতেন গত নবেম্বর ১০ ও ১১ (২০১৭) তারিখে কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে রোহিঙ্গা মহিলাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস পাশবিক অত্যাচার সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছেন। নিরাপত্তা কাউন্সিলের নির্দেশের মোড়কে প্রমীলা মিয়ানমার যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তাকে সে দেশের সামরিক সরকার কর্তৃক সেদেশে যেতে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অত্যাচারিত ও বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে পুনর্বাসন করার দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ নবেম্বর সংসদে বলেছেন ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সেই কারণে এর সমাধানও সেই দেশকেই করতে হবে। এই অবস্থানের অনুসরণে এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। প্রথমতঃ অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করা; দ্বিতীয়তঃ অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা; তৃতীয়তঃ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা; চতুর্থতঃ রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; পঞ্চমতঃ কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। তার বিস্তারিত প্রস্তাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা, বিশ্লেষণ ও বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে সমর্থনের প্রেক্ষিতে তার মতে ৩টি বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য লক্ষ্য করা গেছে : (ক) মিয়ানমারে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করা, (খ) মিয়ানমারে নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করা এবং (গ) জোরপূর্বক বিতাড়িত এই সকল মিয়ানমারের নাগরিককে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা (দ্রষ্টব্য : ২০১৭ সালে ১৫ নবেম্বর সংসদে প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর)। দেখা যাচ্ছে এসব ঘটনা ও সমর্থনের বিপরীতে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার অস্বীকার করে বিবৃতি দেয়া, দ্বিপাক্ষিক সভায় মিলিত হওয়া, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তাব প্রকাশ করা ছাড়া তারা ভিন্নতর কিছু করেনি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্রাদির যাচাই-বাছাই করার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে দায় এড়ানোর লক্ষ্যে তারা সময়ক্ষেপণ করে চলছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা রাশিয়া ও চীনকে এই ধরনের সময়ক্ষেপণের লক্ষ্যে কূটনৈতিক কার্যক্রমের অনুকূলে সমর্থন দেয়ার জন্য অনেকাংশে সফল হয়েছে। দুঃখজনকভাবে দেখা গেছে যে, কদিন আগে আসিয়ানের ৫০তম সম্মেলনে ম্যানিলাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে কোন উল্লেখ করা হয়নি। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার এবং রাখাইন থেকে তাদের বাংলাদেশে বিতাড়িত হওয়ার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও স্বীকার করেনি। ১৫ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন কর্তৃক মিয়ানমার সফরের শেষ পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার তাদের সেনাবাহিনী ও সেদেশের বৌদ্ধধর্মীয় নেতাদের অত্যাচারের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রযুক্ত করার আহ্বান এতদিন পরে জানিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবেদন সত্ত্বেও মিয়ানমারের সামরিক প্রধান জেনারেল মিন অং হলাইল, রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের আহ্বান জানানো উঁচু-পর্যায়ের বৌদ্ধধর্মীয় নেতা আসিন উইরাথু এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শান্তির নোবেল পাওয়া সুশীল সরকার প্রধান আউং সান সুচির সমকালীন অমানবিক ভূমিকা সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যতটুকু সোচ্চার হওয়া ঈপ্সিত ছিল ততটুকু তারা সোচ্চার হয়েছেন বলা চলে না। ক’দিন আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রোডো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রশাসন থেকেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আউং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের তরফ থেকে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার পরবর্তী ৩ সপ্তাহের মধ্যে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। লোক দেখানো কাজ হিসেবে তারা আরাকান এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের সেনাপতিকে প্রত্যাহার করেছে। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার লক্ষ্যে অত্যাচারিত রোহিঙ্গাদের আগমন বন্ধ হয়নি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার কর্মীগণ রাখাইন এলাকায় অবশিষ্ট রোহিঙ্গার ওপর অত্যাচার বন্ধ হওয়ার বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্য-প্রমাণ পাননি। নিঃসন্দেহে শরণার্থী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রচ- প্রতিকূল চাপ সৃষ্টি করেছে। এক হিসাবে বলা হয়েছে এ বছরের সেপ্টেম্বর হতে শুরু করে আগামী বছর জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভরণ-পোষণের জন্য ৭১২৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এ পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের চলতি বাজেটের প্রায় ১.৮ শতাংশ, মোট রাজস্ব আয়ের ২.৫ শতাংশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ১৩ শতাংশেরও বেশি (দ্রষ্টব্য : সিপিডির প্রতিবেদন, দৈনিক সংবাদ, ১২ নবেম্বর, ২০১৭)। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তরফ থেকে অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে ন্যূনপক্ষে ৪টি পদক্ষেপ জরুরীভাবে নেয়া সমীচীন হবে বলে মনে হচ্ছে। (১) বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে ধনী দেশসমূহ হতে সহায়তা আহরণ করা অতি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, সমকালীন অর্থনৈতিক অবস্থায় এককভাবে বাংলাদেশ এসব আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গার সাময়িক ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বহন করতে পারবে না। এ লক্ষ্যে কৌশলের সঙ্গে বাংলাদেশ কর্তৃক ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাদির কাছে রোহিঙ্গাদের অবস্থা তুলে ধরে ত্বরিত সাহায্য প্রাপ্তির পদক্ষেপ নিতে হবে। (২) জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার প্রত্যাবর্তনের মূল শর্ত হিসেবে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক তাদের নাগরিকত্ব ও নাগরিক অধিকার স্বীকার করিয়ে নিতে হবে। জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে একযোগে দাবি উত্থাপন করতে হবে যে, এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার সরকারের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাদের আগের বাসস্থানে পুনর্বাসন করতে হবে, তাদের ভূমির মালিকানা বা অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রান্ত জনগোষ্ঠীর কল্যাণসূচক সহায়তা লাভের অধিকার স্বীকার করতে হবে। (৩) একই সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং উপসাগরীয় এলাকায় যে সব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকার করবে তাদের সঙ্গত কারণে ও মতৈক্যের ভিত্তিতে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এ কাজটি সম্ভব করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী কমিশনকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তৎপর হতে হবে। (৪) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বিপুল সংখ্যায় আশ্রয় নিতে বাধ্যকরণকে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও শুরু করার শামিল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এই বিবেচনায় মিয়ানমারের বিদেশ থেকে সমরাস্ত্র আহরণ বন্ধে দাবি উঠাতে হবে। উপরোক্ত প্রেক্ষিতে ও লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অধিকতর সোচ্চার হতে হবে। এই কার্যক্রম দৃঢ়তা ও দ্রুততার সঙ্গে হাতে নেয়া ও বাস্তবায়নের জন্য ন্যূনপক্ষে ৫টি অনুগামী পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে : এক. রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যে হত্যা, ধর্ষণ ও অত্যাচার করেছে তার সাক্ষ্য প্রমাণাদি যথাযথভাবে সংগ্রহ করতে হবে। এই সব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমার সরকার, বিশেষত তার সংশ্লিষ্ট সামরিক অফিসারদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করা সহজ ও সম্ভব হবে। এলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার লক্ষ্যে বিশেষ আদালত স্থাপন করার প্রস্তাব দিতে পারে। সম্ভবত এই ধরনের আদালত স্থাপনকল্পে প্রস্তাবের প্রতিকূলে রাশিয়া ও চীন বিরোধিতা করবে না। অনুরূপ প্রস্তাব দেয়ার প্রক্রিয়ায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করে একযোগে এগিয়ে যাওয়া উত্তম হবে। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা পাতেন ১২ নবেম্বর ঢাকায় বলেছেন নিরাপত্তা কাউন্সিলের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের জন্য বিশেষ আদালত হিসেবে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অত্যাচার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে। দুই. নিরাপত্তা পরিষদের তরফ থেকে বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার প্রস্তাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ইউরোপীয় আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করতে পারে। স্পেনের পিনোচেটের বিরুদ্ধে এই ধরনের আদালত গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে ইউরোপ যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল। তিন. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৃথিবীব্যাপী ম্যাগনিটস্কি মানবধিকারের জবাবদিহিত্ব সম্পর্কিত আইনের (এষড়নধষ গধমহরঃংশু ঐঁসধহ জরমযঃং অপপড়ঁহঃধনরষরঃু অপঃ.) আওতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। এই আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মানবতাবিরোধী যে কোন ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবহারের সুযোগ না দিতে, যে কোন অপরাধী ব্যক্তির আর্থিক সম্পদ জব্দ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার বা তাদের আগমন বন্ধ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ করে মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট সামরিক অফিসার ও বৌদ্ধ ধর্মযাজকদের এই কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিশ্বব্যাপী ম্যাগনিটস্কি (এষড়নধষ গধমহরঃংশু) আইনের আওতায় তালিকাভুক্ত করার দাবি জানানো উত্তম হবে। চার, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের আদালতে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও ত্রাণ প্রদানের জন্য নির্বাহিত ব্যয় বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করতে পারে। সংশ্লিষ্ট আদালতে মিয়ানমারের সামরিক সেনাদের নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিমান, সমুদ্রগামী জাহাজ এবং বিদেশে রক্ষিত অন্যান্য সম্পত্তি জব্দ করা সম্ভব হতে পারে। পাঁচ. মিয়ানমারে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান থেকে যারা বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে তাদের স্ব স্ব দেশে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার সংস্থা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযুক্ত করে মিয়ানমার থেকে তাদের লব্দ আয় রোহিঙ্গাদের ত্রাণকার্যে ব্যবহার করার দাবি জানানো ও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দ্রুত দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে না এগুলে মিয়ানমার কর্তৃক অনুসৃত সময়ক্ষেপণের তৎপরতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যাটিকে ক্রমান্বয়ে সহনীয় এবং তথা লঘু গুরুত্বে নামিয়ে ফেলতে পারে। ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের ক্ষেত্রে এবং সাম্প্রতিককালে অস্ট্রেলিয়ার নিকটবর্তী মানুজ দ্বীপের শরণার্থীদের অনুকূলে প্রাথমিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া গেলেও সময়ের পরিসরে সেখানে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব নিচে নেমে গেছে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘসূত্রতা তেমনি গুরুত্ব ও হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই প্রেক্ষিতে সর্বক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচেষ্টা প্রযুক্ত করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। এই সকল কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলকে মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকূলে দৃঢ়তম সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সামনে রেখে বেগম জিয়া ও তার মুষ্টিমেয় অর্বাচীন সমর্থক অপ্রতুল মনোযোগের অভিযোগ উত্থাপন করছে তারা যে স্বদেশের স্বার্থের অনুকূলে কাজ করছে তা কোন বিবেচনায়ই বলা যাবে না। লেখক : সাবেক সচিব ও মন্ত্রী
×