ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেটের উড়ন্ত সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৫ নভেম্বর ২০১৭

উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেটের উড়ন্ত সূচনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসরে দুটি দল অনেক শক্তিশালী। তাদের শক্তির ধারে কাছে কোন দল নেই। একটি ঢাকা ডায়নামাইটস। আরেকটি রংপুর রাইডার্স। দেশী-বিদেশী তারকা ক্রিকেটারে ভরপুর। কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা শুরুতেই হোঁচট খেল। ‘কাগজে-কলমে’ শক্তিশালী থেকে গেল। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে শুরুতেই হারল। বিপিএলের শুরুতেই তাতে মিলল চমক। সিলেট সিক্সার্সের কাছে ৯ উইকেটে হেরে গেল ঢাকা ডায়নামাইটস। শুভ সূচনা করল সিলেট সিক্সার্স। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো এত ক্রিকেটারের মেলা বসেছে। দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লীগ হচ্ছে সিলেটে। স্টেডিয়ামে তাই উপচেপড়া ভরা দর্শক। বিপিএলের পঞ্চম আসরের শুরুর ম্যাচেই আবার ঘরের দল সিলেট খেলছে। তাতে দর্শকদের সমর্থন তো ছিলই। সেই সমর্থন কাজেও লেগেছে। টস জিতে সিলেট ফিল্ডিং নিয়েছে। সিলেট স্টেডিয়ামে এর আগে ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক, একাডেমি ও ‘এ’ দলেরও কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে এ স্টেডিয়ামে ভালই রান হয়। গড়ে ১৫০ রান হয়। কিন্তু ঢাকা সেই রানের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। বিপিএলে নবাগত সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক নাসির হোসেন (২/২১) প্রথম ওভার থেকেই বল করে ঝলক দেখিয়েছেন। নাসিরের সঙ্গে আবুল হাসান রাজু (২/২৪) ও ইংল্যান্ডের লিয়াম প্লানকেটের (২/২০) দুর্দান্ত বোলিং যোগ হওয়াতে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি ঢাকা। একের পর এক ক্যাচ মিস হয়। সেই সুযোগগুলোও কাজে লাগাতে পারেনি ঢাকা। কুমার সাঙ্গাকারা সর্বোচ্চ ৩২ রান করতে পেরেছেন। প্রথম ম্যাচটিই নিজেদের মাঠে (সিলেট স্টেডিয়ামে) খেলার সুযোগটি পেয়ে যেন জ্বলে ওঠে সিলেট। এমনই জ্বলে উঠে ১ উইকেট হারিয়ে ১৬.৫ ওভারে ১৩৭ রান করে ম্যাচ জিতে যায়। থারাঙ্গা (৬৯*) ও ফ্লেচার (৬৩) হাফ সেঞ্চুরি করে সহজেই ম্যাচ জেতান। অসহায় আত্মসমর্পণই করেন বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সিলেটের দর্শকরা প্রথম ম্যাচেই নিজ দলকে জিততে দেখে আনন্দে আত্মহারাও হয়ে পড়েন। একটি দলে যতই তারকা থাকুক তাদের তো খেলতে হবে। ঢাকায় যেমন শহীদ আফ্রিদি, কেভন কুপার, মোহাম্মদ আমির, সুনীল নারাইন, কাইরন পোলার্ড, কুমার সাঙ্গাকারা, শেন ওয়াটসন রয়েছেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচটি খেলতে পেরেছেন শুধু পোলার্ড ও সাঙ্গাকারা। আফ্রিদি, কুপার, আমির, নারাইন, ওয়াটসনরা তো দলের সঙ্গেই যোগ দিতে পারেননি। ওয়াটসন ইনজুরির জন্য খেলতেই পারবেন না। আমিরও শুরুতে খেলতে পারবেন না। অন্তত ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত তো নয়। তাকে পাকিস্তান ন্যাশনাল টি২০ কাপে অংশ নিতে হবে। বাকিরা দলের সঙ্গে দ্রুতই যোগ দেবেন। তারা যোগ দেয়ার আগে ঢাকা যে শক্তি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হবে, তাতো প্রথম ম্যাচেই বোঝা হয়ে গেছে। অথচ সিলেট সিক্সার্সে উল্টো চিত্র। দলে তারকা দেশী-বিদেশী ক্রিকেটার রয়েছেন। কিন্তু বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গাই সবচেয়ে নামী। সেই নামের প্রতি সুবিচারও করে দেখালেন থারাঙ্গা। তারসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার তো ‘চার-ছক্কা’ হাঁকাতে থাকলেন। দু’জন মিলে ওপেনিংয়েই ১২৫ রানের জুটি গড়েন। ফ্লেচার ৬৩ রান করে আউট হওয়ার পর আর কোন উইকেট হারায়নি সিলেট। উপুল থারাঙ্গার অপরাজিত ৬৯ ও সাব্বির রহমান রুম্মনের অপরাজিত ২ রানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিলেট। সিলেটের নেতৃত্বে মনে করা হয়েছিল থারাঙ্গা থাকবেন। কিন্তু নাসিরকে অধিনায়ক করা হয়েছে। এর আগে বিপিএলে দুইবার নেতৃত্ব দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল নাসিরের। একবার ঢাকার বিপক্ষে, আরেকবার ঢাকার হয়ে। দুইবারই অনিয়মিত নেতৃত্বে আসেন নাসির। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে এবং ২০১৫ সালে তৃতীয় বিপিএলে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে নেতৃত্ব দেন নাসির। দুইবারই হারতে হয়। তবে এবার পুরোপুরি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়ে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করে দেখান নাসির। আবার দলের হয়ে প্রথম ওভারটি করে শেষ বলে উইকেটও নেন। ২ রান হতেই মেহেদী মারুফকে হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে কুমার সাঙ্গাকারা ও এভিন লুইস মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন মনে হচ্ছিল দেড় ’শ রান তো হবেই। কিন্তু যেই সাঙ্গাকারা ও লুইস মিলে দলকে ৫৬ রানে নিয়ে যান, ৫৪ রানের জুটি গড়েন, নাসির আবার ত্রাতা হয়ে ফিরেন। লুইসকে আউট করে দেন। এরপর যে ঢাকার বারোটা বাজে, শেষ পর্যন্ত ১৩৬ রানের উর্ধে করতেই পারেনি। চোখের অসুবিধা সারিয়ে আবার মাঠে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, কাইরন পোলার্ড, ক্যামেরন ডেলপোর্ট, আদিল রশিদরা মিলেও কিছুই করতে পারেননি। তারকা খচিত দলটি তাই শুরুতেই হোঁচট খেল। সিলেট সিক্সার্স শুরুতেই চমক দেখাল। স্কোর ॥ ঢাকা-সিলেট ম্যাচ ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস ১৩৬/৭; ২০ ওভার (মেহেদী ০, লুইস ২৬, সাঙ্গাকারা ৩২, মোসাদ্দেক ৬, সাকিব ২৩, পোলার্ড ১১, ডেলপোর্ট ২০*, রশিদ ৩, রনি ৭; নাসির ২/২১, রাজু ২/২৪, প্লানকেট ২/২০। সিলেট সিক্সার্স ইনিংস ১৩৭/১; ১৬.৫ ওভার (থারাঙ্গা ৬৯*, ফ্লেচার ৬৩, সাব্বির ২*; রশিদ ১/৩১)। ফল ॥ সিলেট সিক্সার্স ৯ উইকেট জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ উপুল থারাঙ্গা (সিলেট সিক্সার্স)।
×