ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৪ নভেম্বর ২০১৭

ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি

ডয়েচে ভেলে ॥ ইলেকট্রিক গাড়িকে ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থার মুশকিল আসান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জার্মানি এতকাল পিছিয়ে থাকলেও নতুন উদ্যমে কাজ চলছে। যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে রেসিং কার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। দেখতে ডিজেলচালিত বাসের মতো মনে হলেও পুরোপুরি বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে। জার্মানির মানহাইম শহরে এমন তিনটি বাস পথে নেমেছে। বাস স্টপেই দ্রুত ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীরা টেরও পান না। চালকও নিশ্চিন্ত থাকেন। কিন্তু এখনও বড় আকারে এমন বাস চালানোর সময় আসেনি। শুধু বিনিয়োগের অঙ্কই ছিল ৬০ লাখ ইউরোর বেশি। তবে প্রকল্পের প্রধানের আশা, কোন একদিন ইলেকট্রিক বাস দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠবে। ই-বাস প্রকল্পের প্রধান সেবাস্তিয়ান ম্যাঙ্গেস বলেন, ‘এমন বাসের দাম খুবই বেশি, এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে অন্য বাসের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। তবে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে চলেছে। তাছাড়া ব্যাটারি নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রেও দাম অনেক কমবে বলে আমাদের আশা।’ কার্লসরুয়ে প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এই ইলেকট্রিক বাস প্রকল্পে জড়িত। তাদের এই ল্যাবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরি হয়। ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য ব্যাটারির দাম কম রাখা এবং একবার চার্জ দিয়ে আরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করাই হলো লক্ষ্য। তবে এশিয়ার তুলনায় জার্মানি এখনও এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ইয়র্গ কাইসার অনেক বছর ধরে এক জার্মান ব্যাটারি কোম্পানির জন্য কাজ করেছেন। কিন্তু সেই কোম্পানি চলতি বছর বন্ধ হয়ে গেছে। রসায়নবিদ ইয়র্গ কাইসার বলেন, ‘২০১৫ সালে মনে হচ্ছে, যে সেল টেকনোলজির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় ইউরোপ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তির গুরুত্ব বুঝতে জার্মানিতে অনেক সময় লেগেছে। তারপর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারী সাহায্যে অনেক প্রকল্প শুরু হয়েছে। তবে শুধু এই পদক্ষেপে কাজ হয়নি।’ বিজ্ঞানী ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সেই সঙ্গে ইলেকট্রিক গাড়ির সফটওয়্যার আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন। তারা ব্যাটারির অবস্থা এবং চার্জিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন, যেমনটা এতকাল সম্ভব ছিল না। এই প্রকল্প সার্বিকভাবে ইলেকট্রোমোবিলিটির অগ্রগতি ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সফটওয়্যার ডেভেলপার টোমাস কচেনরয়টার বলেন, ‘একদিকে এই তথ্য ক্রেতাদের জন্য প্রয়োজনীয়। ব্যাটারি কতটা চার্জ হয়েছে, তিনি সেটা জানতে চাইবেন। তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইবেন। জানতে চাইবেন, এক চার্জে গাড়ি কত কিলোমিটার চলবে। পরের দিনও চার্জ পুরো থাকা চাই। এ ছাড়া গাড়ি ভাড়া দেয় যে কোম্পানি, তাদেরও ব্যবসায়িক স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।’ কার্লসরুয়ে প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতের ইলেকট্রিক গাড়ির ডেভেলপার হতে পারেন। তারা একটি ইলেকট্রিক স্পোর্টস কার তৈরি করে ‘ফর্মুলা-ই আন্তর্জাতিক ছাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। শুধু মজা ও দ্রুতগতির রোমাঞ্চ নয়, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ইলেকট্রোমোবিলিটির জনক হিসেবে দেখতে চান। কনস্টানটিন গেয়ার্ৎস বলেন, ‘আমার মনে হয়, ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট’ ও ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইলেকট্রিক’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে ইলেকট্রোমোবিলিটির ক্ষেত্রে কী সম্ভব, তা পরীক্ষা করা যায়। অনেক স্পন্সর আমাদের কাজে বিনিয়োগ করছে। আমাদের ও ইলেকট্রিক গাড়ির প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। কে জানে, আমরাই হয়ত আগামী কয়েক দশকে জার্মানির রাস্তায় ই-কারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছি।’ এবার রেসিং ট্র্যাকে নামার পালা। খুব কম চালকই এই গাড়ি চালানোর অনুমতি পান। কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি ইঞ্জিন বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে পারে এই রেসিং কার। এই উদ্যোগ সার্থক হয়েছে। তাদের ই-কার নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ‘ফর্মুলা-ই’ প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছেন।
×