ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামীণ উন্নয়নে এক অনন্য মডেল

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

গ্রামীণ উন্নয়নে এক অনন্য মডেল

২০১০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ১ম সপ্তাহে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ যখন হাসপাতালে একটি অস্ত্রপচারের পর বিছানায় শায়িত ছিলেন তখন ‘দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি’ ধারণাটি তার মাথায় আসে যা পরবর্তীতে ‘সমৃদ্ধি’ হিসেবে পরিচিত। এই ধারণার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোর বর্তমান সম্পদ ও সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা করা। যাতে তারা প্রথমে তাদের প্রাপ্ত সম্পদ ও সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। তাদের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে দরিদ্রতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে টেকসই ভিত্তিতে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে চলতে পারেন। প্রত্যেকে মানব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। সমৃদ্ধি কর্মসূচীর একেবারে মূলে রয়েছে মানবকেন্দ্র্রিকতা অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট করণীয়কে কেন্দ্র করে নয়, বরং মানুষকে কেন্দ্র করে সকল কর্মকা-ের বিন্যাস ঘটানোর বিষয়। লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, যে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক সময় লাগতে পারে। তবে সেই ধ্রুবতারাকে নিশানা করে সকল দরিদ্র মানুষ যাতে এগিয়ে চলতে পারে সমৃদ্ধির মাধ্যমে সেই অভিযাত্রায় সকলকে অনুপ্রাণিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১০ সালে পিকেএসএফ –এর পরিচালনা পর্ষদ ‘সমৃদ্ধি’ প্রস্তাবটি অনুমোদন করে । শুরু হয় বাস্তবায়ন। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ সমৃদ্ধি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৫৩ টি ইউনিয়নে, দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী সংস্থাসমূহের মাধ্যমে। এ সকল ইউনিয়নে শিক্ষা- সহায়তা, সাস্থ্যসেবা পুষ্টি, প্রশিক্ষণ, কমিউনিটিভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম, ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম, সমৃদ্ধি কেন্দ্র নির্মাণ, বাসক চাষাবাদ কার্যক্রম, শতভাগ স্যানিটেশন কার্যক্রম , সমৃদ্ধ বাড়ী গঠন, যথোপযুত্ত ঋণ সহায়তা ও নানাসামাজিক ব্যাধি নিরসনকল্পে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আর এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে ৪৩ লাখ পরিবার। পিকেএসএফ এখন ‘সমৃদ্ধি’ কর্মসূচির মূলমন্ত্র অনুসরন করে তার অন্যান্য কর্মকান্ডের ক্ষেত্রেও মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে, যাতে এসকল মানুষ টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন সাপেক্ষে আর্থ-সামাজিক ক্রম-উন্নতির পথে টেকসইভাবে এগিয়ে চলতে পারেন এবং মানব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। পিকেএসএফ এখন অতিদরিদ্রদের অবস্থা পরিবর্তনে যত্নশীল এবং বাস্থবানুগ আর্থিক ও অ-আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোগ সৃষ্টি ও এগুলোর সম্প্রসারনে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে যথাযথ সহায়তা দিচ্ছে। পরিবর্তিত ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ, লাগাসই ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করণে সহায়ক ভূমিকা পালন পিকেএসএফের সকল কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পিকেএসএফ-‘সমৃদ্ধি’র অভিজ্ঞতায় এখন আর শুধু ক্ষুদ্রঋণ ও আনুষঙ্গিক কিছু প্রশিক্ষণ ও সেবা প্রদান করার জন্য সহযোগী সংস্থাদের অনুকূলে অর্থ সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান নয়। পিকেএসএফ এখন প্রকৃত অর্থে মানব উন্নয়নে নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। কোন প্রকল্প বা কর্মসূচী নয়, মানুষকে কেন্দ্রের সকল কর্মকাণ্ড বিন্যাস করা হচ্ছে। পিকেএসএফ বিগত কয়েক বছরে দরিদ্র মানুষের টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন এবং তৎপরবর্তী আর্থ-সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হওয়া, সাংস্কৃতিক বিকাশ, সম্পদ ও আয় বৃদ্ধি, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ, সার্বজনীন মানবাধিকারসমূহ অর্জন এবং মানবমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা লাভে আর্থিক এবং নানা অ-আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। সমৃদ্ধির ধারণায় এখন সংস্থাগুলো প্রথাগত ঋণে আবদ্ধ না থেকে মানব উন্নয়নে তাদের সকল কর্মকাণ্ড বিন্যাস্ত করছে। তাদের বার্ষিক উদ্বৃত্তের ১০% সামাজিক বিষয়সমূহে, বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করার ব্যবস্থা নিয়েছে। অনেক সংস্থা ইতোমধ্যে তা অর্জন করেছে এবং অন্যেরা সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। এছাড়াও একজন সদস্য যে কাজের জন্য ঋণ নেন, সে কাজ সুষ্ঠুভাবে যাতে সম্পন্ন হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের উপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়। অর্থায়নের পাশাপাশি অন্যান্য সেবা যথাযথভাবে প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে প্রয়োজনানুসারে ঋণের পরিমাণও বাড়ানো হয় এবং ঋণ পরিশোধে প্রয়োজনে নমনীয়তার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে কার্যক্রম সম্প্রসারণে, আয় বৃদ্ধিতে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের সক্ষমতা বাড়ছে। তারা আগের মতো ক্ষুদ্রঋণে আবদ্ধ না থেকে আয়-উন্নতি বাড়িয়ে এগিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করছেন। গ্রামীণ উন্নয়নে এটা একটি অনন্য মডেল যা ইতোমধ্যে সমৃদ্ধি কর্ম এলাকায় যথেষ্ট সাড়া পড়েছে।
×