ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বহুল আলোচিত টি২০ ম্যাচ আজ

লাহোরে আবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

লাহোরে আবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বহুল আলোচিত, বহুল প্রতীক্ষিত পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা টি২০ আজ। এটি মূলত আরব আমিরাতে চলা দু’দলের তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ দ্বৈরথ। টানা দুই জয়ে ইতোমধ্যে সিরিজ নিশ্চিত করেছে সরফরাজ আহমেদের পাকিস্তান। তবে ফল ছাপিয়ে এই ম্যাচে আলোচনায় লাহোর। কারণটা অনুমেয়, ২০০৯ সালে এখানেই অতিথি শ্রীলঙ্কান টিম বাসে ভয়বাহ সন্ত্রাসী হামলা নিরাপত্তারক্ষীসহ একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন মাহেলা জয়বর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারারা। সেই থেকে গত আট বছরে জিম্বাবুইয়ে ছাড়া বড় কোন দল পাকিস্তান সফর করেনি। কার্যত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অচ্ছুত হয়ে পড়ে পাকিস্তান। আইসিসির আন্তরিকতায় কিছুদিন আগে বিশ্ব একাদশ নামে একটি দল তিন ম্যাচের টি২০ খেলে আসার পর সেই শ্রীলঙ্কাই আবার সেই লাহোরে যাচ্ছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার সফর, একটি টি২০ খেলেই ফিরতি বিমান ধরবে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা বললে আসলে পুরোপুরি সত্যি বলা হবে না। আমিরাতে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালেই বড় রকমের ঝামেলায় পড়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)। জাতীয় দলসহ শীর্ষ ৪০ ক্রিকেটার লিখিতভাবে পাকিস্তানে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। তার আগে নিজেকে সরিয়ে নেন রঙিন পোশাকের অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাও। পরে বুঝিয়ে মাত্র সাত ক্রিকেটারকে রাজি করানো যায়, তাদের কেউই শীর্ষ তারকা নন। শ্রীলঙ্কাকে টি২০’র পুরো সিরিজটিই তাই নতুনদের নিয়ে খেলতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে থিসারা পেরেরাকে অধিনায়ক করা হয়। দলে সেকুগে প্রসন্ন আর দিলশান মুনাওয়ারা ছাড়া বাকি নামগুলো তাই খুব একটা পরিচিত নয়Ñ অন্যরা হলেন বিশ্ব ফার্নান্ডো, লাহিরু গামাগে, সচিথ পাথিরানা, আশান প্রিয়ঞ্জন, সামিরা সাদারাবিক্রমে। প্রতিপক্ষ যতই খর্বশক্তি হোক, দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরায় খুশি পাকিস্তানীরা। ফেবারিট না হয়েও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতে তাক লাগিয়ে দেয় পাকিস্তান। অধিনায়ক সরফরাজ তখনই বিশ্ব ক্রিকেটকে পাকিস্তানমুখী হওয়ার আহ্বান জানান। বছরের শুরুতে লাহোরে সফলভাবে পিএসএলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিশ্ব একাদশকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল)। জগদ্বিখ্যাত সব তারকাদের নিয়ে সেখানে তিনটি টি২০ ম্যাচও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর লাহোরে এই সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলার প্রতিশ্রুতি দেয় শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)। শীর্ষ খেলোয়াড়দের ছাড়া হলেও ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেই খুশি এসএলসি। সন্তুষ্ট পাকিস্তান সরকারের নেয়া ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। খোদ শ্রীলঙ্কান ক্রীড়ামন্ত্রীরও লাহোরে উপস্থিত থেকে এই ম্যাচ দেখার কথা রয়েছে। লাহোরজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। অভিজ্ঞ পাকিস্তানী অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ বলেন, ‘আমরা তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই এবং তাদের স্বাগত জানাই। পাকিস্তানে তাদের ফেরা নিয়ে সবাই উচ্ছ্বসিত। বিশ্ব একাদশের আগমন ছিল পাকিস্তানে ক্রিকেট পুনরুজ্জীবিত করার প্রথম ধাপ। লাহোর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচটা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য হবে একটা অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আমি আশাকরি এ সফরের পর আরও বেশি দল পাকিস্তানে আসবে। আমরা তাদের প্রচুর আতিথেয়তার সঙ্গে বরণ করে নিতে চাই। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় একটি গ্রেট ম্যাচ হবে।’ সাবেক অধিনায়ক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াদদ বলেন, ‘গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পিএসএলের ফাইনাল ম্যাচটি খুব জমজমাট হয়েছিল। পরবর্তীতে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে পাকিস্তনের সিরিজেও সমর্থকরা গলা ফাটিয়েছে।’ বড়ে মিয়া আরও যোগ করেন, ‘এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিজয়। কোন দেশই বর্তমানে সন্ত্রাসের হাত থেকে নিরাপদ নয়। তবে পাকিস্তান আগে থেকে অনেক উন্নতি করেছে। আমি আন্তর্জাতিক দলগুলোকে বলব পাকিস্তানে আসো ও খেলো। পাকিস্তান নিরাপদ ও এখানকার খেলা পাগল জাতি সবাইকে প্রচুর সম্মান করেন। শ্রীলঙ্কানদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’ লঙ্কানদের ধন্যবাদ দিয়েছেন ওয়াসিম আকরাম, শহীদ আফ্রিদির মতো সাবেক তারকারা।
×