ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁকড়া চাষের সোনালি দিন...

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ অক্টোবর ২০১৭

কাঁকড়া চাষের সোনালি দিন...

সুমন্ত গুপ্ত কাঁকড়া। একেবারেই অবহেলিত এক জলজ প্রাণী। অবহেলিত এই কাঁকড়াই খুলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার। কারণ বিদেশে এই কাঁকড়ার চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। সঠিক পরিকল্পনা নিলে এ পণ্য বদলে দিতে পারে লাখো মানুষের ভাগ্য। কাঁকড়া রফতানি করে এখন প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। দিন দিন যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে সাদা সোনা হিসেবে পরিচিত চিংড়িকেও হার মানাতে পারে এই জলজ সম্পদ-এমনটাই মনে করছেন কাঁকড়া চাষীরা। বিশ্বজুড়ে বাড়ছে কাঁকড়ার চাহিদা। কাঁকড়া আর্থ্রোপোডা পর্বেও একটি ক্রাস্টাসিয় প্রাণী। এদের শরীর একটি পুর বহিঃকঙ্কালে আবৃত থাকে এবং এদের এক জোড়া দাঁড়া থাকে। এ পর্যন্ত কাঁকড়ার ৬,৭৯৩টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। পৃথিবীর সব সাগরেই কাঁকড়া পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক মিঠা পানির ও স্থলবাসী কাঁকড়াও পাওয়া যায়, বিশেষত গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে। কাঁকড়া বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে হতে পারে, যেমন পি কাঁকড়ার দৈর্ঘ্য কয়েক মি.মি (বহ:ঢ়বধ পৎধন), আবার জাপানী মাকড়সা কাঁকড়ার (বহ:ঔধঢ়ধহবংব ংঢ়রপবৎ পৎধন) একটি পায়ের দৈর্ঘ্যই ৮ মি.। বিশ্ববাজারে কাঁকড়ার চাহিদার ১০০ শতাংশই জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ, যা দেশে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানেরও পথ খুলে দিচ্ছে। এখন দরকার সরকারের নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধি। এর সঙ্গে নীতিমালার যুগোপযোগী সংশোধন এবং দেশ থেকে এই সোনালী সম্ভাবনার কাঁকড়া পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া। কারণ নজরদারির অভাবে সীমান্তের ফাঁক গলে প্রতি বছর দেশে পাওয়া ১০-১৫ ভাগ কাঁকড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে সুন্দরবন অঞ্চল থেকে আহরিত কাঁকড়াই বিদেশীদের কাছে অকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারে চাষ করা কাঁকড়া ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে রফতানি হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে সীমিত পরিসরে কাঁকড়া রফতানি শুরু করেন। পরবর্তীকালে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। সীমিত আকারের চাষ করে উৎপাদিত কাঁকড়া বছরে ৫ থেকে ৭ হাজার টন রফতানি হয়। সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের দিকে প্রথম কাঁকড়ার পোনা ও চাষ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্র। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের এ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম এ্যান্ড নিউট্রিশন প্রকল্পের যৌথ তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের একটি হ্যাচারিতে নতুন উদ্যোগে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করে। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল। এরপর তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৭৩ টনে। একইভাবে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪১৬ টন; আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৫২০ টনে। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁকড়া রফতানি হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৬ মেট্রিক টন। ‘কাঁকড়া চাষে ঝুঁঁকি না থাকায় সফলতা বেশি। তাই আরও সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব আর সঙ্গে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
×