ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্পিতা রায়

নতুন প্রজন্মের চিকিৎসক

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২০ অক্টোবর ২০১৭

নতুন প্রজন্মের চিকিৎসক

পুষ্পিতা রায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে বর্তমানে ইন্টার্নশিপের শেষ পর্যায়ে। এই পর্যন্ত আসতে তাকে যেভাবে মেধা, শ্রম আর সময়কে সুশৃঙ্খলভাবে কাজে লাগাতে হয়েছে সেখানে সে সফলতার সঙ্গে তার সুদীর্ঘ শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বাবা সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তা সেই সুবাদে বাবার কর্মস্থলে থেকে তাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়। গোপালগঞ্জের মেয়ে পুষ্পিতা রিয়াম মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে। এবারের ফলাফলও ছিল মেধা তালিকার শীর্ষে। প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন থাকলেও মায়ের ইচ্ছায় চিকিৎসা শাস্ত্রকেই বেছে নেয় জীবনের লক্ষ্য হিসেবে। আর সেই ভাবেই নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে তৈরি করা। নিজের অদম্য ইচ্ছা আর পরিশ্রমের ফল আজকে তার এই চিকিৎসক হওয়া। একজন মানুষ যদি মানবসেবায় নিজেকে সমর্পণ করতে চায় সেখানে চিকিৎসকের ভূমিকা একেবারেই যুগান্তকারী। ক্রমাগত সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে গেছে তার শিক্ষা কার্যক্রম এবং পেশাগত জীবনকে পূর্ণ করার অভিপ্রায়ে। তবে পুরো সফল কাম হতে আরও দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। প্রতিনিয়তই প্রতিযোগিতার সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হতে হলে আরও উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন অনেক বেশি জরুরী। একজন সফল ডাক্তার হতে গেলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পর্যায়গুলোতে প্রয়োজনীয় ডিগ্রী এবং দক্ষতা অর্জন করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। সরকারী চাকরি পেতে গেলে বিসিএস-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সেই ভাবনাও মাঝে মধ্যে তাড়িত করে। বাবা-মা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। মাও একসময় শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সংসার আর সন্তানদের সামলাতে গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আকাক্সক্ষাকে বাদ দিতে হয়েছিল। পারিবারিক নির্মল আবহ তার জীবন গড়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি সহায়ক শক্তি ছিল। তাই চলার পথে কোন ধরনের বাধা প্রতিবন্ধকতাকে সেভাবে মোকাবিলা করতে হয়নি। মেধা আর শ্রমের সঙ্গে অনুকূল পরিবেশ যদি সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে তাহলে কাউকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না। পুষ্পিতার ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে যেভাবে তৈরি করতে পেরেছে একইভাবে একটি নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয়ের আঙ্গিনাও তিল তিল করে গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। গান গাওয়া থেকে শুরু করে নৃত্য পরিবেশন এমনকি লেখালেখির জাগতেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে। রবীন্দ্র সঙ্গীত কিংবা দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জেলাভিত্তিক প্রথম পুরস্কারও অর্জন করে। নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া ছাড়া কোন শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করা যায় না। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সেটা আরও জরুরী। তাই সুশৃঙ্খল জ্ঞানচর্চার জায়গায় যেমন কোন ছাড় দিতে রাজি নয় পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চেতনাকেও লালন আর চর্চার মধ্য দিয়ে বিকশিত করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। সামনের দিনগুলোতে সেই লক্ষ্যেই নিরন্তর কাজ করার অদম্য আকাক্সক্ষা তাকে প্রতিনিয়তই তাড়িত করে। কবিতা তার পছন্দের জায়গা। নিজেও কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। স্কুল এবং কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নেয়া পুষ্পিতা গানের ভুবনেও নিজেকে এগিয়ে নিতে চায়। নাচতেও ভালবাসে সে। বাবা অর্ধেন্দু শেখর রায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হওয়ার সুবাদে সচিবালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে পুষ্পিতা নিজেকে দর্শকের সামনে উপস্থাপনও করে। এই এক অন্যরকম ভাললাগার বোধ আর আনন্দ যাকে শুধু অনুভবই করা যায়। বংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সমৃদ্ধির জোয়ার যেভাবে গতিশীল করেছে তাতে মনে হয় বর্তমানে নারীরা সত্যিই সমস্ত বন্ধন জাল আর অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। এটা দেশের অগ্রগতির জন্য একটি শুভলক্ষণ। এক সময় মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সংসার সামলাতে নিজের সমস্ত আশা-আকাক্সক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। কিন্তু আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মেয়েরা শুধু মেয়ে হিসেবে নয় মানুষের মর্যাদায় সমাজে নিজেদের আসন মজবুত করছে। সেটা যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে একইভাবে পেশাগত অবস্থানেও। সমাজের অর্ধাংশ নারী জাতি যদি প্রবৃদ্ধির গতিশীলতায় নিজেদেরকে যুক্ত করতে না পারে তাহলে শুধু নিজেকেই বঞ্চিত করা হবে না পাশাপাশি সমাজকে ও তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে বিলম্বিত হবে। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×