ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি শেষে বেরল মিথুন নিটিংয়ের তথ্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি শেষে বেরল মিথুন নিটিংয়ের তথ্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মিথুন নিটিং এ্যান্ড ডাইংয়ের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের মুনাফার তথ্য প্রকাশের পর (২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর- ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ) কোম্পানিটির পাঁচ উদ্যোক্তা ৩২ লাখ ৮০ হাজার বা মোট শেয়ারের ১০.১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। কিন্তু এ সময় কোম্পানির দ্বিতীয় প্রান্তিকের লোকসানের তথ্য প্রকাশের জন্য সময়সীমা থাকলেও বিলম্ব করা হয়। এক্ষেত্রে লোকসানের তথ্য গোপন করে উচ্চদরে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মিথুন নিটিংয়ের উদ্যোক্তারা। কোম্পানিটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৭) আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয় ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর। এ সময় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ০.৬৫ টাকা মুনাফা করেছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। এর পরেই কোম্পানির উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়া শুরু করেন। দেখা গেছে, উদ্যোক্তা মাহফুজা হক ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ৯০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। এর পর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি উদ্যোক্তা মোঃ আতিকুল হক, মোঃ মাহবুব-উল হক ও মোঃ রফিকুল হক প্রত্যেকে ৬০ হাজার করে মোট এক লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। এছাড়া এ তিনজন উদ্যোক্তা ১৮ জানুয়ারি এক লাখ করে মোট তিন লাখ, ১২ ফেব্রুয়ারি দুই লাখ করে মোট ছয় লাখ, ১ মার্চ তিন লাখ করে মোট নয় লাখ, ২২ মার্চ তিন লাখ ৭০ হাজার করে মোট ১১ লাখ ১০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। এছাড়া আরেক উদ্যোক্তা মোঃ রবিউল হক ৭ মার্চ ৫০ হাজার ও ২৩ মার্চ আরও ৫০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। এক্ষেত্রে পাঁচ উদ্যোক্তা ৩২ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন এবং ঘোষণার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তা বিক্রি সম্পন্ন করেন। এদিকে, কোম্পানিটির দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২০১৬) আর্থিক হিসাব প্রকাশের জন্য কোম্পানিটির সর্বশেষ সময়সীমা ছিল ৩১ জানুয়ারি। আর তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য এ সময়সীমা ছিল ৩০ এপ্রিল। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ সময় আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেনি। এক্ষেত্রে উভয় প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব একসঙ্গে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকাশ করেছে। মিথুন নিটিংয়ের উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণার সময় কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৬৮.৭০ টাকা থেকে ৫০.৮০ টাকা। উদ্যোক্তাদের ঘোষণাকৃত ৩২ লাখ ৮০ হাজারের প্রায় সব শেয়ার এই দরে বিক্রি করা হয়েছে। আর ওই কোম্পানির শেয়ার এখন ৩৬ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবেও রয়েছে মিথ্যা তথ্য। কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ০.৬৫ টাকা মুনাফা করে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। এছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ১.২১ টাকা ও তৃতীয় প্রান্তিকে ০.৮৪ টাতা লোকসান করে বলে তথ্য প্রকাশ করে। এ হিসাবে কোম্পানিটির ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ০.৫৬ টাকা ও নয় মাসে ১.৪০ টাকা লোকসান হয়। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ছয় মাসে ০.৬৭ টাকা ও নয় মাসে ১.৫১ টাকা লোকসান দেখিয়েছে। কোম্পানিটির লোকসানে পতিত হওয়ার মধ্যেও শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। এর পেছনে কারণ ছিল না বলে দেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে বেরিয়ে আসে, যা উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা হয়। যদিও ওই সময় লোকসানের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিথুন নিটিংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পরিচালনা পর্ষদের কয়েক দফায় পরিবর্তন করতে গিয়ে কোম্পানিটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, যার কারণে মূলত আর্থিক হিসাব প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে। ১৯৯৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি থেকে এরই মধ্যে উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ও পুনঃগণপ্রস্তাবের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর যোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ নিয়মানুয়ায়ী এ দুই পদ্ধতিতে মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আছে মাত্র ১৭.২০ শতাংশ। এদিকে, শনিবার (১৪ অক্টোবর) কোম্পানির দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশের পর কোম্পানিটির শেয়ারদরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ টাকা বা ৯.৯৮ শতাংশ কমে ৩৬.১০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
×