ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাডভোকেট চিত্রা রায়;###;সুপ্রীমকোর্ট, বাংলাদেশ

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : আমি অদিতি। আমার বিয়ে হয় গত ২০০৮ সালে। আমার স্বামী আমাকে খুবই আদর করত, যত্ননিত, প্রয়োজনীয় সব কিছুই না চাইতেই আমি পেতাম। আমার কোন অভিযোগ ছিল না। হঠাৎ করে বিগত ৪ বছর আগে ২০১২ সালের দিকে আমার স্বামী একদিন রাতে আর বাসায় আসেনি। অনেক উদ্বিগ্ন সময় পার করি। অনেক খোঁজাখুজির পর না পেয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামীর যে ইলেকট্রনিক্সের দোকান ছিল তা তিন মাস আগে বিক্রি হয়ে গেছে। আমিও আমার এবং তার আত্মীয়স্বজন তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি এবং সেও কোন যোগাযোগ করেনি। ২০১৪ সালে জানতে পারি সে আরেক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে এবং গাজীপুরে বসবাস করছে। তার সঙ্গে গাজীপুরে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। সে বিভিন্ন সময় আত্মীয়স্বজনদের কাছে আমার পরিচয় অস্বীকার করেছে। এতে আমার আত্মীয়স্বজনও অবাক হয়ে যায় এবং আমিও খুবই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। জীবনটা শূন্য মনে হতে লাগল। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, যখন দেখি আমাকে অস্বীকার করায় তার বিরুদ্ধে লড়ার আমার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। এক সময় দিন বদলায়। দুঃখও কমে আসে। আমার জন্য আমার এক আত্মীয়া পাত্রের সন্ধান নিয়ে আসে। প্রথমে রাজি ছিলাম না। পরবর্তীতে নিষ্ঠুর সময়ের নিকট পরাজিত হই। বিবাহের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। হিন্দু বিবাহের আইনগত কোন পদ্ধতি থাকলে জানাবেন। অদিতি ঢাকা থেকে উত্তর : বহু প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু বিবাহ পুরোহিত দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এখনও সেই ধারাই বিদ্যমান। পুরোহিত/পন্ডিত দ্বারা হিন্দু বিবাহ কোন প্রকার আইনেই কোন রূপ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০০৬ সাল থেকে Hindu Marriage Act ১৯৫৫ বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছে এইরূপ বিবাহ অস্বীকারের প্রতিরোধ করার জন্যই হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন ২০১২ ও হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বিধিমালা ২০১৩ বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রত্যেক হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বা Registrat করার পদ্ধতি বাংলাদেশেও প্রচলিত। গ্রামগঞ্জে হয়তো বা এখনও ব্যাপকহারে নিবন্ধনের মাধ্যমে বিয়ে হচ্ছে না তবে কোন মেয়ের যেন আপনার মতো অসহায় অবস্থায় পড়তে না হয়, তাই পুরোহিতের পাশাপাশি অবশ্যই মেয়েদের সচেতনভাবে হিন্দু বিবাহের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে হিন্দু বিবাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রিকরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক জেলা পর্যায়ে এখন একজন হিন্দু বিবাহ রেজিস্টার নিয়োগ আছে। তাই আপনার ক্ষেত্রে যেটা করতে হবে আপনাকে আপনার নিকটস্থ মন্দিরে বা হিন্দু বিবাহ রেজিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে, রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ের পর আপনার বিবাহের প্রমাণপত্র সরকারীভাবে এবং বক্তিগতভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তীতে যেন আপনার জীবনে ওই রূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং প্রত্যেকেরই এরূপ করা উচিত। তবে হিন্দু বিবাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে নিবন্ধিত না হলেও হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কোন বিবাহ সম্পন্ন হলে তার বৈধতা ক্ষুণ্ন হবে না।
×