ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১২ অক্টোবর ২০১৭

সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়ে ব্যস্ত থাকে মৌমাছি, পিঁপড়ের মতো প্রাণীরাও। তারা উদয়াস্ত খেটে যায় সঞ্চয়ের কাজে। ওরা অবশ্য সঞ্চয় করে খাদ্য। কিন্তু মানবকুলের সঞ্চয়ের তালিকায় খাদ্য ছাড়াও রয়েছে অর্থকড়ি। তাদের জন্য রয়েছে সঞ্চয়পত্র। স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। মানুষ এটাই প্রত্যাশা করে। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। অন্য খাতে বিনিয়োগের সুবিধা তেমন না থাকায় দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ সাধারণত সঞ্চয়পত্র কেনে। কোন ধরনের ঝুঁকি না থাকায় এবং বেশি লাভের জন্য বহু নাগরিক এ খাতে ঝুঁকে পড়েছেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় এমনটা ঘটেছে। বর্তমানে ব্যাংকে মেয়াদী আমানত রেখে সুদ পাওয়া যাচ্ছে ৫/৬ শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার এখনও ১১ শতাংশের ওপরেই রয়েছে। অবসরভোগী, চাকরিজীবী, প্রবাসী ও সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভেতর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের প্রবণতা বেশি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তার সারাজীবনের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই খাতেই বিনিয়োগ করে থাকে। সরকার নির্ধারিত সুদের হারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যে নাগরিকরা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন এখন সুদের হার কমানো হলে নিশ্চিতরূপেই তারা হবেন ক্ষতিগ্রস্ত। বিশ্বের সব দেশেই বয়স্ক নাগরিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের এ ধরনের সামাজিক সুরক্ষা দেয়া হয়। তাই আমাদের দেশেও পরিবার এবং পেনশনারদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ওপর দেয়া সুদহার না কমানোই সমীচীন। সরকারের ব্যয় বাড়লেও সঞ্চয় উৎসাহিত হবে। বলা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রে বিপুল অঙ্কের ঋণ সরকারের ব্যয় বাড়াচ্ছে। এটা তো বাস্তব যে, সঞ্চয়পত্রে টাকা খাটায় ব্যাংক আমানতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সুদ পায় বিনিয়োগকারীরা। ফলে সঞ্চয়পত্রের চাহিদার কারণে বিক্রি বাড়ছে ব্যাপক। চলতি অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে পাওয়া তেরো হাজার ৮শ’ ১৭ কোটি টাকার মধ্যে চার হাজার ৭শ’ ৮৮ কোটি টাকাই ব্যয় হয়েছে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা পরিশোধ বাবদ। এর মধ্যে শুধু মুনাফা পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৭শ’ দুই কোটি টাকা। সর্বশেষ নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ২৮ কোটি টাকা। ফলে গত আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিপুল অঙ্কের এ ঋণ সরকারের ব্যয় বাড়াচ্ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছরই বিদেশী উৎসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিতে হয় সরকারকে। কয়েক বছর আগেও ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের বেশিরভাগই আসত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা দিয়েছে উল্টো চিত্র। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকে সরকারের ঋণ ১২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা কমে এসেছে। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। আর ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিনিয়োগের ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ বা ধার হিসেবে গণ্য করা হয়। বাস্তবতা হলো, দেশের পুঁজিবাজারে দর ওঠানামা বেশি হয়। তাই এ খাতে বিনিয়োগ সাধারণজনরা আগ্রহী হয় না। সরকার যদি সঞ্চয়পত্রের অর্থ বেশি বেশি বিনিয়োগ করে তবে মুনাফা বাড়বে। আর সঞ্চয়কারীরাও হবে উপকৃত। সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম এ খাতকে তাই সম্প্রসারিত করা উচিত। সুদের হার বহাল রেখে সঞ্চয়পত্রের প্রতি জনগণকে আকৃষ্ট করা সঙ্গত। সরকার এ ক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবে না বলেই আশাবাদ করা যায়।
×