ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক তারকা ফুটবলার অমলেশ আর নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৮ অক্টোবর ২০১৭

সাবেক তারকা ফুটবলার অমলেশ আর নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ছিলেন এক সব্যসাচী ফুটবলার। গোলকিপিং ছাড়াও দলের প্রয়োজনে সব পজিশনেই খেলেছেন দাপটের সঙ্গে। তবে লিঙ্কম্যান হিসেবেই খ্যাতিটা ছিল বেশি। বডি ফিটনেসের পাশাপাশি স্ট্যামিনা ছিল অফুরন্ত। বল কন্ট্রোল, ডিস্ট্রিবিউশন ও স্ক্রিনিং সেন্স ছিল অসাধারণ। আক্রমণ গড়ে তুলতেন বুদ্ধি খাটিয়ে। যে কোন স্থান থেকে গোলপোস্টে আচমকা তীব্রগতির শট নিয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপানো ছিল তার জন্য ডালভাত। তার প্রধান গুণ ছিল কখনই মাথা গরম করে না খেলা। আচার-আচরণে ছিলেন দারুণ অমায়িক, ছিলেন সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র। ভালবাসার, ভাল লাগার এই মানুষটির নাম অমলেশ সেন। তিনি শনিবার চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সন্ধ্যা ৭টায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে পরলোকগমন করেন। শনিবার বিকেলেও অনুশীলন করিয়েছেন ঢাকা আবাহনী ফুটবল দলকে। রবিবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে শেখ জামালের সঙ্গে ম্যাচের জন্য অনশীলনটাই যে তার জীবনের শেষ অনুশীলন হবে তা কে জানতো? অনুশীলনের পর টিম ব্রিফিংয়ের সময় অসুস্থবোধ করলে ৭৪ বছর বয়সী অমলেশ নিজ রুমে যান। সেখান থেকে হাসপাতালে। তারপরই সব শেষ। তিনি ঢাকা আবাহনীর সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। স্ত্রী এবং দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অমলেশ সেনের মরদেহ আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শনিবার রাতেই আনা হলে এবং তার উদ্দেশে শেষবারের মতো সম্মান প্রদর্শন করা হয়। অমলেশের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আন্তরিক শোক প্রকাশ এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে। অমলেশের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২ মার্চ, বগুড়ায়। বগুড়ার আলতাফুন্নেসা মাঠে ফুটবল খেলায় হাতেখড়ি। ১৯৫৭ সালে বগুড়ার বাইটন ক্লাবের হয়ে শুরু হয় ক্যারিয়ার। পাঁচ বছর পর পাড়ি জমান ঢাকায়। ১৯৬২-১৯৬৯ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস এবং ইস্ট এ্যান্ডের হয়ে খেলেন। ১৯৭০ সালে খেলেন মোহামেডানের হয়ে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেন। ১৯৭২ সালে যোগ দেন নতুন দল আবাহনী ক্রীড়াচক্রে। এই আবাহনীই হয়ে ওঠে তার ঘর-সংসার ও ভালবাসার নীড়। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ফুটবল খেললেও একইসঙ্গে তিনি ছিলেন আবাহনীর খেলোয়াড়, কোচ ও সংগঠক। আবাহনীর দুঃসময়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ছিলেন। আবাহনীর হয়ে ১৩ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে পাঁচবার লীগ এবং একবার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের শিরোপা লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে ছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক। সেবার আবাহনী লীগে রানার্সআপ হয়। আবাহনী-মোহামেডান খেলায় প্রথম গোলটি এসেছে তার পা থেকে। ১৯৭৩ সালে অমলেশ ও সালাউদ্দিনের দেয়া গোলে প্রথম মোকাবেলায় আবাহনী ২-০ গোলে হারায় মোহামেডানকে। ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চি উচ্চতার অমলেশ পূর্ব পাকিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় দলে খেলেছেন ১৯৬৮-১৯৭০ পর্যন্ত। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় ছিলেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। তিনি ৬০-এর দশক থেকে চাকরি করতেন। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৭ বছর কর্মরত ছিলেন। আবাহনীতে কোচিংয়ের পাশাপাশি অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ফুটবল কোচও ছিলেন। যদিও কোচিংকে কোনদিনই পেশা হিসেবে নেননি। ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত মারদেকা ফুটবলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। ১৯৭৮ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসেও তিনি দলভুক্ত হন। কিন্তু অধিনায়ক মনোনয়ন নিয়ে বিতর্কের প্রতিবাদে আবাহনীর যে সাত ফুটবলার নাম প্রত্যাহার করে নেনÑ তিনি তাদের একজন। ১৯৭৫-১৯৮০ পর্যন্ত আবাহনীর আরেক সিনিয়র খেলোয়াড় আব্দুস সাদেকের সহযোগী ছিলেন। ১৯৮৬ সালে সালাউদ্দিন মাঝপথে সরে দাঁড়ালে কোচ হিসেবে হাল ধরেন অমলেশ ও আশরাফ। ১৯৯০-১৯৯৫ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রেরও কোচ ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে পুনরায় আবাহনীর কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে পান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
×