ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির

পাবনায় ৭৮৪টি চালকল কালোতালিকাভুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ অক্টোবর ২০১৭

পাবনায় ৭৮৪টি চালকল কালোতালিকাভুক্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২ অক্টোবর ॥ সরকারী গুদামে চাল সরবরাহ না করায় জেলার ৭৮৪টি চালকলকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আগামী দুই বছর এসব চালকল মালিকের সঙ্গে সরকার কোন চুক্তি করবে না। এদিকে মোটা চাল সরবরাহের জন্য বিখ্যাত জেলার জয়নগর চালের মোকাম এখন ক্রেতাশূন্য। টানা লোকসানে বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ চাতাল কল। দফায় দফায় চালের মূল্যবৃদ্ধি এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই মোকামের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। পাবনায় ধান সংগ্রহের অসম প্রতিযোগিতায় অটো রাইসমিলের চাল উৎপাদনেও দেখা দিয়েছে সঙ্কট। বেচাকেনা না থাকায় স্থবির চালের মোকামগুলো। পরিস্থিতি উত্তরণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোকামগুলোতে প্রকারভেদে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা। নজিরবিহীন এ মূল্যবৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। সরকারী নজরদারি ও চাপে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমলেও স্বস্তি ফেরেনি ক্রেতা সাধারণের মনে। পাবনার বিসিক ও জয়নগরের বিভিন্ন চালের মোকাম সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, মোকামে দুই সপ্তাহ থেকে চালের দাম উর্ধমুখী। মিনিকেট চালপ্রতি বস্তা (৮৪ কেজি) চার হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা। এই মোকামে মোটা চাল বিআর-২৮ এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা বর্তমানে ৪ হাজার ২০ টাকা, বিআর-২৯ এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার ১০০ টাকা হলেও বর্তমানে ৩ হাজার ৭০০ টাকা, বাসমতি এক সপ্তাহ আগে ৪ হাজার ৪০০ টাকা কিন্তু বর্তমানে প্রতি বস্তা ৫ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য চালের দামও বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। জেলায় চালের মোকামে ছোট বড় মিলিয়ে চাতাল কলের সংখ্যা ৬৫০টি। ধান সঙ্কটে চলতি মৌসুমে সচল রয়েছে মাত্র ৮০টি। সরকারী গুদামে মজুদ নেই, সেই সুযোগে চালের দাম বাড়িয়েছে অটোমিল মালিকরা। ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বিভিন্ন হাটবাজার ও মোকামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এনে এখানে চাল তৈরি করেন। এখান থেকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ২০ জেলায় নিয়মিত চাল পাঠানো হয়। এসব জেলার ব্যাপারী ও মহাজনরা এসেও এখান থেকে পাইকারি দামে চাল কেনেন। চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি ফজলুর রহমান মালিথা জানান, বর্তমানে ধানের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। এখানকার ব্যবসায়ীরা উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন ধানের মোকাম থেকে বেশি দামে ধান কিনছেন। মোকামে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে ৩৭.৫০ কেজি (বাংলা এক মণ) ধান কিনতে হচ্ছে। বাজারে এলসির চাল থাকার পরেও চালের দাম বেড়েছে। কারণ ভারত এলসির চালের দামও অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মজিবর রহমান মোল্লা জানান, বর্তমান মৌসুমে ধানের ফলন কম এবং কিছু কিছু এলাকায় বন্যায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অটোমিল মালিকেরা চড়া দামে ধান কেনার কারণে ও মোকামে ধানের প্রচুর চাহিদা থাকায় দাম বেড়ে গেছে। অটোমিলের কারণে ৮০ ভাগ হাসকিন মিলের চাতাল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে বর্তমানে এলসির চাল কম দামে কিনে এনে আমদানিকারকরা সেই চালের মূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে মোকামে ধান নেই অপরদিকে এলসির চালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার ক্রমান্বয়ে অস্থির হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ধান সংগ্রহে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। কখনও গুজব রটিয়ে, কখনবা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে স্বার্থসিদ্ধি করছে তারা। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ অটো রাইসমিল মালিকরাও। পাবনার জয়নগরের খায়রুল রাইস এজেন্সির জেনারেল ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম জানান, কতিপয় বৃহৎ শিল্পগ্রুপ ধান ওঠার মৌসুমে দালালের মাধ্যমে ধানের বাজারের দখল নেয়। আমরা তাদের দৌরাত্ম্যে প্রয়োজনীয় ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। ফলে তারা ধান মজুদ করে চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। আমরা ধানের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখে লোকসান গুনছি। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নিয়মিত মনিটরিংও দাবি করেছেন তিনি। এছাড়া চালের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও ভারতীয় চাল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাফিউল ইসলাম বাজার কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক নজরদারির কথা জানিয়ে বলেন, সরকারী গুদামে চাল সরবরাহ না করায় ইতোমধ্যে ৭৮৪টি চালকলকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আগামী দুই বছর এসব চালকলের সঙ্গে সরকার কোন চুক্তি করবে না। এছাড়া আমরা নিয়মিত চালকলের গুদাম পরিদর্শন করা হচ্ছে। অতিরিক্ত মজুদের কারণে বেশকিছু চালকলকে জরিমানাও করা হয়েছে।
×