ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম টেস্টে লজ্জার হারের পর সরল স্বীকারোক্তি টাইগার অধিনায়কের

টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াতেই সর্বনাশ ॥ মুশফিক

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৩ অক্টোবর ২০১৭

টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াতেই সর্বনাশ ॥ মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সবাই বিস্মিত হয়েছিলেন, এমন একটি ব্যাটিং ট্র্যাকে যেকোন দলের অধিনায়ক চাইবেন ব্যাটিং করতে। কিন্তু পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে যেন ভিমরতি হলো মুশফিকুর রহীমের। টস জেতার পরও স্বাগতিক দলকে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন, নিজে বেছে নিলেন ফিল্ডিং। চমকে যাওয়া কিংবা অবাক হওয়ার ঘটনা এটিই। একেবারে পরিচিত উইকেট, তারপর আবার ব্যাটিং স্বর্গ করে গড়ে তোলা হয়েছে পোচেফস্ট্রুমের উইকেট। মোক্ষম সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফুরফুরে মেজাজে রানের মহোৎসব করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম দিনে মাত্র ১ উইকেট হারানো দলটি যেন অসহায় বাংলাদেশী বোলারদের হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ করে দেয় ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানে ইনিংস ঘোষণার মাধ্যমে। সফরকারীরাও দারুণ জবাব দিয়েছিল ৩২০ রান করে। কিন্তু প্রথম ইনিংসের ১৭৬ রানে পিছিয়ে থাকাটাই হিমালয় ওজনের বোঝা হয়ে যায়। সে কারণেই ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে লজ্জার পরাজয় জুটেছে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে গিয়ে অবশেষে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তটাই ভুল হয়েছে সেটা স্বীকার করে নিলেন মুশফিক। আর উইকেট বুঝতে না পারাটাও বড় কারণ বলে দাবি করেন তিনি। মুশফিক মনে করেন ক্রিকেটারদের মানসিক দৃঢ়তায় যথেষ্ট ঘাটতি ছিল বলেই এমন ব্যাটিং দুর্দশা। ভুলটা অনেক পরেই বুঝতে পারলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু ম্যাচের শুরুতে টস ভাগ্য পরীক্ষায় জেতার পর যে ভুল সেটার খেসারত দিতে হয় টানা ৪/৫ দিন। ধুঁকে ধুঁকে সইতে হয় বেদনা। পোচেফস্ট্রুম টেস্টে তাই হয়েছে। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা রানের পাহাড় গড়ার পর ভাল ব্যাটিং করলেও সেটা পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৭৬ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ করে প্রথম ইনিংস। সেই বিশাল লিডটাই স্বাগতিকদের জন্য বাকি কাজটাকে করে দিয়েছে জলের মতো তরল। একেবারে চাপমুক্ত হয়ে ব্যাটিং করে ৪২৩ রানের বোঝা চাপিয়ে দেয় বাংলাদেশের ওপর। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি আসলেই বুঝিনি উইকেট এমন ফ্লাট হবে। আমি ভেবেছিলাম প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারবে না। সেই ভুলটা আমাদের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। তবে আমাদের বোলাররাও প্রত্যাশা অনুসারে বোলিং করতে পারেনি। শেষবার ১০০ রানের নিচে আমরা কবে অলআউট হয়েছিলাম তা আমার মনে নেই। আমি সত্যিই হতাশ।’ এবার ৯০ রানেই দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ দল যা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে সর্বনি¤œ ইনিংস। আর ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬২ রানে কলম্বো টেস্টে গুটিয়ে যাওয়ার পর প্রথম ১০০ রানের নিচে মুখ থুবড়ে পড়া। এই একই দলের বিপক্ষে আরেকটি ম্যাচ খেলতে হবে। সে বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘ভাল পরিকল্পনা নিয়ে পরের ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই। মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ এই ম্যাচে অনেক ইতিবাচক ছিল। বল হাতেও মুমিনুল দারুণ করেছে। সঙ্গে মুস্তাফিজ ছিল। আমাদের আসলে মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। সবমিলিয়ে যেখানে যেখানে প্রয়োজন উন্নতি করতে হবে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ৪২৪ রানের লক্ষ্য জয় করতে নেমে বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ ও পেসার কাগিসো রাবাদার তোপে ৯০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই তোপটা চতুর্থ দিন শুরু করেছিলেন আরেক পেসার মরনে মরকেল প্রথম ওভারেই দুই উইকেট শিকারের মাধ্যমে। কেশব ৪ ও রাবাদা ৩ উইকেট নেন। মুশফিক বলেন, ‘আমরা নিজেদের যে লড়াকু মনোভাব দেখানোর সামর্থ্য রয়েছে সেটা এখানে দেখাতে পারিনি। আর এটাই আমাদের দ্বিতীয় টেস্টে আরও বড় রকমের মানসিক চাপে রাখবে।’ ৩৩৩ রানের বিশাল পরাজয় বরণের পর এখন সত্যিই নিজেদের ভালভাবে ফিরে পাওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে সফরকারীদের এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
×