ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

যুবনাট্য উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩ অক্টোবর ২০১৭

যুবনাট্য উৎসব

নাটক প্রত্যক্ষভাবে জীবনের কথা বলতে পারে। শিল্পমাধ্যমগুলোর ভেতর তাই নাটক সাধারণ মানুষের অধিক বোধগম্য ও প্রিয়। বাংলাদেশে নাট্যচর্চার ইতিহাস বেশ গৌরবোজ্জ্বল। এক সময়ে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন করে এখানকার নাট্যচর্চাকে সীমিত ও খণ্ডিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। স্বাধীন দেশে নাট্যকর্মীরা আন্দোলন করে সেই কালো আইন বিলোপ করতে সমর্থ হয়েছে। ফলে সারাদেশে নাট্যচর্চা আরও বেগবান হতে পেরেছে। এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নাটক প্রদর্শনের পাশাপাশি আয়োজিত হয়ে থাকে তিন দিন বা সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসব। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এক্ষেত্রে। রাজধানীতেও বিভিন্ন সময়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেসব আয়োজনে দর্শকরাও উপচে পড়েন। নাট্যকর্মীদের ভেতর নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়। বলাবাহুল্য, সংস্কৃতি জাগিয়ে তোলে মানুষের মানবিক বোধকে। উজ্জীবিত করে স্বদেশকে ভালবাসতে। মননে জোগায় কল্যাণের ভাবনা। আর এমন ভাবনায় মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে যুব সমাজকে সংস্কৃতিমনষ্ক করে তোলার প্রয়াসে ষষ্ঠ জাতীয় যুবনাট্য উৎসব শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের আয়োজক পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ)। আয়োজনে সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান এ উৎসবের শিল্পকলা একডেমির জাতীয় নাট্যশালা, স্টুডিও থিয়েটার হল এবং জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে প্রতিদিন একাধিক নাটকের প্রদর্শনী হবে। উৎসবে সারাদেশের ৯ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এবং ১৮ যুব নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। উৎসবে নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি কর্মশালা, ক্লাউন শো, থিয়েটার গেমস, পারফর্মেন্স আর্ট, ইলাস্ট্রেশন আর্ট, সংবাদপত্রের সংবাদভিত্তিক (ইম্প্রোভাইজ) নাটকসহ ১ অক্টোবর ‘যুব সাংস্কৃতিক কংগ্রেস’র আয়োজন করা হয়েছে। আমরা জানি সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের সৃষ্টিশীল নান্দনিক চেতনার আরেক নাম। সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ও উচ্চতা সীমাবদ্ধ হতে পারে না। একমাত্র মানুষই নিয়োজিত হয় সুকুমার বৃত্তিতে। মানুষ যেমন সংস্কৃতির উপাদান সৃজন করে তেমনি সেটি তার জীবনযাপনের অংশ, জীবন উপভোগের সূত্র করে তোলে। সাহিত্য রচিত হয় ব্যক্তির হাতে, কিন্তু সেটি হয়ে ওঠে সমষ্টির সম্পদ। সেই সম্পদ সমষ্টিকে আপ্লুত করে, তাকে শক্তি যোগায়, অনির্বচনীয় আনন্দ প্রদান করে। সাহিত্যের আলোয় যে আলোকিত হয় তার পক্ষে অন্ধকার রচনা করা, কিংবা অন্ধকারের যাত্রী হওয়া অসম্ভব। সঙ্গীত কিংবা নাটক, চিত্রকলা কিংবা চলচ্চিত্রÑ শিল্পের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে আমরা একই কথা উচ্চারণ করতে পারি। একটি সমাজের এসব সাংস্কৃতিক শক্তি সমাজকে সুশীলতা ও সৌরভ দান করে। রক্তপিপাসু অসুস্থ মনের পরম শ্রশ্রƒষা হতে পারে সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ। বিচ্ছিন্ন, বিহ্বল, বিপথগামী তারুণ্যকে জীবনের ইতিবাচক দিকটির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করার জন্য শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগানোর তাই বিকল্প নেই। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে চিরকালের বাতিঘর হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও অনন্য অর্জন। অপশক্তির বিরুদ্ধে হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম মহা একতার শক্তি সুষমা প্রদর্শন করেছিল ওই মহান একাত্তর। আজ আমাদের মাতৃভূমির ওপর যখন মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে তখন মুক্তিযুদ্ধকালীন সংকল্পবদ্ধ সুন্দর সেই মন ও সক্রিয়তা নিয়ে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক শক্তি একযোগে সুপরিকল্পিত উপায়ে কাজ করলে অশুভ শক্তি অপসারিত হবে- এটা সুনিশ্চিত। আমরা যুব নাট্যোৎসবের সাফল্য কামনা করি। এই উৎসব নাট্যপ্রেমী যুবশক্তিকে একই সঙ্গে আনন্দ ও দেশপ্রেমের প্রেরণা যোগাক- সেটাই প্রত্যাশা।
×