স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৫ শতাংশ এখনও ব্যাংকিং ও বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবার বাইরে রয়েছে। এদের মধ্যে দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দা ও শিশু শ্রমিক রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাইলে এসব জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে হবে, তাদের দিয়ে সঞ্চয় করাতে হবে। এ জন্য ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব মানুষের কথা মাথায় রেখে, তাদের সুবিধা অনুযায়ী নীতি নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বুধবার এক জাতীয় সম্মেলনে গবেষণার বরাত দিয়ে এমন তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে আইএনএম ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অব ভালনারেবল সেগমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল করিম, জাপান ভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ভিজিটিং সিনিয়র এডভাইজার অধ্যাপক সুজি কাজুটো, পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জসিম উদ্দীন ও মোঃ ফজলুল কাদের বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি। দিনব্যাপী সেমিনারে তিনটি গবেষণা পত্র উপস্থাপন করা হয়। জাইকার অর্থায়নে এসব গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, কোন ধরনের অনুমান করা যায় না বিধায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির প্রভাবটা বিস্তর হয়। এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামীণ অর্থনীতি। ইন্স্যুরেন্স এ ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলার একটা উপায় হতে পারে। তাই গ্রামীণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গঠন করতে হবে। দেশের অর্থনীতিতে এখনও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের গুরুত্ব রয়ে গেছে বলেও তিনি মনে করেন। সেমিনারে দেশের গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তকরণে সরকারী-বেসকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি। তিনি বলেন, দেশের মাত্র ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে রয়েছে। গ্রামীণ ও হাওর এলাকার দুর্যোগ পীড়িত মানুষরা এবং শ্রমজীবী ও পথশিশুরা ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক সুবিধার বাইরে রয়েছে। কী ভাবে এসব মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেয়া যায়- তা ভেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা জরুরী। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাইলে এসব জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের দিয়ে সঞ্চয় করাতে হবে। এজন্য ব্যাংক, এনজিও ও সরকারী সব প্রতিষ্ঠানকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না, আমাদের তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
আইএনএমের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম. এ. বাকী খলীলী গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, চাহিদা অনুসারে ক্ষুদ্র ঋণ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছে সিংহভাগ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা। ঋণের পরিমাণ বাড়ালে সঞ্চয়, আয় উপার্জনসহ অর্থনৈতিক উন্নতি দ্রুত হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতারা জীবন বীমা, সম্পদ বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে সেবা নিতে আগ্রহী। সব সুবিধা পেলে ৯০ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা আরও বেশি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে। গবেষণার বরাতে তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতা সম্পদ বীমা ও ৯৮ শতাংশ গ্রহীতা স্বাস্থ্য বীমা করতে আগ্রহী। দক্ষিণাঞ্চলের দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর ও আইলাতে আর্থিক ক্ষতির শ্রেণী বিভাগ করে তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই বসতবাড়ির ক্ষতি। তবে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কিছু মানুষ ক্ষতির কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারলেও, যারা ক্ষুদ্র ঋণ নেননি তাদের বেশিরভাগই ফিরতে পারেনি। আইএনএমের গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহ ঋণ ও সঞ্চয়ের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে যে সব পরিবারে ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রকল্প আছে, তাদের গড় আয় অন্যদের তুলনায় বেশি। তাদের জীবনযাত্রার মান অপেক্ষাকৃত উন্নত।