অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য কিছুটা চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে নাহি এ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির নগদ অর্থ প্রবাহের ক্ষেত্রে কিছুটা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানিটি। কারণ আইপিও আবেদনের জন্য কোম্পানির জমা দেয়া প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত নগদ অর্থের হিসাবের কোন সত্যতা নাই। এছাড়াও আছে বিভিন্ন গরমিল। এর মধ্য দিয়েই আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে আইপিওতে চাঁদা সংগ্রহ করার অনুমোদন পেয়েছে নাহি এ্যালুমিনিয়াম।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুনে কোম্পানিটির ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা হাতে ছিল বলে উল্লেখ করলেও তার সত্যতা নাই। নিরীক্ষক কোম্পানির ইনভেন্টরির সত্যতা যাছাই করলেও নগদ টাকার ক্ষেত্রে করেনি। এক্ষেত্রে নিরীক্ষক সময়ের অভাবে নগদ টাকা গণনা করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। যাতে কোম্পানির গণনা করা তথ্যকে বিশ্বাস করে নিয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে সচেতন হবেন বলে জানিয়েছেন।
কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) জুলাস বিশ্বাস বলেন, সময়ের অভাবে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের ওই সময়ে নিরীক্ষক নগদ টাকা গণনা করতে পারেননি, এটা সত্যি। তখন আমাদের দেয়া তথ্য নিরীক্ষক মেনে নিয়েছে।
পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ অনুযায়ী, আইপিও অনুমোদন পেতে অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ থাকতে হয়। যে কারণে এনার্জি প্যাক সংশোধিত ২০১৫ পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ী আইপিও অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ কোম্পানিটির অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সুদজনিত অর্থ প্রদানকে অপারেটিং ক্যাটাগরিতে দেখিয়েছে। অন্যথায় কোন সমস্যা ছিল না। এক্ষেত্রে নাহি এ্যালুমিনিয়ামও সুদজনিত অর্থ প্রদানকে অপারেটিং ক্যাশ ফ্লোতে দেখালে, আইপিও অনুমোদন পেত না। কারণ কোম্পানিটির অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ হয়ে যেত। তবে হিসাব মান অনুযায়ী সুদজনিত অর্থ প্রদান নগদ প্রবাহ হিসাবের অপারেটিং ও ফাইন্যান্সিং ক্যাটাগরির যেকোন একটিতে হিসাব করা যায়। তবে অপারেটিংএ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে কোম্পানির সচিব জহরুল ইসলাম শেখ বলেন, সুদজনিত অর্থ প্রদানকে অপারেটিং ক্যাটাগরিতে দেখালে ক্যাশ ফ্লো অবশ্য নেগেটিভ হতো। সেই ক্ষেত্রে আইপিও অনুমোদন নিয়ে বিপাকে পড়তাম ঠিক। কিন্তু আমরা আইপিও অনুমোদন পেতে নয় শুরু থেকেই সুদজনিত অর্থ প্রদানকে ফাইন্যান্সিং ক্যাটাগরিতে করি।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ঋণ নিয়েছে নাহি এ্যালুমিনিয়াম। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রসপেক্টাসের নোট ১১, ১৪ ও ২৩ এ বনানী শাখা উল্লেখ করেছে। এমতাবস্থায় কোম্পানির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রসপেক্টাসের নোট ২.১৩.২ এ সিস্টার কনসার্ন আছে ও ৭১ পৃষ্ঠায় নাই বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
কোম্পানিটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫ লাখ স্কয়ার ফিট। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার স্কয়ার ফিট বা ৫১ শতাংশ। এরমধ্যে আবার ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেশিনারিজ কিনবে বলে টাকা উত্তোলন করতে যাচ্ছে নাহি। বিদ্যমান ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার না করতেই টাকা উত্তোলনকে যথার্থ বলে মনে করছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। এতে বিনিয়োগ থেকে বিনিয়োগকারীদের সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
১৯৫ পৃষ্ঠায় শ্রম ফান্ড প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও নগদ প্রবাহ হিসাবে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। যা কোনভাবেই সম্ভব না। অন্যদিকে ১৮৮ পৃষ্ঠায়, নোট ২.১৪ এর ‘বি’তে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী, ফান্ড গঠন ও বিতরণ করা হয়। কিন্তু ২২৭ পৃষ্ঠায় ২নংয়ে ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইন অনুযায়ী ফান্ড ট্রান্সফার করা হয়েছে বলে উল্লেখ। এ হিসাবে শ্রম ফান্ড নিয়ে নাহি কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
নাহি এ্যালুমিনিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নোমান হাওলাদার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস ও বিবিএস কেবলসেও একই পদে আছেন এবং তিনি সব কটির উদ্যোক্তা। এরই মধ্যে তালিকাভুক্তির পরে আবু নোমানের বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস ৩ বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে প্রতিবারই আগের বছরের তুলনায় লভ্যাংশের পরিমাণ কমেছে। ২০১৪ সালের ২৫ শতাংশ কমে ২০১৫ সালে হয় ২০ শতাংশ। যা ২০১৬ সালে আরও কমে হয়েছে ১৫ শতাংশ।
কোম্পানির সচিব বলেন, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ঋণ নিয়েছে নাহি এ্যালুমিনিয়াম। কিন্তু ভুলক্রমে সেটা প্রসপেক্টাসে নোট ১১, ১৪ ও ২৩ এ বনানী শাখা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা জাস্ট প্রিন্টিং মিসটেক। আর সিস্টার কনসার্ন নিয়েও মিসটেক হয়েছে বলে জানান তিনি।