ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড় মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করছে না

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বড় মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন কিছু অসাধু চাল ব্যবসায়ী। মৌসুমের শুরুতেই কম দামে ধান ও চাল কিনে গোডাউন ভর্তি করেন আড়তদার ও মজুদদাররা। পরে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে ‘লালে লাল’ হচ্ছেন তারা। এভাবে বাড়ছে চালের দাম এবং এতে বেকায়দায় পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর বাইরের ব্যবসায়ী বা চাতাল মালিকরা বলছেন, পর্যাপ্ত চাল আছে দেশে। কিন্তু সেগুলো মজুদ করে রেখেছেন কতিপয় চাতাল মালিকরা। যাদের কাজ হচ্ছে, চাল মজুদ করে অসৎ বাণিজ্য করা। একইসঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন রাজধানীসহ শহরাঞ্চলের কিছু অসাধু আড়তদার। যারা চাল মজুদ রেখে নিজেরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুরের চাতাল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, সারাদেশের কয়েক হাজার চাতাল ব্যবসায়ীর কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি। প্রচুর চাল মজুদ আছে। কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাদের কাছে হাজার টন চালও রয়েছে। কিন্তু ছাড়ছেন না, আরও চড়া দামের আশায়। তিনি বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিকহারে বাড়ে গত এক মাসে। এখন বাজারে ধানের দামও বেশি। এক মাস ধরে সবাই মিলে সিন্ডিকেট না করলে চালের দাম এভাবে বাড়ত না। সরকার যে অভিযান পরিচালনা করার চিন্তা করছে, এটা ভাল। কারণ দলীয় ব্যক্তি বা প্রভাবশালী বিবেচনা না করে শক্তভাবে এ অভিযান পরিচালনা করলে চালের দাম দু’দিনেই কমে যাবে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে রবিবার থেকে দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে ওএমএসের। তার ওপর আবার আতপ চাল। দাম বেড়েছে রাজধানীর বাইরেও। এর মানে শহরে বা গ্রামে কেউই স্বস্তিতে নেই। এ বিষয়ে শেরপুরের আরেক ব্যবসায়ী মোঃ আবুশামা বলেন, গ্রামাঞ্চল বা শহরে সব জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালের। চালের কোন সঙ্কট নেই। কৃত্রিমভাবে বড় ব্যবসায়ীরা সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন। কেননা ঈদের আগেও চালের দাম এতটা বাড়েনি। আবুশামা জানান, ঈদের আগে যে মোটা চালেন মণ ১৪শ টাকায় বিক্রি হয়েছে, ঈদের পরে তার দাম হয়েছে ১৮-১৯শ’ টাকা। নাজিরশাইলের মণ ছিল ২২শ’ টাকা, এখন ২৪শ’ টাকা হয়েছে। আটাশ চাল বিক্রি হয়েছে ২৭শ’ টাকা। এখন সেটি দুই হাজার টাকার নিচে বিক্রি করছেন না মিল মালিকরা। ২-১ সপ্তাহে এভাবে চালের সঙ্কট কিভাবে হয়? রাজধানীর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও এসব বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছিল ৪১-৪২ টাকায়। একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য চালের দামও প্রায় একই হারে বেড়েছে বলে জানান এ বাজারের ব্যবসায়ীরা। বাজারে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৫২-৫৩ টাকা। একইভাবে এক সপ্তাহ আগে ৫৮-৬০ টাকা কেজি দরের নাজিরশাইল চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়। এছাড়া ৪৬-৪৭ টাকার বিআর-২৮ চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে দারিদ্র্যসীমার নিচে বা কাছাকাছি থাকা প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। জানতে চাইলে রাজধানীর বাদামতলী-বাবুবাজারের চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি রফিকুল ইসলাম বলেন, তিন-চারদিন ধরে বড় চালকল মালিকরা সরবরাহ আদেশ নিচ্ছেন না। তবে ছোট মিল মালিকরা এখনও চাল সরবরাহ দিচ্ছেন। বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের আয়ের ৬০ শতাংশ চলে যায় খাবার সংগ্রহে। পণ্যের দাম বাড়লে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসবে। এ অবস্থায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে দেশের বাজারে চালের দামের অস্থিরতার মধ্যেই ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে চাল রফতানি করতে ভারত সরকার অপারগতা প্রকাশ করেছে। দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। এ ঘোষণার ফলে আরেক দফায় অরাজকতা নেমে আসে দেশের চালের বাজারে। এ বিষয়ে কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল। এ পণ্যের দাম বাড়লে দেশের প্রতিটি মানুষকে ভুগতে হয়। কয়েক মাস ধরে লাগাতার চালের দাম বাড়ছে। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
×