ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আফসোসের হার বাংলাদেশের মেয়েদের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আফসোসের হার বাংলাদেশের মেয়েদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হাতছানি ছিল আগামী বছর অনুর্ধ-১৭ মহিলা বিশ্বকাপে খেলার। সে লক্ষ্য নিয়েই এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে থাইল্যান্ডে যায় বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা। কিন্তু ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের তিনটি ম্যাচেই হেরে সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে তিনটি ম্যাচে হারলেও শেষটা খারাপ হয়নি কৃঞ্চা রানীর দলের। প্রথম ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার কাছে ৯-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পরের ম্যাচেই আরেক পরাশক্তি জাপানের বিরুদ্ধে নিজেদের ফিরে পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই ম্যাচে কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল হার মানে ৩-০ গোলে। রবিবার নিজেদের শেষ ম্যাচেও দারুণ খেলেছে মাহমুদা, সানজিদা, শামসুন্নাহাররা। থাইল্যান্ডের চনবুরির ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্যাল এডুকেশন ক্যাম্পাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে লড়াই করে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২-৩ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলার বাঘিনীরা। ১০ জনের দল নিয়েও শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে উপহার দিয়েছে দাপুটে ফুটবল। জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত হারের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। প্রথমে পিছিয়ে পড়লেও পরে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ। এরপর এগিয়েও যায়। অগ্রগামিতা বাংলাদেশ ধরে রাখে ৭৭ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার লালকার্ড দেখায় যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে যায়। শেষদিকে দুটি কর্নার থেকে দুই গোল হজম করে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই কৃষ্ণা-সানজিদাদের খেলায় ছিল প্রত্যয়ের ছাপ। বলের নিয়ন্ত্রণে প্রায় সমানে সমান ছিল বাংলাদেশ। সপ্তম মিনিটে গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় ছোটনের শিষ্যরা। বাঁপ্রান্ত থেকে লউরা এমিলি হিউজের আড়াআড়ি করে বাড়নো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জুলিয়া ভিগনেস ডি বক্সে ঢুকে পড়েন। দ্রুত দৌড়ে এসে সøাইড করে বিপদমুক্ত করেন মাহমুদা আক্তার। কিন্তু পরের মিনিটেই গোলরক্ষকের পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সুযোগ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেন লউরা (১-০)। ১১ মিনিটে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে ডি বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়লেও দুর্বল শটে হতাশ করেন সিরাত জাহান স্বপ্না। সাত মিনিট পর ডানদিক থেকে মারিয়ার নেয়া বাঁ পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৩৩ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বলের নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে পড়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার সরাসরি লালকার্ড দেখেন। দলের সেরা তারকা মাঠ থেকে বিদায় নিলেও মুষড়ে পড়েনি বাংলাদেশ। বরং স্পট কিক থেকে ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান শামসুন্নাহার (১-১)। ডি বক্সের মধ্যে স্বপ্নাকে সেসিলিজা ম্যাটিক ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। বিরতির পর আরও উজ্জীবিত ফুটবল উপহার দিতে থাকেন সানজিদা, শামসুন্নাহাররা। ফলস্বরূপ ৫১ মিনিটে গোছালো আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ডি বক্সে ঢুকে পড়া স্বপ্নার শট গোলরক্ষক ফেরানোর পর বাঁদিক থেকে মনিকা চাকমার নিখুঁত কোনাকুনি শট জাল খুঁজে পায় (২-১)। একটু পর স্বপ্নার কাট ব্যাক থেকে পাওয়া সুযোগ মৌসুমী কাজে লাগাতে না পারলে ব্যবধান বাড়েনি। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ফরোয়ার্ড স্বপ্নাকে তুলে নিয়ে মিডফিল্ডার রাজিয়াকে নামান কোচ। একটু পর প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের জোরালো শট পাঞ্চ করে ফেরান মাহমুদা। ৭৫ মিনিটে মিশরাত জাহান মৌসুমীর জায়গায় আরেক মিডফিল্ডার রতœা জাহান নামেন। সমতায় ফিরতে শেষদিকে মরিয়া হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। পোস্টের নিচে মাহমুদাও ছিলেন দারুণ। কিন্তু শারীরিক উচ্চতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুটি কর্নার থেকেই গোল তুলে নেয় সকারু মেয়েরা। ৭৮ মিনিটে কাইরা রোয়েস্টবাকেনের দূরপাল্লার শট শেষ মুহূর্তে ফিস্ট করে ফেরান গোলরক্ষক মাহমুদা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এই ফরোয়ার্ডেরই নেয়া কর্নার বাঁক খেয়ে জালে প্রবেশ করে (২-২)। ৮৩ মিনিটে সোফিয়ার শট ফিস্ট করে ফেরান মাহমুদা। কিন্তু কর্নার থেকে আবারও গোল হজম করে বাংলাদেশ। সতীর্থের হেডের পর গোলমুখে থাকা সোফিয়া সাকালিস লক্ষ্যভেদ করেন (২-৩)। ম্যাচ শেষে দুর্ভাগ্যের কথাই বলেছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। সেই সঙ্গে তিনি উচ্ছ্বসিত মেয়েদের পারফর্মেন্সে। ছোটন বলেন, এ ম্যাচেই বাংলাদেশ নিজেদের আসল ফুটবলটা খেলেছে। কৃষ্ণা থাকলে আমরা জিততে পারতাম। আমাদের দল দুর্দান্ত খেলেছে। ১০ জন নিয়ে খেললেও মনে হয়নি খেলোয়াড় কম ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য জিততে পারলাম না।
×