ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়তি চাপ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়তি চাপ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য চাহিদা মেটাতে চাপ পড়েছে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারগুলোতে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ও আশ্রয়দানের সরকারী সিদ্ধান্তের পর কক্সবাজার অঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়। রোহিঙ্গার সংখ্যা ক্রমাগতহারে বাড়তে থাকায় এখন এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোতেও। বিশেষ করে চালের দাম আগে থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আসতে থাকায় বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার থেকে। কারণ চট্টগ্রাম থেকেই সরবরাহ হচ্ছে এসব পণ্য। প্রতিদিনই ট্রাকের সারি কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফ অভিমুখে। মানবিক দিক বিবেচনায় দুর্দশাগ্রস্ত এ মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতি থাকলেও সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সঙ্কট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের স্রোতের মতো আগমন শুরু হয় গত ২৫ আগস্ট রাতের পর থেকে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলায় এখন স্থানীয়দের চেয়ে ওরা কয়েকগুণ বেশি। সেখানে খুব স্বাভাবিকভাবেই পণ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজসহ সব পণ্যের মূল্য উর্ধমুখী। টাকা দিয়েও কাঁচা তরকারি মিলছে না বাজারে। এ খাদ্যের যোগান যাচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। ফলে খাতুনগঞ্জসহ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার এমনকি খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে গেছে। শনিবার বাজার যাচাই করে দেখা যায়, সবচেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের মোটা চালের মূল্যও ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। দোকানভেদে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা পর্যন্ত। খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট ৬৫ টাকা, পাইজাম ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, মসুর ডাল মোটা ৮০ টাকা ও চিকন ১২০ টাকা, আটা প্যাকেট ৩২ টাকা এবং খোলা প্রতি কেজি ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা তরকারির বাজারও বেশ চড়া। বেড়েছে বোতলজাত পানির দাম। পানির বোতল বিক্রি হচ্ছে প্রাপ্যতা অনুযায়ী। এ মূল্য পরিস্থিতি চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায়। কক্সবাজারের ওই দুই উপজেলার চিত্র আরও অস্থিতিশীল। সেখানে ভোগ্যপণ্য অনেকটা দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে ট্রাকের সারি দীর্ঘ হয়েছে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ফসলহানি হওয়ায় এসব পণ্যের মূল্য এমনিতেই বাড়তি ছিল। তার ওপরে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার চাপ। ওই এলাকায় সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে, যেগুলো কিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম এবং বিভিন্ন জেলা থেকে। ফলে পুরো দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারই প্রভাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যের পাইকারি দোকানে যোগাযোগ করে দেখা যায়, হাঁড়ি-পাতিল, তরকারি কাটার বঁটিসহ ধারালো বিভিন্ন সরঞ্জাম, ঝাড়ু, বালতি, প্লেট, কলসি, জগ, গ্লাস, পলিথিনসহ নিত্যব্যবহার্য তৈজসপত্রের মজুদে টান পড়েছে। চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি এক লাখ কলসির অর্ডার পেয়েছেন, যেগুলো যাবে টেকনাফ ও উখিয়ায়। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুব আলম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, হঠাৎ অতিরিক্ত চার লাখ মানুষের চাপ পড়লে বাজারে প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। যারা এসেছে তাদের এখনও নির্দিষ্ট কোন সিস্টেম বা ব্যবস্থাপনায় আনা যায়নি। ত্রাণ হিসাবে ভোগ্যপণ্য বিতরণে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে যে যার মতো করে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণ করায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এটি অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তবে প্রাথমিক ধাক্কায় যে বিরূপতার সৃষ্টি হয়েছে তা একপর্যায়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে সরকার যেহেতু কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে, সেহেতু এ রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এমনিতেই দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যার কারণে আমাদের খাদ্যভা-ারে চাপ পড়েছিল। মূল্যও ছিল কিছুটা বাড়তি। এর মধ্যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এসে পড়ায় চালসহ নিত্যপণ্যের মূল্য আরও একটু বেড়েছে। তিনিও মনে করেন, আপদকালীন এ সময়টা কেটে গেলে মূল্য পরিস্থিতি আবারও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
×