ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিচারক সঙ্কট

মুখ থুবড়ে পড়েছে বিচার ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মুখ থুবড়ে পড়েছে বিচার ব্যবস্থা

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জেলার সাধারণ মানুষের বিচার পেতে দীর্ঘদিনের অসুবিধা লাঘবে বর্তমান সরকার এগিয়ে এসেছে। প্রায় ২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল আকারের সর্বাধুনিক (বহুতল) চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্রেট আদালত ভবন। বিশাল এ ভবনে রয়েছে একাধিক কোর্ট। কিন্তু বিচারকের অভাবে কোর্ট ভবনের একাধিক রুম খা খা করছে। বিচারক সঙ্কটের কারণে কাক্সিক্ষত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জনগণের দুর্ভোগ বিশাল ভবন নির্মাণের পরেও একটুও কমেনি। সূত্র বলছে, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অনুমোদিত বিচারক নয়জন। বর্তমানে কাজ করছেন মাত্র চারজন। এই চারজন বিচারককে সামাল দিতে হচ্ছে নয়টি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। জনা গেছে, চারজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। বিচারক সঙ্কটের কারণে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একই কার্যদিবসে দুটি আদালতের বিচারিক কাজ পরিচালনা করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে বিচারপ্রার্থীদের ছোটাছুটি করতে হয় এক আদালত থেকে আরেক আদালতে। অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিজ আদালতের কাজ সামাল দিয়ে আমলী আদালত ‘ক’ অঞ্চল পরিচালনা করতে হয়। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিজ আদালত সামাল দিয়ে দৌড়াতে হয় প্রথম ও দ্বিতীয় আমলী আদালত ‘গ’ ও ‘খ’-এ। একই কার্যদিবসে পাঁচটি আদালতের বিচারিক কাজ পরিচালনায় অনেকটাই টায়ার্ড হয়ে পড়েন বিচারক। পাশাপাশি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয়, চতুর্থ; একই সঙ্গে আমলী আদালত ‘খ’ অঞ্চলেও বিচারিক কাজ পরিচালনা করেন। ফলে এসব বিচারকের অতিরিক্ত কাজের চাপে বড় ধরনের ভুল কিংবা ঘাটতি হলে বিচারপ্রার্থীরা হয়তবা বঞ্চিত হতে পারেন তাদের আকাক্সিক্ষত বিচার হতে। একই চিত্র ফৌজদারি আদালতের। সঙ্কট চলছে দেওয়ানি আদালতেও। দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনুমোদিত বিচারকের ঘাটতি পূরণ হয়নি কোন না কোন আদালতে। কার্যদিবসে বিচারক শূন্যতা লেগেই আছে। বর্তমানে দেওয়ানি সদর আদালতে কোন বিচারক নেই। জুলাই মাসে সদর আদালতের বিচারক বদলি হওয়ার পর আজও তা পূরণ করা হয়নি। গোমস্তাপুর আদালতের বিচারক মে মাস থেকে অনুপস্থিত। তিনি ছয় মাসের প্রশিক্ষণে থাকায় এ শূন্যতা। বেশ কিছুদিন বিচারক শূন্যতা থাকার পর ভোলাহাট আদালতে নতুন বিচারক এসেছেন। একই ভাবে নাচোল আদালতেও নতুন বিচারক এসেছেন। শিবগঞ্জ আদালতের বিচারিক কাজ নিজ উপজেলা আদালত সামাল দিয়ে সদর ও গোমস্তাপুর আদালত দেখভাল করছে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলা শিবগঞ্জ। জনসংখ্যার অনুপাতে মামলার সংখ্যাও বেশি। বিধায় একজন বিচারককে শিবগঞ্জ আদালত সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে আরও দুটি থানার আদালতের বিচার কাজ সামাল দিতে গিয়ে এ তিন থানার মানুষ দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ সময় একটা বড় ধরনের ফ্যাক্টর। তাছাড়া দেওয়ানি মামলায় শুনতে হয় বেশি আবার লিখতে বা নোট নিতে হয় অনেক বেশি। বিধায় রায় লেখার সময় অনেকটাই সুস্থ মাথায় থাকতে হয় বিচারককে। কিন্তু তিনটি বিশাল আকারের আদালত সামাল দিয়ে কতটুকু মাথা ঠা-া রাখা যায় তা এখন বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি দেওয়ানি মামলা পরিচালনায় জিপির একটা বড় ভূমিকা থাকে। বিশেষ করে সরকারী মামলা পরিচালনায় জিপির ভূমিকা থাকে অনেক বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জিপিবিহীনভাবে চলছে আদালত। জিপির দায়িত্ব পালন করছেন একজন সিনিয়র সহকারী জিপি, যার পক্ষে সরকারী প্রায় পাঁচ হাজার ও বেসরকারী কয়েক লাখ মামলার সঠিক মতামত দেয়া বা লিগ্যাল এ্যাডভাইস করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে একদিকে সরকার, অপরদিকে বেসরকারী ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিধায় অবিলম্বে জিপি নিয়োগ দেয়া না হলে বিচারকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে রায় দেয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলা আইনজীবী সিমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম জানান, বিচারক সঙ্কটের কারণে হতাশাগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের কোন ধরনের বিকল্প সান্ত¡না দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কথামালা দিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মক্কেলদের বোঝাতে।
×