ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন রূপে নতুন ফেলুদা

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নতুন রূপে নতুন ফেলুদা

চার মিনারের ধোঁয়ায় রহস্যভেদ। সিগারেটের ছাই মাটিতে পড়ার আগেই সব সমাধান। মগজ যেন অস্ত্র। পর পর এই ব্যাপারগুলোকে সাজিয়ে দিলে যা বেরিয়ে পড়ে তা হলো প্রদোষ মিত্র। মানে আমাদের অতি পরিচিত ফেলুদা। আর সঙ্গে অবশ্যই তোপসে! যার হাত ধরেই একের পর এক ফেলুদা সিরিজের গল্পের মধ্যে বাঙালীর ঢুকে যাওয়া। সেই গল্পই এবার এসেছে ওয়েব সিরিজে। ঠিক তাই! ফেলুদা এবার বাংলাদেশে! সত্যিই তাই। তবে সত্যজিৎ রায়ের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শশী কাপুর কিংবা সন্দ্বীপ রায়ের সব্যসাচী চক্রবর্তীর মুখ নিয়ে নয়; বাংলাদেশে ফেলুদা হয়ে এসেছেন গঙ্গা-পদ্মা পাড়ের জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী ও আবির চট্টোপাধ্যায়কে এতদিন ফেলুদার চরিত্রে দেখে এসেছে বাঙালী। এবার ঈদ-উল-আযহায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয় ‘শেয়াল দেবতা রহস্য’ ও ‘ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা’। টেলিভিশনে সম্প্রচারের পরপরই এবার দর্শক এই সিরিজটি ওয়েব সিরিজ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ‘বায়োস্কোপ’ এবং বাংলাদেশের বাইরে ‘আড্ডা টাইমস’-এ দেখতে পাবেন। সিরিজটিতে ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। তপসে চরিত্রে থাকছেন রিদ্ধি সেন। এবার স্বাদ বদলানোর সময় এসেছে। তোপসের ভূমিকায় যে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে দর্শকরা দেখা গেছে সেই তাকেই দেখা গিয়েছে প্রদোষচন্দ্র মিত্তিরের ভূমিকায়। প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের সন্দেশ পত্রিকায় ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ফেলুদার প্রধান সহকারী তাঁর খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে ও লেখক লালমোহন গাঙ্গুলি (ছদ্মনাম জটায়ু)। সত্যজিৎ রায় ফেলুদার সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ উপন্যাস দুটিকে চলচ্চিত্রায়িত করেন। এই দুই ছবিতে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বর্তমানে সত্যজিতের পুত্র সন্দ্বীপ রায় ফেলুদার গল্প ও উপন্যাস নিয়ে টেলিভিশন ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ফেলুদার রহস্য খুব জটিল। তপেশরঞ্জন মিত্র ফেলুদার খুড়তুতো ভাই। ফেলুদার দেওয়া তোপসে নামেই অধিক পরিচিত। এই চরিত্রটি আর্থার কনান ডয়েলের জন ওয়াটসন চরিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত। তোপসে ফেলুদার সর্বক্ষণের সঙ্গী। ফেলুদার প্রায় সব অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা সে লিপিবদ্ধ করে। তোপসের বাবা সম্পর্কে ফেলুদার কাকা। ফেলুদা তার কাকার পরিবারের সঙ্গেই ২১, রজনী সেন রোড, কলকাতা-৭০০০২৯ [৩]-র বাড়িতে থাকে। দক্ষিণ কলকাতায় রজনী সেন রোড থাকলেও ২১ নম্বর বাড়িটি অস্তিত্বহীন। তোপসে চরিত্রে নানা সময়ে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ ফেলুদা চলচ্চিত্রে তোপসের ভূমিকা পালন করেছেন সাহেব ভট্টাচার্য। লালমোহন গাঙ্গুলি বা লালমোহন বাবু ফেলুদার বন্ধু। ইনি জটায়ু ছদ্মনামে রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখেন। লালমোহন বাবু বাংলায় রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজের একজন জনপ্রিয় লেখক এবং তার নিজের মতে সারা ভারতে তার অনুগামীরা ছড়িয়ে আছে। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলোর প্রধান চরিত্র সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট গোয়েন্দা প্রখর রুদ্র। তাঁর অবিশ্বাস্য গল্পগুলো বেস্টসেলার হলেও বইগুলোতে মাঝে মাঝে খুবই সাধারণ ভুল থাকে, যেগুলো ফেলুদাকে শুধরে দিতে হয়। লালমোহন বাবুর একটি ‘মাদ্রাজী সবুজ’ এ্যাম্বাসেডর গাড়ি আছে যা ফেলুদার অনেক অভিযানের নির্ভরযোগ্য বাহন। সোনার কেল্লা গল্পে ফেলুদা ও তোপসের যোধপুর গমনকালে কানপুরে ট্রেনে প্রথম জটায়ু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে। সন্তোষ দত্ত সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে জটায়ুর ভূমিকা পালন করেন। সত্যজিৎ রায় প্রথম ফেলুদা ছবির পর জটায়ু চরিত্রে রদবদল ঘটিয়ে তাকে অনেকটা সন্তোষ দত্তের মতই গড়ে তোলেন। রবি ঘোষ ও বিভু ভট্টাচার্য পরবর্তীকালে এই চরিত্রে অভিনয় করেন। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি একাধারে একজন সফল অভিনেতা এবং পরিচালক। বাংলা টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্র, উভয় স্থানেই তিনি আপন প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। বিদ্যা বালানের বিপরীতে কাহানি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি একজন বিখ্যাত অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি একই অভিনেত্রীর বিপরীতে ভাল থেকো ছবিতেও অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের ছোট পর্দার দর্শকদের সামনে ফেলুদা হয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত পরমব্রত। সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাতকারে বললেন, ‘ফেলুদা যে কোন বাঙালীর কাছে স্বপ্নের চরিত্র। আমার কাছেও তাই। বাংলাদেশের দর্শকদের সামনে ফেলুদা হয়ে যেতে পারছি, এটাই ভীষণভাবেই আমাকে নাড়া দিচ্ছে।’ সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি ফেলুদা সিরিজের স্বত্বাধিকার তাঁর পুত্র সন্দ্বীপ রায়। সম্প্রতি বাংলাদেশের টেলিভিশন দশর্কদের জন্য ফেলুদা গল্পের মেগাসিরিজ তৈরির জন্য সন্দ্বীপ রায় ফেলুদা গল্পের স্বত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে ফেলুদার ধারাবাহিকটি প্রযোজনা করছে বাংলাদেশের ক্যান্ডি প্রোডাকসন্স লিমিটেডের জিয়া উদ্দিন আদিল ও শাহরিয়ার শাকিল এবং সংস্থার ক্রিয়েটিভ হেড গাউসুল আলম শাওন। ফেলুদার গল্পগুলো নিয়ে চিত্রনাট্য তৈরি করবেন কলকাতার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং গাউসুল আলম শাওন। এখন পর্যন্ত ফেলুদার এগারোটি কাহিনী চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক
×