ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক নারী টেনিসে ক্রান্তিকাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আন্তর্জাতিক নারী টেনিসে ক্রান্তিকাল

টেনিসের দুনিয়ায় গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যারা আলোচনার তুঙ্গে তাদের মধ্যে সেরেনা উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভা, ভেনাস উইলিয়ামস, আনা ইভানোভিচ, ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা কিংবা পেত্রা কেভিতোভা অন্যতম। তবে সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে বয়সের ভারে তাদের সকলেই যেন অতীত হয়ে যাচ্ছেন! তাদের অনুপস্থিতিতে এ বছরেই দেখা গেল সেই শূন্যতা! নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ ১৫ মাস নির্বাসনে ছিলেন মারিয়া শারাপোভা। তার অনুপস্থিতি খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করেছেন টেনিসপ্রেমীরা। নির্বাসন থেকে ইতোমধ্যেই কোর্টে ফিরেছেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। কিন্তু ফিরতে পারেননি স্বরূপে। ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলার অনুমতি মেলেনি তার। উইম্বলডনে সুযোগ পেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় চোট। তবে মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনে খেলেছেন পাঁচটি গ্র্যান্ডসøামের মালিক। তবে বয়সে ইতোমধ্যেই ত্রিশকে অতিক্রম করে ফেলা মাশা পারবেন কি তৈরি হওয়া শূন্যতাকে পূর্ণ করতে? গোটা দুনিয়ার টেনিসপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। টেনিস কোর্টে অসাধারণ পারফর্মেন্স ছাড়াও শারাপোভার ছিল রূপ-গুণ। যে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই জড়িয়েছেন টেনিসের প্রেমে। কিন্তু সেরেনা উইলিয়ামস ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয় জয় করেছেন শুধুই নজরকাড়া পারফর্মেন্সে।কিন্তু অন্তঃসত্ত্বার কারণে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর থেকেই তিনি কোর্টের বাইরে। এ মৌসুমে আর ফেরারও সম্ভাবনা নেই তার। তবে সদ্য মা হওয়া ২৩টি গ্র্যান্ডসøামজয়ী সেরেনার চোখ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেই কোর্টে ফেরায়। তখন তার বয়স হবে ছত্রিশ। নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টে ফেরার ব্যাপারে আমেরিকান কিংবদন্তি দারুণ আশাবাদী। কিন্তু এই ফেরার পর তার সেই ধার কী থাকবে সেরেনার? এমন সংশয় প্রকাশ করেছেন মা হওয়ার পর টেনিসে সাফল্য পাওয়া কিম ক্লাইস্টার্সও। বেলজিয়ামের সাবেক এই তারকার মতে, মা হওয়ার পর কোর্টে ফিরতে সেরেনার প্রধান অন্তরায় বয়স। এই বয়সের ভারেই সেরেনার বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামস বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেতে। মৌসুমের প্রথম এবং সর্বশেষ উইম্বলডনেরও ফাইনাল খেলেন তিনি। কিন্তু দুইবারই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ডুবেছেন ৩৭ বছর বয়সী ভেনাস। তারপরও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। এদিকে সন্তান হওয়ার কারণে গত বছর থেকে টেনিসকে ছুটি দিয়েছেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। আবার যখন টেনিসে ফিরতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন ঠিক তখনই তৈরি হয়েছে সন্তান নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা। ইউএস ওপেনে খেলার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, টেনিসেরও আগে তার সন্তান। এদিকে বিয়ে করে টেনিসকে বিদায় বলে দিয়েছেন সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচও। জার্মানির সাবেক কিংবদন্তি ফুটবলার বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারের এখন পুরোদুস্তোর স্ত্রী হয়েই এখন ঘর করছেন ইভানোভিচ। শারাপোভা-সেরেনা কিংবা আজারেঙ্কা-ইভানোভিচের চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন পেত্রা কেভিতোভা। গত বছরের শেষ দিকে তো নিজ বাড়িতেই দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন এই চেক তারকা। টেনিসে ফেরার বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তারও। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা দূর করেই টেনিস কোর্টে স্বরূপে ফিরতে মরিয়া দুইবারের উইম্বলডনজয়ী কেভিতোভা। শারাপোভা-আজারেঙ্কা-কেভিতোভারা যখন স্বরূপে ফিরতে মরিয়া তখন কোর্টে থেকেও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না ক্যারোলিন ওজনিয়াকি কিংবা এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কার মতো তারকারা। টেনিস টুর্নামেন্টগুলোতে শুধু শুধু অংশগ্রহণ করাটাই যেন তাদের রীতিতে পরিণত হয়ে গেছে। বর্তমান টেনিস এতোটাই তারকাশূন্য যে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানের দিকে তাকালেও তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এই মুহূর্তে সবার উপরে অবস্থান গারবিন মুগুরুজার। দুই দিন আগে ক্যারোলিনা পিসকোভার কাছ থেকে প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থান দখল করেন তিনি। গত মৌসুমটা দুর্দান্ত খেলে টেনিস বিশ্বে দারুণভাবে তারকা হয়ে উঠার বার্তা দিয়েছিলেন এ্যাঞ্জেলিক কারবার। কিন্তু ইউজেনি বুচার্ড কিংবা ডোমিনিকা সিবুলকোভার মতো তারকা হয়ে উঠার আগেই যেন হারিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন স্টেফি গ্রাফের এই উত্তরসূরি। চলতি মৌসুমে গ্র্যান্ডসøামজয় তো দূরের কথা কোন ডব্লিউটিএ শিরোপাই জিততে পারেননি তিনি। যে কারণেই গত জুলাইয়ে কারবারের কাছ থেকে শীর্ষস্থান দখল করে নেন চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভা। তারকাবিহীন সাম্প্রতিক সময়ে চমক দেখিয়েছেন মনিকা পুইগ এবং জেলেনা ওস্টাপেঙ্কোর মতো খেলোয়াড়রা। অখ্যাত মনিকা পুইগ গত বছর তার দেশ পুয়ের্তো রিকোকে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকের স্বর্ণপদক জেতান। আর এ মৌসুমেই ফ্রেঞ্চ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন লাটভিয়ার একেবারেই নতুন মুখ জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো। সর্বশেষ ইউএস ওপেনের দিকে তাকান! বিশ্বের ৮৩ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী টেনিস খেলোয়াড় সেøায়ান স্টিফেন্স। তবে ৪ বছর আগে ছিলেন বিশ্বের ১১ নম্বর তারকা। তবে সে সময় জিততে পারেননি কিছুই। এবার ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম হিসেবে এ কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী জিতলেন ইউএস ওপেনের শিরোপা। ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ম্যাডিসন কেইস। তার বিরুদ্ধে ১ ঘণ্টার মাত্র কিছু বেশি সময় নিয়ে তিনি জয় তুলে নেন ৬-৩, ৬-০ ব্যবধানে। অথচ এ বছর জানুয়ারিতেই তার বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল। উইম্বলডন দিয়েই আবার কোর্টে ফিরেছিলেন। নিজের পারফর্মেন্স নিয়ে সংগ্রাম করার কথা, সেখানে বাজিমাত করলেন গ্র্যান্ডসøাম জিতে। জিতলেন ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার প্রাইজমানি। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ‘সেরেনা জুনিয়র’ হিসেবে নাম কামিয়েছিলেন। সেটা ৪ বছর আগের কথা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে ওঠেন এবং সেই পথে তিনি হারিয়ে দেন বিশ্বসেরা সেরেনা উইলিয়ামসকে। কিন্তু ‘ছোট সেরেনা’ সেøায়ানে স্টিফেন্সকে পরের বছর থেকে আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালটা দারুণ কেটেছিল স্টিফেন্সের। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমি খেলার পর সে বছরই উইম্বলডনে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন তিনি, ফ্রেঞ্চ ওপেনের চতুর্থ রাউন্ড। এ তিনটি গ্র্যান্ডসøাম আসরে নিজেকে এত ভালভাবে মেলে ধরার কারণেই র‌্যাঙ্কিংয়ে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে স্টিফেন্সের, উঠে আসেন ১১ নম্বরে। পরের বছরটাতেই ছন্দপতন, একের পর এক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হন তিনি। পরের বছর অবশ্য মোটামুটি ভালভাবেই ফিরেছিলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ শিরোপা জয় করেন। গত বছর ৩টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতে নিজেকে আবার ভালভাবে ফিরে পাওয়ার অবস্থায় নিয়ে যান তিনি। গত বছর ২৬ আগস্ট পায়ের ইনজুরির কারণে ইউএস ওপেন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। সেটা নিয়ে ভুগতে ভুগতে এ বছর জানুয়ারিতে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারই করতে হয় তাকে। তবে চোট থেকে ফিরেই নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরলেন স্টিফেন্স।
×