স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যখনই কোন কিছু উল্টা পাল্টা হয় তখনই জোরেশোরে মুখ খোলেন মুশফিকুর রহীম। এমন কথাই বলেন, যেন সব দায় টিম ম্যানেজমেন্টের। অধিনায়ক হিসেবে তার কোন দায়ই নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি চার নম্বরে না নেমে যেমন নাসির হোসেনকে ঠেলে দিয়েছেন। এরপর এ নিয়ে আবার টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর দায়ও চাপিয়ে দিয়েছেন। এমন কথা বলেছেন যে কথাতেই টেস্টে উইকেটকিপিং হারানোর পথ তৈরি হয়ে গেছে।
চার নম্বর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে মুশফিক বলেছিলেন, ‘ডান-বাঁহাতি সমন্বয়ের জন্য এটা করা। আমরা চেষ্টা করি আমাদের ব্যাটসম্যান অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে। তবে হ্যাঁ, যারা ওই সময় খেলেছে (বদল হওয়া পজিশনে) তারা ভাল খেললে হয়তো টেস্ট অন্যরকম হতে পারত। সত্যি বলতে আমরা সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের দুর্ভাগ্য।’ সঙ্গে নিজে না নামার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘আমার কথা যদি বলেন, ১২০ ওভার কিপিং করে আবার যদি চারে নামতে হয় তাহলে বলব এটা কারও একার দায়িত্ব নয়। টেস্টে এমনটা হতে পারে না যে আপনি আগে ব্যাটিং করলে চারে খেলবেন কিংবা পরে ব্যাটিং করলে ছয়ে খেলবেন। বিশ্ব ক্রিকেটে এমনটা কমই দেখা যায়। আমি ইচ্ছে করলে চার নম্বরে নামব তা তো হয় না। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। আমার ইচ্ছে থাকে কিপিং করার। আমি তো ৪০-৩০ কিংবা ৫০ বছর খেলব না। হয়তো ৫-৬ বছর খেলব। আমি যতটুকু সেরা ততটুকু দেবার চেষ্টা করি। ক্যাপ্টেন্সি না থাকলেও আমার সমস্যা নেই। কিপিং না করলেও। আমার রোলের বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন না করে যারা ওপরে আছেন, যারা এটি সিলেক্ট করছেন, তাদের করলে ভাল। তাহলে আমিও অনেক দিক থেকে ক্লিয়ার হতে পারতাম। সেভাবে আমার ইনপুটটাও দিতে পারতাম।’
মুশফিকের এসব কথায় যেন চটেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কারণ মুশফিক যে ঠিক কথা বলেননি। মুশফিকের এমন কথার বিপরীতে পাপন বলেছেন, ‘আমরা ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও কিপিং করবে কি না। এটাও জিজ্ঞেস করেছিলাম ও চারে ব্যাট করতে আগ্রহী কি না। আগেরদিনও (টেস্টের তৃতীয়দিন) ওকে খবর পাঠিয়েছি ও চারে আসুক। কিন্তু ও তো নামেনি। ও তো ওর সিদ্ধান্তেই নেমেছে। তাহলে ওকে জিজ্ঞেস করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত মানে কী? পরপর চারজন বাঁহাতি আমরা চাইনি। ওকে চারে নামতে বলা হয়েছিল। সে ব্যাটিং পজিশন বদলাতে চায়নি। সমস্যা যদি হয় ওকে সেটা বলতে হবে।’ সঙ্গে পাপন যোগ করেন, ‘একটা কথা বলে রাখি, সমস্যাটা মুশফিকের। মাশরাফি অধিনায়কত্ব করে না? ও কখনও এমন সমস্যায় পড়েনি। সাকিব কখনও এমন সমস্যায় পড়বে না, লিখে দিতে পারি।’
টেস্টে মুশফিকের উইকেটকিপিং নিয়ে যে পুরোদমে এবার ভাবছে বিসিবি, তা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খানের কথাতেই পরিষ্কার। তিনি বলেছেন, ‘এই গরমে সারাদিন কিপিং করে চারে ব্যাটিং করা কঠিন। কিন্তু ওরও (মুশফিক) দায়িত্ব আছে। সিনিয়র খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে দলের স্বার্থ ওকেই বেশি দেখতে হবে। আগেও টেস্টে আমরা তাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলিয়েছি। সে আমাদের দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।’
ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্ট চলাকালেই মুশফিকের নেতৃত্ব ও উইকেটকিপিং নিয়ে আলোচনা উঠেছিল। তখন বিসিবি সভাপতি মুশফিকের কাঁধ থেকে দায়িত্ব কমানোর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। তাতে করে গত মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিককে দেখাও যায়নি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের আগে লিটন কুমার দাস ইনজুরিতে পড়ায় আবার উইকেটকিপিংয়ের ভূমিকায় দেখা যায় মুশফিককে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই মাসের ২৮ তারিখ শুরু হতে যাওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে উইকেটকিপিংহীন মুশফিককে আবারও দেখা যেতে পারে। আবার অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকবেন মুশফিক। টেস্টে উইকেটকিপার থাকছেন না মুশফিক।