ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে এলো বন্ধু দিবস

বন্ধুত্ব সর্বত্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ আগস্ট ২০১৭

বন্ধুত্ব সর্বত্র

প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধু দিবস পালিত হয়। তবে ঠিক কবে থেকে বন্ধু দিবস পালন করা করা হচ্ছে তার সঠিক দিনক্ষণ নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে জানা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকের মধ্যবর্তী সময়েই বন্ধু দিবস পালন শুরু হয়। উইকিপিডিয়া থেকে জানা, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশ বিশেষত প্যারাগুয়েতে ১৯৫৮ সাল থেকে প্রথম বন্ধু দিবস পালন শুরু হয়। প্রথম দিকে বিভিন্ন কার্ড তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপ ডের প্রচলন শুরু করে। পরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। ১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই প্রথম ফ্রেন্ডশিপ ডে উদযাপিত হওয়ার পর ‘জেনারেল এ্যাসেম্বলি অব দ্য ইউনাইটেড নেশন’ ২০১১ সালের ৩০ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আরেক ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটি পালনের প্রথা চালু হয়। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। হত্যার প্রতিবাদে পরের দিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সে সময় বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের অবদান আর তাদের প্রতি সম্মান জানানোর লক্ষ্যে আমেরিকান কংগ্রেস ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবারকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। সেই থেকে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ছেলেবেলা! কিংবা মেয়েবেলা! যাই বলি না কেন স্কুল শুরুর দিনগুলোতে আমাদের অনেকেরই নতুন অভিজ্ঞতার নাম হয়ত একটাই, বন্ধুত্ব! পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে চেনা জগতটা যে এক লাফে অনেক দূর চলে গিয়েছিল সে তো বন্ধুদের হাত ধরেই। জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আজ যে যেখানেই থাকি না কেন চলার পথে বন্ধুত্ব নামের এই পাথেয়টির তুলনা বোধহয় আর কিছুর সঙ্গেই চলে না। এ এমনই বিষয় যেন কিছু না থাকলেও বন্ধুত্ব থাকলে চলে আবার সব থাকলেও বন্ধুত্ব ছাড়া চলে না! নানা সংস্কৃতিতে, নানা দেশে বন্ধুত্বের রীতিনীতিতে আগেও যেমন ভিন্নতা ছিল, এখনও তেমনি ভিন্নতা আছে। কিন্তু বন্ধুত্ব তো তাই যাকে কোন নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না, সংজ্ঞা দিয়ে বাঁধা যায় না। হয়ত তার প্রয়োজনও নেই। তবু মানুষ যুগে যুগে দেশে দেশে বন্ধুত্বকে যেমন উদযাপন করেছে তেমনি একে ব্যাখ্যা করারও চেষ্টা করেছে। বন্ধু নিয়ে মনীষীদের উক্তি এমন এককাল তো ছিলই যখন ‘ছেলেতে-মেয়েতে’ বন্ধুত্ব হলে তা কেবল ভালবাসা-প্রেমের সম্পর্ককেই বোঝাত! কিন্তু এই যুগ সেসব পেছনে ফেলে অনেক দূরই এগিয়েছে। তবু বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে ‘বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বোঝায়। দুব্যক্তি ও একটি জগত। অর্থাৎ দুজনে সহযোগী হয়ে জগতের কাজ সম্পন্ন করা। বন্ধু মোতাহার হোসেন চৌধুরীকে লেখা চিঠিতে নজরুল নিজের আবেগকে এভাবেই প্রকাশ করেছিলেন, ‘আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে, সেদিন অন্তত তোমার বুক বেঁধে উঠবে। বন্ধুর জন্য উপহার পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত হলেও বন্ধুত্ব সর্বজনীন। তাই এই দিবস পালনে কারোর কোন আপত্তি নেই। আজকের এই দিনে প্রাণের বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে নিশ্চয়ই সবাই বিশেষ আয়োজন করবেন। কিংবা আয়োজনে ঘনঘটা না থাকলেও প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে নিশ্চয়ই মিলবেন। জানতে চাইবেন, বন্ধু কী খবর বল? কতদিন দেখা হয়নি...। সামাজিক ওয়েবসাইট ফেসবুক, টুইটার, মোবাইল ফোনে চলবে এসএমএস আদান-প্রদান। শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় কার্ডের প্রচলন হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও বন্ধু দিবসের কার্ড তুলে দেবেন বন্ধুর হাতে বন্ধু। পাশাপাশি ফুল, চকোলেট, অন্য উপহার সামগ্রী দেবেন কেউ কেউ। কী দেবেন বন্ধুকে আপনার বন্ধু যদি মেয়ে হয়, তাহলে দিতে পারেন গহনা, হাতঘড়ি, সুগন্ধি, শুভেচ্ছা কার্ড, শোপিস, চকোলেট বক্স, মগ, কাঠের তৈরি গহনার বাক্স, মোমদানি, ফুলদানি, পেইন্টিংস, ফটোফ্রেম, পোশাক, ডায়রি, নোটবুক, মিউজিক প্লেয়ার, মেকআপ বক্স, প্রসাধনী, বই, শপিংমল বা বিউটি পার্লারের ডিসকাউন্ট কুপন ইত্যাদি। আপনার বন্ধু যদি ছেলে হয়, তাহলে দিতে পারেন হাতঘড়ি, সুগন্ধি, শুভেচ্ছা কার্ড, মম, মানিব্যাগ, পোশাক, রোমান্টিক গানের সিডি, বেল্ট, সিডি, ফটোফ্রেম, কলম, কোর্টপিন, টাই, অফিস ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি। বিশ্ব বন্ধু দিবস উপলক্ষে আমাদের দেশের মার্কেটগুলোতে বেশ ভিড় দেখা যায়। ঢাকার নিউমার্কেটে গিফট গ্যালারির বিক্রেতা রাশেদের মতে, বিশ্ব বন্ধু দিবসের বেশিরভাগ ক্রেতা হচ্ছে আমাদের দেশের তরুণ সমাজ। বন্ধু দিবসে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ফ্রেন্ডশিপ বেল্টের। তবে আপনি আপনার বন্ধুকে যাই উপহার দিন না কেন, আপনার উপহারটি তার কাছে বহু শ্রেষ্ঠ উপহার। এ ছাড়া বন্ধু দিবসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হলুদ গোলাপ আর ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের মতো বিষয়গুলোও। মজার ব্যাপার হলো, এই ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ধারণাটিও এসেছে আমেরিকা থেকেই। আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যান্ড দেয়ার এই রীতি চালু আছে। তারা তাদের বন্ধুদের জন্য ব্যান্ড তৈরি করে। আর যাকে ব্যান্ড দেয়া হয়, সেও কখনোই ব্যান্ডটি খোলে না। আবার বন্ধুত্বের প্রতীক যে হলুদ গোলাপ সেই হলুদ রং হলো আনন্দের প্রতীক। আর হলুদ গোলাপ মানে শুধু আনন্দই নয়, প্রতিশ্রুতিও। কাজেই বন্ধুত্বের মাঝে যেন আনন্দের পাশাপাশি থাকে প্রতিশ্রুতিও সেই কথাটিই যেন মনে করিয়ে দেয় এই বন্ধু দিবস।
×