ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা-

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৪ আগস্ট ২০১৭

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা-

আগস্ট মাস এলেই রবীন্দ্রনাথের গানের দুটি কলি আমার মনে পড়ে। ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা/কহো কানে কানে শোনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গল বারতা।’ গানটি শুনলে এই বয়সে পৌঁছেও আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথ বুঝি তার পরবর্তী যুগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ করেই এই গানটি লিখেছিলেন। আমি কয়েকবার টুঙ্গিপাড়ায় গেছি। বিশাল সমাধিসৌধটি তৈরি হওয়ার আগে এবং পরেও। তার মৃত্যুর পর চার দশকের বেশি কেটে গেছে। যখনই এই সমাধিতে গেছি, দেখেছি মানুষের ভিড়, এখনো অনেকে মোনাজাতের জন্য হাত তুলে অঝোর ধারায় কাঁদে। আমি জাতির পিতার সমাধিতে দাঁড়িয়ে এ কান্না দেখেছি আর ভেবেছি, ‘এ কান্না তো কেবল শোকের কান্না নয়, পিতার কাছ থেকে পুত্রের মঙ্গল বার্তা শোনার প্রার্থনাও। তার মৃত্যুর পর বড় বেশি অমঙ্গলে দেশ ছেয়ে গেছে। এই অমঙ্গল থেকে মুক্তি পাওয়ার শক্তি ও ঐক্য অর্জনের পথ নির্দেশ লাভের প্রার্থনাও থাকে এই কান্নার মধ্যে। শোক থেকে যে শক্তির উদ্ভব হয়, আগস্ট মাস প্রতিবছর সেই শক্তির উদ্বোধন ঘটায়। বঙ্গবন্ধু তো তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেই গেছেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের কাছে আমার নির্দেশ রইলো, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো।’ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু কবরে শুয়ে এখনো যেন তা-ই বলছেন, ‘নশ্বর দেহে আমি নেই তাতে কি হয়েছে। আমার নির্দেশনা তো রয়েছে। তোমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো।’ এই শত্রু এখন বদলে গেছে। আগে এই শত্রুপনা ছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসন এবং তাদের পদলেহী একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী দল। এখন তাদের স্থান গ্রহণ করেছে নতুন ও পুরনো শত্রুপক্ষ। এরা হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শত্রু, স্বৈরাচারী গোষ্ঠী, চরিত্রহীন নব্য ধনী গোষ্ঠী, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ। দেশের শক্তিশালী এলিট ক্লাস, বিগ মিডিয়ার একটি অংশ এবং সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসনের একটি পাকিস্তানপন্থী চক্র। সেই সঙ্গে তাদের সিভিল ফেস হিসেবে একটি বা দুটি রাজনৈতিক দল। তাদের সহযোগী আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ। এখন ভূ-রাজনীতির অবস্থানও সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। আগের সেই দুই পরাশক্তির দুই প্রভাব বলয় নেই। সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং তার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব শিবির নেই। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক শিবিরের একাধিপত্য এখন বিশ্বে। তাদের বিশ্বায়নের নীতি বিশ্বে জাতি, রাষ্ট্র্র ও তাদের জাতীয় অর্থনীতির সীমানা ভেঙ্গে দিয়ে বিশ্ববাজার ব্যবস্থার যে প্লাবন সৃষ্টি করেছিল, তাও এখন অবসিত হওয়ার মুখে। পশ্চিমা বিশ্বের দুটি প্রধান দেশÑআমেরিকা এবং ব্রিটেন এখন দারুণ সঙ্কটগ্রস্ত। মধ্যপ্রাচ্যে বুশ এবং ব্লেয়ারের নির্বুদ্ধিতা যে আগুন জ্বেলেছে, তা নেভার কোন লক্ষণ নেই। সেই আগুনের লাভায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও বিপন্ন। তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। দেশটি প্রবল বিপরীত স্রোতের মুখে তার স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়ছে। জাতির পিতা এখন নেই। তার হাতে গড়া দলই এখন পর্যন্ত এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু কালের আবর্তনে এই দলের ভেতরেও ঢুকেছে নানা জঞ্জাল। এই জঞ্জাল মুক্ত হয়ে দলটি পারবে কি জাতীয় ঐক্য আবার গড়ে তুলতে এবং তাকে ধরে রাখতে? পারবে কি দেশে মানুষকে নতুন মঙ্গল বার্তা শোনাতে? মানুষ তো আগস্ট মাস এলেই সকাতরে কাঁদে। কবরে শুয়েও পিতা কি তাদের নতুন পথ নির্দেশ দেবেন, নতুন মঙ্গলবার্তা শোনাবেন? কেউ কেউ বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বঙ্গবন্ধুর আমল এখন আর নেই। এমন যে বন্ধুরাষ্ট্র ভারত, তারও অসাম্প্রদায়িক শাসন ব্যবস্থা পাল্টে গেছে। সাম্প্রদায়িকতা কর্র্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে দিল্লীতে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেও মত ও পথ পাল্টাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর গত চার দশকে আওয়ামী লীগ যে মত ও পথ পাল্টায়নি, তা নয়। বঙ্গবন্ধুর আমলে আওয়ামী লীগ ছিল একটি মধ্য বামপন্থী দল। এখন তা মধ্য ডানপন্থী দল। এই পরিবর্তন হয়েছে বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। তাই আওয়ামী লীগের হাসিনা সরকার এখনো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার নিবু নিবু বাতি টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। যারা অতি বামপন্থী সেজে কট্টরপন্থা অনুসরণের কথা বলেন, তাদের পরামর্শ শুনলে বাংলাদেশে এতোদিনে অর্ধ তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতো। এখানেই বঙ্গবন্ধুর নীতি ও কর্মপন্থার জয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ বাস্তবতার খাতিরেই বঙ্গবন্ধুর কোনো কোনো কর্মপন্থা থেকে সরে এসেছে। তার মূল আদর্শ থেকে সরে আসেনি। এই আদর্শটি হলো গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার মূল ভিত্তিটিকে সর্বপ্রযতেœ রক্ষা করা। আওয়ামী লীগের ভেতরে দুর্নীতি, আপস, সুবিধাবাদের উপসর্গ দেখা দিতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেকুলারিজমের ক্ষীণ বাতিটিকে প্রচ- ঝড়ের মুখেও টিকিয়ে রেখেছেন। যেখানে এই ঝড়ের হাওয়ায় বড় বড় ডান ও বাম নেতা ও দল এগিয়ে গেছেন; অথবা তাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের ছাতার নিচে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে শেখ হাসিনা একা দুর্গম পথের যাত্রী হয়ে উজানে নৌকা বাইছেন। এ শক্তি ও সাহস তার কোথা থেকে এলো? এই শক্তি ও সাহসের উৎস টুঙ্গিপাড়ার সমাধিতে সমাহিত একজন মহানায়ক। চিরঞ্জীব মুজিব। তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক দ্বারা প্রবর্র্তিত সেকুলার জাতীয়তাবাদ এবং মিসরের জামাল নাসের কর্তৃক প্রবর্তিত সেকুলার আরব জাতীয়তাবাদ একদা সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছিল। বাংলাদেশের কবি নজরুল ইসলাম কামাল আতাতুর্ককে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন “কামাল তুনে কামান কিয়া ভাই।” নাসেরের আরব জাতীয়তাবাদ সারা মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা পাল্টে দিতে চলেছিল। এই দুই জাতীয়তাবাদই আজ প্রায় মৃত। মিসরে সেকুলার আরব জাতীয়তাবাদকে কবর দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড নামের সন্ত্রাসী মৌলবাদ আজ ক্ষমতা দখলে সক্ষম। সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে হটাতে হয়েছে। তুরস্কে কামালবাদের ভাঙ্গা দুর্গে এখন উড়ছে মৌলবাদী স্বৈরাচারীর জয় পতাকা। এর একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। কামাল ও নাসের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে নিহত হননি। বাংলাদেশে শেখ মুজিবকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুজিবের নামোচ্চারণ, স্বাধীনতা যুদ্ধের জয় বাংলা সেøাগানটি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেকুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সমূলে উচ্ছেদ করে সেখানে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। তুরস্কের ও মিসরের মাটি থেকে কামালবাদ ও নাসের বাদকে চিরদিনের জন্য উচ্ছেদ করার মতো বাংলাদেশেও মুজিববাদ তথা সেকুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদকে চিরদিনের জন্য উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু এ চক্রান্ত সফল হয়নি। তুরস্কে এবং মিসরে সেকুলার জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যত কি তা আমি জানি না; কিন্তু বাংলাদেশে এই জাতীয়তাবাদ পঁচাত্তরের পনের আগস্ট ও ৩ নবেম্বরের রক্তস্নানের পর আবার নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে জেগে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর জয়গানে এখন সারা দেশ মুখরিত। বঙ্গবন্ধুই এখন বাংলাদেশ। তার নশ্বর দেহ টুঙ্গিপাড়ার সমাধিতে এখন সমাহিত বটে; কিন্তু তার অবিনশ্বর আত্মা প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালি হৃদয়ে জাগ্রত। কামাল ও নাসেরের মতো মহানায়ক তাদের মৃত্যুর দীর্ঘকাল পরেও যা পারেননি, অর্থাৎ এখন পর্যন্ত আবার জেগে উঠতে পারেননি, শেখ মুজিব সেখানে তার নির্মম মৃত্যুর তিন দশক শেষ না হতেই আবার জেগে উঠতে পেরেছেন। কামাল ও নাসেরের সেকুলার জাতীয়তাবাদ শীঘ্রই আবার জেগে উঠতে পারবে কিনা জানি না, কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদ আবার জেগে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু আবার জাতীয় জীবনে তার হারানো প্রতিষ্ঠা ফিরে পেয়েছেন। গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন সুস্থ ও গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদের সীমানা সাময়িকভাবে ভেঙ্গেছিল বটে; কিন্তু সেই জাতীয়তাবাদ আবার জাগ্রত এবং তথাকথিত বিশ্বায়নই আজ পশ্চাদপসারণরত। বিশ্বায়ন সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের অখ-তা ভাঙ্গতে গিয়ে সেখানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছে। ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া নিয়ে চলছে বর্তমান রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও রক্তপাত। খোদ আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়াসহ একাধিক রাজ্যে গড়ে উঠছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। ভারতে শুধু কাশ্মীরে নয় দার্জিলিংকে অন্তর্ভুক্ত করে স্বতন্ত্র গোর্খাল্যান্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ইউরোপ ব্রেক্সিটের ধাক্কায় ভাঙ্গনের মুখে। এক্ষেত্রে একমাত্র শেখ মুজিবের সেকুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়নি, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক পরিচয়ে চিহ্নিত বাংলা ভাষাভাষীদের একটি অখ- কালচারাল নেশনহুড গঠন করেছে। তাই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশ্বের যেখানেই থাকুক, বাংলা নববর্ষের দিনে, একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ দিবসে, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীতে, শরৎ ও বসন্ত উৎসবে এক সঙ্গে জড়ো হয়, একই গান গায়, একই পোশাক পরে এবং একই খাদ্য গ্রহণ করে। শেখ মুজিব বাংলাদেশের জাতীয় নেতা বটে, কিন্তু এখন তিনি বঙ্গবন্ধু এই পরিচয়ের সঙ্গে বিশ্ববন্ধু এই নামেও পরিচিত। ফিডেল ক্যাস্ট্রো তাই বলতে পেরেছেন, “আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি।” বাঙালির তিনটি রক্ষাপ্রাচীর আছে। বাংলা ভাষা, রবীন্দ্রনাথ ও শেখ মুজিব। বাঙালির সভ্যতা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার শত্রুরা তাই বার বার এই তিনটি রক্ষাপ্রাচীর ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে। বাংলা ভাষার উপর তো হামলার শুরু সেই প্রাচীন সেন রাজাদের আমল থেকে। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথকে বর্জন ও সংহারের অবিরাম চেষ্টা করেছে দেশটির বিভিন্ন সরকার। শেখ মুজিবকে দু’দুবার ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পরও চলেছে তার নাম বাংলার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত। কিন্তু কোনো চক্রান্তই সফল হয়নি। বাংলা আজ স্বাধীন বাঙালির রাষ্ট্রভাষা। রবীন্দ্রনাথ শুধু বিশ্ব কবি নন, বাংলাদেশ এবং ভারত দুটি রাষ্ট্রেই তারই গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গীত হয়। আর শেখ মুজিব এখন শুধু বঙ্গবন্ধু নন, বিশ্ববন্ধু, বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের মহানায়ক। তাই তিন দশক আগেও পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ার্শতে অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি সম্মেলনে লেনিন, হোচিমিনের ছবির পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবিও টানানো হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর সুদূর আফ্রিকার কবিও তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। লন্ডনে দীর্ঘকাল পরে হলেও ইস্টএন্ডে বঙ্গবন্ধুর একটি স্ট্যাচু স্থাপিত হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত এই স্ট্যাচু যাতে স্থাপিত না হয় সে জন্যে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বাধা অতিক্রম করে সাদেক নামে এক বাঙালি তরুণ প্রচুর অর্থ ব্যয়ে এই স্ট্যাচুটি তৈরি করিয়ে পূর্ব লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করেছেন। লন্ডনে নেলসন ম্যান্ডেলার স্ট্যাচুতে যেমন মানুষ এসে ভিড় জমায়, ফুল দেয়, তেমনি বঙ্গবন্ধুর স্ট্যাচুতেও ধীরে ধীরে ফুল হাতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বাঙালিরা এসে তাদের কাছে কিংবদন্তির তুল্য এই মানুষটিকে দেখে এবং শ্রদ্ধা জানায়। বিপদে আপদে সঙ্কটে এই মানুষটিই যেন আপামর বাঙালির পথ প্রদর্শক এবং সঙ্কটত্রাতা। তাই স্বাভাবিকভাবেই হয়তো বছর ঘুরে আগস্ট মাসটি এলেই বাংলাদেশের মানুষের মনে রবীন্দ্রনাথের গানের কলি গুঞ্জরিত হয়Ñ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা / কহো কানে কানে শোনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গল বারতা।’ বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সত্যই এখন সকল অমঙ্গল ঘুচিয়ে মঙ্গলবার্তা ঘোষিত হওয়া দরকার। আর তা পারেন কবরে শুয়েও জাতির চিরঞ্জীব পিতা। ওই একটি নামের জাদুমন্ত্রে গণশত্রুরা পালায়; মানুষ জেগে ওঠে। এবারের আগস্টেও পিতার কণ্ঠে সেই জাগরণ-ধ্বনি ও মঙ্গলবার্তা শোনার অপেক্ষায় বাংলার মানুষ। লন্ডন, ৩ অগাস্ট, বৃহস্পতিবার, ২০১৭।
×