ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যথিত হবার বিচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ জুলাই ২০১৭

ব্যথিত হবার বিচ্ছেদ

এটা পরীক্ষিত সত্য। যার শুরু আছে, তার শেষও আছে। তার মানে, কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এই ধ্রুব সত্যটা সব থেকে বেশি লক্ষণীয় মানুষের জীবনে। সময়ের বিচারে খুব অল্পতেই মানব জীবনে বিস্তর পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ, অসংখ্য ব্যক্তিগত জীবন। কে কার খবর রাখে। তবে, কোন কোন মানুষদের জীবন-যাপন অন্যদের ভীষণ অগ্রহের। এর কারণ, জগত সংসারে ওই মানুষগুলোর ব্যক্তিগত অবদান। এক্ষেত্রে যদি সবশ্রেণীর মানুষের অগ্রহের কথা বলি তা হলে, প্রথমেই চলে আসবে বিনোদন দুনিয়ার মানুষদের কথা। এই জগতের মানুষদের নিয়ে সবার আগ্রহ, একরকম অশেষ! এরা ভক্তদের মনোজগতের লোক! নাচ, গান, নাটক, সিনেমা ছাড়াও এদের একান্ত ব্যক্তিগত খবর জানতে এরা মরিয়া! কে কবে প্রেমে পড়ল! প্রেমিক বা প্রেমিকাটি কে! ওই জুটি বিয়ে করছেন কবে? এমন সব অন্তহীন কৌতূহল তাদের ঘিরে। মুখে মুখে একটা কথা প্রচলন আছে বিনোদন দুনিয়ার লোকেদের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয় না (যদি সে সংসার হবে নিজেদের মধ্যে)। এক্ষেত্রে সবটাই যে নিরাশার তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ দীর্ঘস্থায়ী, আবার কেউ অমৃত্যু সংসার করেছেন। এই উদাহরণগুলো আমাদের যেমন বিনোদন যোগায় তেমনি বিচ্ছেদের! ২০১৭ সাল। বিশেষ করে এই বছর অনেকগুলো কারণে বিনোদন জগৎ এবং এর মানুষদের নিয়ে খুব বেশি আলোচনা চলছে...এই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিন আগে জন্ম হয়েছে আর একটি আলোচিত অধ্যায়ের। তাহসান-মিথিলার বিয়ে বিচ্ছেদ। মিডিয়া বা বিনোদন জগতে এদের তারকা খ্যাতি যেটুকু ব্যক্তিগত জীবনে সুখী দম্পতির খ্যাতিও ছিল ততটুকু। গত বৃহস্পতিবার টিভি এবং অনেক অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, তাহসান-মিথিলার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। সেই থেকে এক ধরনের চাঞ্চল্য দেখা যায় এদের ভক্তকূলের মধ্যে! বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে, কেউ কেউ আবেগে একাধিক স্টাটাস লিখেছেন! কেন এই বিচ্ছেদ? তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দাম্পত্য জীবনে দীর্ঘদিন বোঝাপড়ার অভাব বোধ থেকে এই বিচ্ছেদ! তবে কারণ যাই হোক না কেন মুখ্য হলো তাহসান এখন আর মিথিলার স্বামী নন তেমনি মিথিলাও আর তাহসানের স্ত্রী নন। গত মে মাসে এই দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদের আইনী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। দম্পতির অতীত থেকে বর্তমান প্রথম পরিচয় ২০০৪ সালে, অনেকটা নাটকের গল্পের মতো। এরপর দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক, সে প্রেমের গল্পও আছে অনেক! প্রেমের এক পর্যায়ে নিজেদের এবং পারিবারিক সম্মতিতে ২০০৬ সালে তাহসান-মিথিলা সংসার পাতেন। তখন অবশ্য তাদের তারকা খ্যাতির প্রভাব ততটা জোরালো ছিল না। মিডিয়ায় তখন তাহসানের পরিচয় ব্যাক্ল ব্যান্ডের ভোকাল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিভি পর্দায় মিথিলার অবির্ভাব ঘটে। পাশাপাশি দু’জনার সংসারে আসে নতুন মিষ্টি অতিথি। নাম তার আইরা তাহরীম খান। মিথিলা সমসাময়িক বিজ্ঞাপন, নাটক এবং মিউজিক ভিডিও মডেল হয়ে বেশ দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাহসান ও সঙ্গীতশিল্পীর পরিচয়ের সঙ্গে অভিনেতার বিশেষণ যোগ করেন। দু’জনার অভিনীত একাধিক রোমান্টিক নাটক দর্শকদের বেশ মুগ্ধ করে। অঘোষিত আদর্শ দম্পতির স্বীকৃতি পায় তারা। কিন্তু বাস্তবতা ছিল, গত দুই বছর তারা অনেক চেষ্টা করেছেন স্বাভাবিক সংসার জীবনে চালিয়ে যাবার। অবশেষে, তারা আর এক হতে পারেননি। যে কারণে, সমাপ্ত ঘটল তাদের ১১ বছরের সাংসারিক জীবনের। বিচ্ছেদের প্রায় দুই মাস পর সবাইকে পরিষ্কার জানালেন, তারা আর এক পরিচয়ে নেই, থাকছেন না এক ছাদের নিচে। সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বর নিচু হয়ে গেল এদের ভক্তদের! এক রকম আশাহতই বলা যায় তাদের ভক্তদের। মূলত বিপত্তি ঘটেছে, এতদিন যারা তাদের যুগল মিষ্টি হাসি দেখেছে পর্দায় কিংবা বাইরের কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে, তাদের বেলায়। এক শ্রেণী ভাবতেই পারেনি এই দম্পত্তির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটতে পরে! হ্যাঁ পারে। আর এটাই প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, মানুষ নিজেই জানে না কখন কোন ঘাটে তার তরী ডুববে আর কোন ঘাটেই বা তার তরী ভিড়বে! এক্ষেত্রে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি গান বেশ প্রাসঙ্গিক। সমাজ ও সংসারে মিছে সব, মিছে এ জীবনেরও কলরব...হয়তো এমনি কোন কাছাকাছি উপলব্ধি থেকে মিথিলা বলেছেন, সমাজ সংসারের ভয়ে সারা জীবন অভিনয় করে যাবে তা তো হতে পারে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয় এই দম্পত্যিকে, নির্জীব প্রেমহীন জড়সংসারের থেকে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে। তবে জাগতিক নিয়মে মন খারাপ তো থেকেই যায়! এমন বিবেচনায় তেরো বছরের (প্রেমের দুই বছর) স্মৃতি মনে করে তাহসান আবারও হয়তো অদূর কোন ভবিষ্যতে নিজের গাওয়া গান নিজেই রিমেইক করবেন, এমনি কোন গান! দূরে তুমি দাঁড়িয়ে/ সাগরের জলে পা ভিজিয়ে/ কাছে যেতে পারি না/ বলতে আজ পারি না/ তুমি আমার এখনো...আর তখনই হয়তো মিলে যাবে প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আমমেদের জীবন বোধের এই বাণীটি, ‘সমুদ্রের জীবনে যেমন জোয়ার-ভাটা আছে, মানুষের জীবনেও আছে। মানুষের সঙ্গে এই জগতেই সমুদ্রের মিল’ হয়তো সব মানুষের জন্য!
×