ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ অংকন

লোকচক্ষুর অন্তরালে...

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৭ জুলাই ২০১৭

লোকচক্ষুর অন্তরালে...

বর্তমানে গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়, থাকা-খাওয়ার বেলায়ও এদের ওপর অমানবিক আচরণ করা হয়। গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার আসামিদের তেমন কোন সাজা হয় না বললেই চলে। আদালতে মামলাগুলো অধিকাংশই চূড়ান্ত রায় পায় না। বেশিরভাগ ঘটনাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। দারিদ্র্যের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মামলার বাদীরা অভিযুক্তদের তোপের মুখে পড়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন। মাত্র ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে হত্যা, সম্ভ্রমহরণ কিংবা অমানবিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো বেচাকেনা হয় লোকচক্ষুর আড়ালে এবং আদালতের নাগালের বাইরে থেকে যায়। গৃহকর্মী নির্যাতনের প্রায় প্রতিটি ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (খ) ধারায় মামলা হয়। কিন্তু এ আইনটিতে আসামিদের সাজা দেয়ার খুব একটা সুুুযোগ নেই। এ আইনে কেবল দাহ্য পদার্থ দ্বারা পুড়ে গেলে সাজার সুযোগ থাকে। কিন্তু বেত্রাঘাত, গরম খুন্তি, লোহা, ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, গরম পানি ঢেলে দেয়া এ আইনে কাজ করে না। গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় দ-বিধির (২৩, ২৪, ২৫, ২৬) ধারায় মামলা করা উচিত। অপর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাসাবাড়ির কাজে নিযুক্ত ৯৫ শতাংশ শিশু গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক পরিবারের প্রধান কর্তা ছাড়া নির্যাতনকারীদের ৩০ শতাংশ পরিবারের অন্যান্য সদস্য রয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে ৫২ শতাংশ নিয়মিত নির্যাতিত হয়। ৯৫ শতাংশ মৌখিক (গালি) নির্যাতনের শিকার হয়। আর ৮৬ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়। বেশিরভাগ এসব নির্যাতন করে গৃহের মহিলারা। ৯৩ শতাংশ নিয়মিত খাবার পায়, আর ৮২ শতাংশ পরিবার সময়মতো খাবার দেয়, ৫০ শতাংশ শিশু সময়মতো জামা-কাপড় পায়। বাকিরা পায় না। বাংলাদেশে বর্তমানে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি ও এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী ও শিশুশ্রমিক রয়েছে। এই নারী ও শিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ও তাদের নিরাপত্তা ও আইনী অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি উচ্চ আদালতে ২০১০ সালে একটি জনস্বার্থ মামলা করে। পরবর্তীতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় প্রদান করেন। কিন্তু আজও সেই রায়ের কোন প্রতিফলন আমরা দেখি নাই। প্রসঙ্গত কিছু কথা না বললেই নয়, কোন কোন মহল দাবি করে যে, মানবিক কারণেই নারী ও শিশু শ্রমিকদের প্রতি নজর দেবে, দিতে হবে। বরং খোঁজ নিয়ে দেখা মিলেছে, তাদের গৃহেই অনেক গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এখন অবধি হচ্ছে। এর পেছনে কারণ এই যে মানবতাবোধ, মানুষের প্রতি সহানুভূতি, সংবেদনশীলতার বহুলাংশে হ্রাস পাওয়া। গৃহশ্রমিক নির্যাতন প্রতিহত করতে আইনের ধারা পাল্টিয়ে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে গৃহশ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় করা হোক। সিংড়া, নাটোর থেকে
×