ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেএমসির লোকসান কমেছে ১৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৪ জুলাই ২০১৭

বিজেএমসির লোকসান কমেছে ১৭৪ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৪৮১ কোটি ৯০ লাখ লাখ টাকা। পূর্ববর্তী অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৬৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিজেএমসির লোকসান কমেছে ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের মিলসমূহের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন মূল্যায়ন সভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিজেএমসিকে আত্মনির্ভরশীল সরকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মৌসুমের শুরুতেই পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, পাট ক্রয়-বিক্রয় সহজীকরণ ও এসএমএস ভিত্তিক পাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকরণ, কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রফতানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেএমসির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। বিজেএমসির দুর্নীতি নির্মূল করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বিজেএমসির পূর্বের প্রচলিত দুর্নীতি ও অদক্ষতার অবসান ঘটেছে। লোকসান হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে জানানো হয়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাটক্রয় কেন্দ্রর পরিমান ব্যাপকভাবে কমানে হয়। এবছর পাটক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৪টি, যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাটক্রয় কেন্দ্রর পরিমাণ ছিল ১৪৭টি। প্রতিবছরের ন্যায় খোলাপাটের পরিবর্তে গত বছর বেল আকারে গুণগতমানের পাট ক্রয় করা হয়। যাতে করে কম দামে ভালমানের পাট ক্রয় যেমনিভাবে সম্ভব হয়েছে তেমনি এ খাতে দুর্নীতি পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। সভায় জানানো হয়, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এ নির্ধারিত ১৭টি পণ্য পরিবহন ও সংরক্ষণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরিণভাবে পাট পণ্যে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে প্রত্যেকটি মিল ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও আলাদাভাবে প্রত্যেকটি মিলের লাভ-লোকসানের হিসাব উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রত্যকটি মিলের কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনিক ব্যবস্থা কঠোর হওয়ায় ও সার্বক্ষণিক তদারকির কারণে মোটাদাগের দুর্নীতি যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারাবাহিক লোকসান সম্পর্কে বিজেএমসির কিছু যৌক্তিক কারণ হলো, কারখানাগুলোয় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করছে। যাদের মজুরি কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি প্রদান করতে হয়। বিশ্ববাজারে চাহিদার সমস্যার কারণে পাটজাত পণ্য রফতানি পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে বিজেএমসিকে অর্থসঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। অর্থসঙ্কট থাকায় সময়মতো কাঁচা পাট কেনা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে বিজেএমসি ধারাবাহিক লোকসানের মুখে পড়েছে। এ সম্পর্কে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বাস্তবভিত্তিক নানামুখী পদক্ষেপ। বিজেএমসির মিলসমূহ দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মিলগুলো চীন ও অন্যান্য দেশের সহায়তায় আধুনিকায়ন করার জন্য ইতোমধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাট থেকে অমিত সম্ভাবনাময় চারকোল, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল, পাট পাতার কোমল পানীয়, নদী ভাঙ্গন রোধে পরিবেশ বান্ধব জুট জ্ওি টেক্সটাইল, পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উৎপাদনের মাধ্যমে পাটখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
×