ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন রানাতুঙ্গা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৫ জুলাই ২০১৭

২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন রানাতুঙ্গা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১১ সালের বিশ্বকাপ চলাকালেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটারদের ওপর ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছিল। বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে ৬ বছর হয়ে গেছে। এরপর আরেকটি বিশ্বকাপও হয়েছে। এখন এসে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা আবার ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত ও শ্রীলঙ্কা খেলেছে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে ৬ উইকেটে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। কুমার সাঙ্গাকারার নেতৃত্বাধীন দলটি দুর্দান্ত খেলেও হারে। কেন? সন্দেহ ম্যাচ গড়াপেটা হয়েছে। তাই রানাতুঙ্গা তদন্তের দাবি তুলেছেন। এ নিয়ে আগে থেকেই শ্রীলঙ্কার দুই সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা ও অর্জুনা রানাতুঙ্গার বাকবিত-া চরমে উঠেছিল। তা যেন রানাতুঙ্গার এ দাবির পরে আরও বাড়ল। বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন ধারাভাষ্য কক্ষে ছিলেন রানাতুঙ্গা। রানাতুঙ্গার বিশ্বাস, সাঙ্গাকারার নেতৃত্বে ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দুর্বল পারফর্মেন্স ছিল সন্দেহজনক। রানাতুঙ্গা জানান, ‘বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। যে ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হেরেছিল ভারতের কাছে। যে মন্ত্রীরা এখন কথা বলছেন তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা কথার চেয়ে কাজ বেশি করছেন। ওইদিন কি ঘটেছিল, এ খেলোয়াড়দের অপরাধ স্বীকার করার সময় এসে গেছে। তদন্ত করতে হবে এ নিয়ে।’ ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এ অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আমি ওই সময় ভারতে ছিলাম। হারের পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এ হার নিয়ে সন্দেহ জেগেছিল কিছুক্ষণ পর। আমি খুব শীঘ্রই প্রমাণসহ এসব হাজির করব। আপনাদের যদি কোন তদন্ত করার প্রয়োজন থাকে তবে এটা নিয়ে করতে পারেন।’ দল ধারাবাহিক থাকলেও ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের জন্য একাদশে চারটি পরিবর্তন এনেছিল শ্রীলঙ্কা। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, রঙ্গনা হেরাথ, অজন্থা মেন্ডিস ও চামারা সিলভা জায়গা করে দিয়েছিলেন থিসারা পেরেরা, সুরজ রনদিভ, নুয়ান কুলাসেকারা ও চামারা কাপুগেদারাকে। ৫০ ওভারে তাদের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৬ উইকেটে ২৭৪ রান। অথচ মাহেলা জয়াবর্ধনের ব্যাটে এসেছিল অপরাজিত ১০৩ রান। লঙ্কান বোলাররা ৩১ রানের মধ্যে বীরেন্দর শেবাগ ও শচীন টেন্ডুলকরকে ফিরিয়ে বোলিংয়েও ভাল শুরু করেছিল। কিন্তু গৌতম গম্ভীর ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ৯০ ছাড়ানো ইনিংসে ৬ উইকেটে হেরে যায় তারা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওইদিন শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। এরপর হয়ে গেছে আরেকটি বিশ্বকাপ। কিন্তু ওই ম্যাচ নিয়ে এতদিন প্রশ্ন তোলেনি কেউ। তবে এর শুরুটা হয়েছে সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনেকে নিয়ে রানাতুঙ্গার বিতর্কিত মন্তব্যের পর। বর্তমান বন্দর ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী বলেছিলেন, সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে তরুণদের দেখভাল করার সংস্কৃতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর এ কারণে তাদের অবসরের পর দেশের ক্রিকেট ধ্বংসের মুখে। যার সর্বশেষ পরিণতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হার। এ সমালোচনা হাল্কাভাবে নেননি সাঙ্গাকারা। আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাবেক অধিনায়ককে জবাব দিয়েছেন তিনি। যার রেশ ধরে ছয় বছর আগের ফাইনালের তদন্তের দাবি তুলেছেন রানাতুঙ্গা। অথচ যখন ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ জিতল শ্রীলঙ্কা, তখন সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনের অবসর নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন রানাতুঙ্গা। তখন বলেন, ‘কখন তাদের যাওয়ার সঠিক সময় এই ব্যাপারটি ক্রিকেটাররা আর সবার চেয়ে ভাল বোঝে। পূর্বেও আমরা দেখেছি টি২০ তরুণদের খেলা। আমি নিশ্চিত যে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এখন রানাতুঙ্গাই ২০১১ সালের বিশ্বকাপের তদন্ত দাবি করছেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ চলার সময়ই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। তখন ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে উত্তাল ছিল শ্রীলঙ্কা। বিতর্কের আগুন জ্বেলেছে শ্রীলঙ্কারই আইটিএন নামের একটি টেলিভিশন চ্যানেল। মাহেলা জয়াবর্ধনে ও থিলান সামারাবিরার বিপক্ষে ‘্যাচ ফিক্সিং’এর অভিযোগ তুলেছে তারা। ওই খবরে জয়াবর্ধনে-সামারাবিরা তো খেপেছেনই, এমনকি দলের নির্ভরযোগ্য দুই ক্রিকেটারের দেশপ্রেম ও ক্রিকেট-নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলা আইটিএনের বিপক্ষে কড়া অবস্থানও নেয় শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)। এসএলসি তখন জানায়, ‘দেশের একটি নেতৃস্থানীয় টিভি চ্যানেলের বিশেষ অনুষ্ঠানে এ ধরনের সংবাদ প্রচার হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। এমনকি চ্যানেলটির দেয়া খবর আমাদের দুই ক্রিকেটার ইচ্ছাকৃতভাবে বাজে ব্যাটিং করেছে যা এই দু’জনের ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা বলছে। বিশ্বকাপ চলাকালে ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে এমন ভিত্তিহীন ও বানোয়াট খবর প্রচারকারীদের এসএলসি ধিক্কার জানাচ্ছে।’ রানাতুঙ্গাও তখন হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘সরকার নিয়ন্ত্রিত চ্যানেলটি এ খবর প্রচার করায় আমি আরও বেশি হতাশ।’ তবে আসল সত্যটা বের করার কথা তখনও বলেছিলেন রানাতুঙ্গা, ‘আমাদের আসল সত্যটা খুঁজে বের করতে হবে। কোন উদ্দেশ্যে, কার প্ররোচণায় চ্যানেলটি এ ধরনের খবর প্রচার করল তা জানতে হবে আমাদের।’ এখন রানাতুঙ্গা জোর দিয়েই তদন্তের দাবি তুলছেন।
×