ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সগৌরবে চলছে রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৩ জুলাই ২০১৭

সগৌরবে চলছে রাজনীতি

সম্প্রতি বাংলা সিনেমার জগতে বেশ আলোচিত একজন সফল তারকা এবং ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উজ্জ্বল এক অধ্যায়ের নাম অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে তার অভিনীত প্রায় সত্তরটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। অধিকাংশ ছবিই ব্যবসায়িক বিচারে সফল। মান-অভিমান থেকে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তিনবার আড়াল হয়েছেন এ নায়িকা। আড়াল ভেঙে তিন বারই চমক নিয়ে হাজির হয়েছেন। প্রথমবার শাকিবের সঙ্গে অভিমান, দ্বিতীয়বার জিরো ফিগারের চমক আর তৃতীয় বার বিয়ের খবর ও সন্তান জয়কে নিয়ে। বর্তমানে সন্তান ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। পরিবার, সন্তান, ক্যারিয়ার আর নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত সফল সিনেমা ‘রাজনীতি’ নিয়ে কথা বললেন আনন্দ কণ্ঠের সঙ্গে। অভিনয়ে না থাকলেও নানা বিষয়ে আলোচনায় আছেন এ নায়িকা। বিয়ের পর অপু বিশ্বাস থেকে হয়েছেন অপু ইসলাম খান। নম্বর ওয়ান নায়িকা হলেও চলনে-বলনে একেবারে পুরো অবয়বে বাঙালীয়ানা স্পষ্ট। নায়িকা হওয়ার আগে থেকেই একজন বাঙালী মেয়ের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য থাকে তা তার মধ্যেও বিদ্যমান। সুপার হিরোইন এবং দেশের সুপারস্টারের স্ত্রী হওয়ার পরও এ বৈশিষ্ট্যেই আটকে আছেন অপু। ২০০৫ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘কাল সকালে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন অপু। এতে শাবনুর ও ফেরদৌসের সঙ্গে দ্বিতীয় সারির নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন তিনি। পরের বছর এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে প্রধান নায়িকা হয়ে বড়পর্দায় হাজির হন। এ ছবির মাধ্যমেই ঘুরে যায় অপুর ভাগ্যের চাকা। ছবিটি ব্যবসা সফল হয় এবং অপু বিশ্বাস রাতারাতি তারকা বনে যান। বলা হয়ে থাকে সালমান শাহ শাবনুরের পর শাকিব-অপু জুটিই দর্শকদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পান। এ ছাড়া মাই নেম ইজ খান, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, ভালোবাসা এক্সপ্রেস, সেরা নায়ক, দুই পৃথিবী, ডেয়ারিং লাভার, হিটম্যান, হিরো : দ্য সুপারস্টারসহ মোট আশিটি ছবি মুক্তি পায় তার। এত গেল ছবির ফিরিস্তি। এর বাইরেও নানা সময়ে নানা বিষয়ে আলোচনায় থেকেছেন এ নায়িকা। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে হুট করে আড়াল হয়ে যান অপু। মূলত পারিবারিক কারণেই তার এ আড়াল হওয়া। ২০১৬ সালে হঠাৎ করে তৃতীয়বারের মতো নিখোঁজ হন। অবশেষে ফুটফুটে সন্তান নিয়ে হাজির হন এ তারকা। এসেই জানান ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ছেলে সন্তান হয়েছে তার। সন্তানের নাম আব্রাম খান জয়। ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা শাকিব খানকে ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল ভালবেসে বিয়ে করেন তিনি। এরইমধ্যে তারা পার করেছেন তাদের নবম বিবাহ বার্ষিকী। অতি গোপনীয়তায় বিয়ের কাজ সারেন ৭০ ছবিতে কাজ করা এ জুটি। সন্তানসহ প্রকাশ্যে আসায় শাকিবের সঙ্গে কিছুটা মন কষাকষি চললেও অবশেষে মিটে যায় সব। এখন সন্তান আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন এ নায়িকা। আর ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। পুরোদমে দর্শকরা আপনাকে আবার কবে থেকে পাচ্ছেন? আনন্দকণ্ঠের এমন প্রশ্নের উওরে অপু বলেন, ইনশাল্লাহ এক-দেড় মাস পর নতুন রূপে নতুন-পুরনো দাপট নিয়ে চলচ্চিত্রে ফিরব। ভক্তরাও প্রিয় এ নায়িকার ফেরার পথ চেয়েই আছেন। এখন কেবল দেখার অপেক্ষা। সংসারের ব্যস্ততা সামলে কবে নতুন ছবির সুখবর দেন এ ঢালিউড কুইন। এবারের ঈদে মুক্তি পায় অপু বিশ্বাসের একমাত্র খাঁটি দেশীয় ছবি রাজনীতি। কিন্তু মুক্তির সময় ছবিটি যে এতটা রাজনীতির শিকার হবে, সেটি মুক্তির আগেও টের পাননি ছবিটির নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী কিংবা কলাকুশলীরা। এবারের ঈদে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এরমধ্যে একমাত্র ১০০% দেশীয় প্রযোজনার বিগ বাজেটের ছবি ‘রাজনীতি’। যাতে জুটি বেঁধেছেন ‘শাকিব-অপু’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন তরুণ মেধাবী নির্মাতা বুলবুল বিশ্বাস। আর ঈদের ছবিতে একমাত্র বাংলাদেশী প্রধান নায়িকাও ছিলেন অপু। অন্য দুটি যৌথ প্রযোজনার বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘নবাব’ ও ‘বস-টু’। প্রথম চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে সর্বনিম্ন ৪০টি প্রেক্ষাগৃহে। অন্য দুটি পেয়েছে যথাক্রমে ১২৫ ও ১১২টি প্রেক্ষাগৃহে। এদিকে ঈদের তৃতীয় সপ্তাহ এসেও ‘রাজনীতি’ ছবিটি দর্শক ও হল মালিকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন, অনেক রাজনীতির পরও ‘রাজনীতি’র জয়! আবার এও বলছেন, যৌথ প্রযোজনার কাছে হারবে না দেশীয় ‘রাজনীতি’। দেশের চলচ্চিত্রের সফল জুটি শাকিব খান-অপু বিশ্বাস দীর্ঘদিন পর দেশের পর্দায় ফিরে এসেছেন। তাই এ ছবিটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষদের আগ্রহ একটু বেশিই। যা সপ্তাহের এক একটি দিন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টের পাওয়া যাচ্ছে। দেশীয় চলচ্চিত্রের দুর্দিনে চলচ্চিত্রটি মুক্তিতে নতুন আশা সঞ্চারও হয়েছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। চলচ্চিত্রটির প্রচারে অপু বিশ্বাসকে বেশ সরব দেখা গিয়েছে। কিন্তু ছবিটি নিয়ে কোন কথাই বলেননি শাকিব। এই ঈদে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত বিতর্কিত ছবি ‘নবাব’। যৌথ প্রযোজনার দুটি ছবির দাপটে ঢাকায় একটি হল পেয়েছে ‘রাজনীতি’। যার ফলে অপু বিশ্বাস সন্তান জয়কে নিয়ে স্বচক্ষে ছবিটি দেখতে পারেননি। এ কারণে কিছুটা অভিমানও প্রকাশ করেছেন এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে আমার সিনেমাটির সঙ্গে অনেক বড় বড় বাজেটের দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে একটি মাত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবিগুলো মুক্তির কিছু দিন আগে একটি ঘটনার কারণে প্রেক্ষাগৃহগুলো ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। এটা সবার কমবেশি জানা। এটাকে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির একতা বলে না। আর ‘রাজনীতি’ কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কেউ না। তাদের একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সুন্দর একটি সিনেমা সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারল না। এটা আসলে মাঝে মাঝে ভাবায় নিজেকে।’ কিন্তু যে কয়েকটা হলেই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে সেখান থেকে আশানুরূপ দর্শকদের মন্তব্য পাচ্ছেন অপু। এমনটা মন্তব্য করে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ইচ্ছে ছিল ঈদের দিন সকালে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে আমার ছেলেকে নিয়ে সিনেমাটি দেখতে যাব। কারণ ওর সঙ্গে এটা আমার প্রথম ঈদ। তার বাবা-মায়ের রক্ত যেখান থেকে তৈরি, সে জায়গাগুলো আমার ছেলেকে না দেখালে কি হয়? সেটি তো আর হলো না। সে আশাটা তো আর পূরণ হলো না। এটা আমার জন্য বেশ কষ্টের। তবে আমি কখনও হতাশ হই না। যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, যত বাধা আসবে, সেগুলো দূর করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি সেভাবেই পথ চলি।’ এদিকে যৌথ প্রযোজনা দুটি ছবির দখলে বাংলাদেশের ২৩৫টি হলো! আর সেখানে রাজনীতির দখলে মাত্র ৪০টি। তবে হল সংখ্যা কম হলেও দর্শকই রাজনীতি দিয়ে তাদের জবাব দিচ্ছে। রাজনীতি যে হল মালিকদের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করতে সক্ষম হয়েছেন তা ইতোমধ্যে বোঝা যাচ্ছে। শুরুর দিন থেকেই রুপালি পর্দা কাঁপিয়ে যাচ্ছে সিনেমাটি। মুক্তির পর থেকেই প্রতিটা হলই হাউসফুল যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাস আনন্দ কণ্ঠকে বলেন, অনেক রাজনীতির পর ‘রাজনীতি’র জয় হয়েছে। এমনটা তো বলাই যায়। এটা তো হওয়ারই কথা ছিল। আমি তো আমার দর্শকদের কোন ধোঁকা দিয়ে কোন কাজ করিনি। সেহেতু দর্শক কেন আমাকে ধোঁকা দেবে? আমি আমার দেশের জন্য কাজ করেছি। দর্শক যে ধরনের চলচ্চিত্র দেখতে চায়। আমি তার সর্বোচ্চ আমার মতো করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। সেদিক থেকে আমি বলব বিগত কয়েক বছরের সবচেয়ে ব্যয় বহুল ছবি ‘রাজনীতি’। আর দর্শক যে জায়গাটার অভাব দীর্ঘদিন ধরে অনুভব করে আসছে। সেটি হলো দেশের গল্প তারা পায় না। সে জায়গা থেকে রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্পের একটি ছবি। যেটা দর্শক লুফে নিয়েছে। এটা তো অবধারিত ছিল। এতো প্রতিকূলতার পরও দর্শক বিষয়টিকে গ্রহণ করেছে। আমি আমার জায়গায় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।’ রাজনীতি মুক্তির মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৭-এর প্রথম পর্বেই ৪টা নমিনেশন পেয়েছে ব্যাপারটি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উওরে অপু বলেন, এটা সত্যিই অনেক আনন্দের। ভাল কিছু তো ভাল হবেই। যৌথ প্রয়োজনার ছবিগুলো খুব একটা নিয়ম মানছে না বললেই চলে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অপু বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন মতামত নেই। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস এখন আর শুধু নায়িকা নন। তার আরেকটি পরিচয়, তিনি এখন আব্রামের মা। নায়িকাদের জন্য মা হওয়া একটু বেশিই যেন চ্যালেঞ্জিং। ছিপছিপে গড়নের গ্ল্যামারাস নায়িকাদের মাতৃত্বকালীন বাড়তি মেদ গ্রহণ করতে পারেন না অনেক ভক্তই। সেদিক থেকে অপু বিশ্বাসকে বেশ ভাগ্যবতীই বলা চলে। কারণ মা হওয়ার পর ভক্তরা যেন তাকে আরও বেশি ভালবেসে গ্রহণ করেছেন। অনেক নারীই মা হওয়ার পরে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। কিন্তু এদিক থেকে একেবারেই ভিন্ন অপু। মা হওয়ার পর আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী তিনি। অপুর কাছে জানতে চাওয়া হলো, তার এই আত্মবিশ্বাসের গোপন রহস্য কী? তিনি বললেন, ‘মা হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আমি দেশের বাইরের বড় মডেল এবং নায়িকাদের লাইফস্টাইল সম্পর্কে জেনেছি। তারা কীভাবে নিজেদের ফিরিয়ে এনেছে, সেই সম্পর্কে পড়েছি। সেগুলো পড়েই আমি বুঝতে পেড়েছি, নিজেকে হারিয়ে ফেলা যাবে না। মেইনটেইন করতে হবে।’ অপু বিশ্বাস আরও বলেন, ‘মা হওয়া তো কোন বাধা না। মা হয়েছি মানেই ক্যারিয়ার শেষ, এটা ভুল ধারণা। একটা মেয়ের ছোট থেকে বেড়ে ওঠার অন্য সব ধাপের মতোই এটাও একটা ন্যাচারাল ধাপ।’ চলচ্চিত্রে নিজেকে ফিরিয়ে আনার জন্য পুরোদমে ব্যায়াম এবং হেলদি ডায়েট শুরু করেছেন অপু। সেই সঙ্গে ত্বক এবং চুলের যতœ নিতেও ভুলছেন না। অপু জানালেন, মিডিয়া থেকে কিছু দিনের জন্য বিরতি নিচ্ছেন তিনি। আগের চাইতে আরও বেশি গ্ল্যামারাস, ফিট এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ফিরে আসার জন্যই এই বিরতি নিচ্ছেন তিনি।
×