ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাকালের ৩৪ বছর পূর্তি কাল

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৩ জুলাই ২০১৭

মহাকালের ৩৪ বছর পূর্তি কাল

সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশের অন্যতম নন্দিত নাট্য সংগঠন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ৩৪ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। নাট্য আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখা এই নাট্যদলটি ‘দেওয়ান ভাবনা’, ‘সুকন্যার পালা’, ‘ঘুম নেই’, ‘অহম তমসায়’ ‘শিখন্ডী কথা’, ‘নিশিমন বিসর্জন’, ‘নীলাখ্যান’সহ অসংখ্যা নন্দিত প্রযোজনা উপহার দিয়েছে। সব সময় নীরিক্ষামূলক প্রযোজনা মঞ্চে এনে নতুন দর্শক তৈরিতে কাজ করেছে মহাকাল। বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতির প্রতি অবিচল আনুগত্য নিয়ে ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে মহাকাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত দলটি৩৯টি প্রযোজনার ৯৭৭টি প্রদর্শনী করেছে। এর মধ্যে ৩টি নাট্য প্রযোজনার যথাক্রমে ময়মনসিংহ গীতিকা ‘দেওয়ান ভাবনা’ অবলম্বনে এস এম সোলায়মান রূপান্তরিত ও হুমায়ূন কবীর হিমু নির্দেশিত ‘সুনাই কইন্যার পালা’ নাটকের ১০৫টি প্রদর্শনী, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ রচিত এবং জন মার্টিন নির্দেশিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা ‘ঘুমনেই’ নাটকের ১০৬টি প্রদর্শনী, বাংলাদেশে প্রথম হিজড়া সমাজের মানুষদের সুখ-দুঃখ কথামালায় গাঁথা গবেষণা নাট্য আনন জামান রচিত ও ড. রশীদ হারুন নির্দেশিত ‘শিখন্ডী কথা’ নাটকে ১৭০টি প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’ আশ্রয়ে আনন জামান রচিত এবং আশিক রহমান লিয়ন নির্দেশিত ‘নিশিমন-বিসর্জন’ নাটকের ৫৮টি, আনন জামান রচিত এবং আজাদ আবুল কালাম নির্দেশিত ‘অহম তমসায়’ নাটকের ৩৫টি প্রদির্শনী এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ আশ্রয়ে আনন জামান রচিত এবং ড. ইউসুফ হাসান অর্ক নির্দেশিত ’নীলাখ্যান’ নাটকের ২৭টি প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে। ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে মহাকালের প্রধান মীর জাহিদ হাসান বলেন, মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের গর্বিত পথচলার চৌত্রিশটি শ্রাবণের থই থই আকাশ পেরিয়ে উনচল্লিশটি নাটকের কাহিনী, সংলাপ, সঙ্গীত, চরিত্র, সেট, প্রপস, পোস্টার, স্যুভেন্যুর এবং আরও নানা উপকরণের স্মৃতির তর্পণ নিয়ে দর্শকের কাছে হাত বাড়িয়েছি বারবারÑ দর্শকের কাছাকাছি থেকেছি গিয়েছি। দর্শক দেবতারা মুখ ফেরায়নি, বুকে তুলে নিয়েছে, আশির্বচন করেছে। আনন্দ পেয়েছি, গর্বে বুক ভরে গিয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের অর্জন-দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের নিঃশর্ত সমর্থন ও অনুপ্রেরণা। আমরা তাদের প্রতি বিনম্র চিত্তে কৃতজ্ঞ। প্রয়াসী শিল্প স্বাধীনতা যখন শঙ্কিত অসুন্দরের ছায়ায়, শুভবুদ্ধি চর্চা যখন বিঘিœত কুৎসিত কুপম-ুক অপশক্তির উল্লাসে তখনই এই উত্তপ্ত স্বদেশে জন্ম ‘মহাকাল’-এর। ক’জন স্বপ্নসাহসী যুবকের শিল্প সংগ্রামের প্রতিস্পর্ধী প্রয়াস মহকাল। চৌত্রিশ বছরে দাঁড়িয়েও মহাকাল প্রস্তুত, পরিণত আগামীর সংগ্রামের জন্য। মহাকালের চৌত্রিশ বছরÑ নিরলস প্রবাহমানতার, নিরবচ্ছিন্ন মঞ্চ সম্পৃক্ততার। উচ্চকিত হবার, উচ্ছ্বসিত হওয়ার। সকল অস্পষ্টতা, প্রতিকূলতা ও বৈরিতাকে পরাভূত করা চৌত্রিশ বছর। মহাকাল তার কর্মযজ্ঞে সুস্থির, স্বতন্ত্র ও লক্ষাভিমুখী। জীবনের পলে পলে লেপ্টে থাকা সত্যাসত্য অšে¦ষণে মহাকাল বরাবরই নির্ভয়, নিঃসঙ্কোচ। পণ্যমনস্কতা আর আকাশ বিলাসী স্বপ্নাচারে ক্রমশ নিমজ্জমান নাগরিক রুচিবোধ। মঞ্চনাটকের বাস্তবতা সেখানে ভীষণভাবে সঙ্কটাপন্ন। প্রেক্ষিত বিবেচনায় মঞ্চ চর্চায় নিরবচ্ছিন্ন চৌত্রিশ বছর নিঃসন্দেহে আমাদের সাফল্য অর্জন। মঞ্চের প্রতি মহাকালের ব্যস্টিক ও সমষ্টিক আনুগত্যে রচিত হয়েছে এ সাফল্যের ভিত। চৌত্রিশ বছরে সকল সহযোদ্ধার মেধা, শ্রম ও ঘামের প্রতি মহাকাল শ্রদ্ধাবনত। চৌত্রিশ বছরের পথচলায় মহাকাল অর্জন করেছে বন্ধুপ্রতিম সংগঠনের অনুকূল সাহচর্য। অগ্রজ নাট্যজন ও সংগঠন মহাকালের এ দীর্ঘ পথচলায় অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বিজ্ঞ উপদেশকবৃন্দ, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান, পৃষ্ঠপোষকরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে, তাদের প্রতি মহাকাল বিনম্রচিত্তে কৃতজ্ঞ। এছাড়া মহাকালকে নিরন্তর নাট্য সংগ্রামে সাহসী ও ধাবমান করেছেÑ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মী বন্ধুরা। আর এ পথ পাড়ি দিতে নেপথ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ গার্লস গাইড এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। মীর জাহিদ বলেন, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই মহাকালের অভিপ্রায় ছিল রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নানারকম সাম্প্রতিক সঙ্কট উপজীব্য নাট্য প্রযোজনা মঞ্চে নিয়ে আসা। সংগ্রামী নারী আসমানী থেকে আরম্ভ করে মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত ক্যানভাস, গীতিকার নারী, তাঁত শিল্পের কারিগর, প্রান্তিক জনমানুষ, লিঙ্গ প্রতিবন্ধী, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জঙ্গীবাদের মতো বিষয় ও নানামাত্রিক চরিত্র উঠে এসেছে মহাকালের নাট্য আয়োজনে। মহাকালের অভীষ্ট এই যে, নাটকের লেখ্যরীতি ও প্রায়োগিক আঙ্গিক নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে শিল্পতীর্থভূমে অভিযাত্রা। তাই মহাকাল নাটকের কাহিনী, চরিত্র, সংলাপ, সঙ্গীত, নৃত্য, সেট, প্রপস, আলো, অঙ্গসাজ, পোশাক- সামগ্রিক প্রায়োগিক বিষয়ে নানামাত্রিক গবেষণার প্রয়াস রেখেছে। এই দীর্ঘ সময়ে প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে দলের প্রধান মীর জাহিদ বলেন, সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেব কষতে গেলে শিল্পপ্রয়াসের ধারাবাহিকতাকে ছোট করা হবে। মহাকাল গর্বিত তার কর্মময় চৌত্রিশ বছরের জন্য। মহাকালের এঅতিক্রান্ত চৌত্রিশটি শ্রাবণÑ নানামাত্রিক অভিজ্ঞতা আর আবেগ ও ভালবাসার চৌত্রিশটি কদমের ফুল। সাদা আকাশে যাক ভেসে যাক অমল সাদা মেঘÑ মাটি ফুড়ে উঠুক নতুন ঘাসের পাতা আর অনামা ফুল। বাঙলা নাটকের মঙ্গল হোকÑ আরাধ্য শিল্পতীর্থে পৌঁছে যাক। এদিকে ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ হলে আলোচনা ও সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের স্মরণ করবে দলের কর্মীরা। শেষে দলের ‘নীলাখ্যান’ নাটকের মঞ্চায়ন হবে। অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছ। স্মৃতিচারণ করবেন মহাকালের প্রধান মীর জাহিদ হাসান। সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহনেওয়াজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিগত দুই সালে প্রয়াত হওয়া সহযোদ্ধা আকলিমা খান টগর, গাজী সাইফুল হায়াত, আনসার আহমেদ, কানু বাবু এবং সাহিদ হোসেন ডলারকে স্মরণ করা হবে। সন্ধ্যা ৭-১৫টায় কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ আশ্রয়ে আনন জামান রচিত এবং ড. ইউসুফ হাসান অর্ক নির্দেশিত ‘নীলাখ্যান’ নাটকের আটাশতম মঞ্চায়ন হবে।
×