ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেজিতে দাম কমেছে ৪ থেকে ৫ টাকা

শুল্কহার কমায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চালের আমদানি বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৬ জুলাই ২০১৭

শুল্কহার কমায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চালের আমদানি বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ ভারত থেকে দেশে চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আমদানিকৃত চালের দাম কমেছে ৪ থেকে ৫ টাকা। নতুন করে চাল আমদানির জন্য প্রচুর পরিমাণে এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। এতে দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে আটকা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টন চাল। এসব চাল দেশে প্রবেশ করলে চালের দাম আরও কিছুটা কমবে বলে বন্দরের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন। এদিকে স্থিতিশীল রয়েছে দেশীয় চালের দাম। এর আগে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ থাকায় ও পড়তা না থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির পরিমাণ একেবারে কমে গিয়েছিল। এবারে বোরো মৌসুমে দেশের হাওড় অঞ্চলে বন্যায় ও ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দেশে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে করে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে চালের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখতে গত ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে বন্দর দিয়ে চালের আমদানি বেড়ে গেছে। বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের কয়েক চাল আমদানিকারক জানান, চালের জন্য গোটা দেশের কাছে হিলি স্থলবন্দর সুপরিচিত। ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাল আমদানি হতো হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। দেশের বাজারে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল গত বছর থেকে। এতে করে ভারত থেকে চাল আমদানিতে পড়তা না থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি একেবারে কমে গিয়েছিল। মাঝে মধ্যে দু-এক গাড়ি চাল আমদানি হতো। ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে চাল ভারত থেকে দেশে আমদানি হচ্ছে। এতে করে ইতোমধ্যেই বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ চাল দেশে এসেছে তাতে করে দেশের বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা করে কমেছে। এর ওপর আমদানিকারকরা নতুন করে চাল আমদানির জন্য প্রচুর পরিমাণে চালের এলসি খুলেছেন। তারা বলেন, চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে আমাদের আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে আমরা মনে করি এটি আরও এক থেকে দুই মাস আগে নিলে আমাদের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য বাড়তি সুবিধা হতো। চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর কারণে ভারত থেকে চাল আমদানি করে আমরা প্রতি কেজি চাল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা দরে বিক্রি করতে পারব। যে চাল আগে ৪৫ টাকা থেকে ৪৬ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল। এতে করে দেশের বাজারে চালের দাম আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে। হিলি বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা অনুপ বসাক জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে হিলিতে প্রতি কেজিতে আমদানিকৃত চালের দাম কমেছে ৪ থেকে ৫ টাকা করে। এর মূল কারণ ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর। আগে যে স্বর্ণা চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ৪৪ টাকা কেজি দরে এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও রতœা জাতের চাল আগে বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকা থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪১ টাকা কেজি দরে। চাল আমদানির ধারা এভাবে অব্যাহত থাকলে চালের দাম আরও কিছুটা কমবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, বাজারে আমদানিকৃত চালের দাম কমলেও দেশি জাতের চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে আটাশ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪১ টাকা থেকে ৪২ টাকা। পাইজাম জাতের চাল ৫০ টাকা, মিনিকেট জাতের চাল ৫২ টাকা, নাজিরশাইল জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর কারণে বর্তমানে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক করে চাল আমদানি হচ্ছে। এবং আমদানিকৃত সেসব চাল রেগুলার বন্দর থেকে খালাস করে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। এভাবে যদি ভারত থেকে দেশে চাল আমদানি হয় এবং বন্দর থেকে খালাস অব্যাহত থাকে তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল হবে এবং সাধারণ ক্রেতা উপকৃত হবে।
×