ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চয়তায় অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১ জুলাই ২০১৭

অনিশ্চয়তায় অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বেকার হয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা, স্টিভেন স্মিথরা। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের (সিএ) সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের চুক্তি শেষ হয়ে গেল। তাতেই বেকারত্বে স্থান পেলেন অসি ক্রিকেটাররা। আর তাতে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আসার কথা ছিল। প্রথম টেস্ট ২৭ আগস্ট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এবং দ্বিতীয় টেস্ট ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরটিও অনিশ্চয়তার চাদরে ঢুকে পড়ল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এনে অসি ক্রিকেটারদের বাংলাদেশে খেলতে পাঠায়নি সিএ। এবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়। এরপর নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে সিএ ক্রিকেটারদের খেলতে পাঠাতেও রাজি হয় সিএ। এমনকি তারা খেলার সূচীও নিশ্চিত করে। কিন্তু এবারও অস্ট্রেলিয়ার খেলতে না আসার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। এবার আর নিরাপত্তা ইস্যু নয়, নিজেদের ঝামেলাতেই বাংলাদেশ সফর ঝুলে যেতে পারে। আর্থিক বিষয় নিয়ে সিএ ও অসি ক্রিকেটারদের মধ্যে চলছে তুমুল ঝামেলা। সেই ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে বাংলাদেশও। বাংলাদেশের ঝামেলাটা হলো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটাররা যদি সিএ’র ক্রিকেটার না থাকেন, তাহলে সফরেই বা কিভাবে আসবেন। শুধু বাংলাদেশ সফরই নয়, অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, এ বছরেই আছে এ্যাশেজ। এ সিরিজগুলোও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। অস্ট্রেলীয় সংবাদ মাধ্যমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের শেষ বিচারের দিনও কোন সুরাহা হয়নি। কাল ছিল ক্রিকেটারদের চুক্তি নবায়নের শেষ দিন। কিন্তু এদিনও চুক্তি নবায়ন হলো না। তাতে করে ২৩০ ক্রিকেটার বেকার হয়ে পড়ল। সকালে যখন ক্রিকেটাররা ঘুম থেকে উঠবেন, তখন তারা বেকার থাকবেন। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের ক্রিকেটার আর নন তারা। এমনকি ‘এ’ দল, বয়সভিত্তিক দলগুলোর ক্রিকেটাররাও সিএ’র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। বোর্ডের সঙ্গে কোন চুক্তিই তাদের নেই। আর চুক্তি না থাকলে ক্রিকেটাররা বোর্ডের অনুমতি ছাড়া কোন সফর কিংবা ম্যাচও খেলতে পারবেন না। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সঙ্গে ক্রিকেটারদের সংগঠনের (এসিএ) বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা নন; সম্পৃক্ত সারাদেশের ক্রিকেটার। ফলে সিএ’র পক্ষে বিকল্প কোন দলও তৈরি করা সম্ভব হবে না। এসিএ’র সঙ্গে ক্রিকেটাররাও যুক্ত থাকেন। এসিএ ও ক্রিকেটারদের দাবি, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই চলুক অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট, যেখানে বোর্ডের আয়ের একটা অংশ ক্রিকেটারদের দেয়া হয়। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ভাঙতে চায় এই নিয়ম। আয়ের একটা অংশ ছেলে ক্রিকেটারদের দিতে রাজি হলেও, মেয়ে ক্রিকেটারদের এবং যারা ঘরোয়া ক্রিকেটের নিচু পর্যায়ে খেলেন তাদের লভ্যাংশ দিতে রাজি নয় সংস্থাটি। এমনকি নতুন কাঠামো যারা মেনে নেবে না তাদের জন্য জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে অসি ক্রিকেট বোর্ড। পাল্টা হুমকিও এসেছে কয়েক দফায়। ক্রিকেটারদের দাবি মেনে নেয়া না হলে এমনকি ঘরের মাঠের আগামী এ্যাশেজ বর্জন করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন অসি ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার। এরপর এসিএ থেকে আসে আরও একটি হুমকি। দাবি মেনে না নিলে দলের সেরা খেলোয়াড়রা বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত টি২০ লীগগুলোকেই নিজেদের প্রধান জীবিকা হিসেবে বেছে নিতে পারেন বলে মত দিয়েছেন এসিএ’র প্রধান নির্বাহী এ্যালিস্টার নিকোলসন। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ২০ ওভারের টুর্নামেন্ট টি২০ ব্লাস্টের কয়েকটি দল অসি খেলোয়াড়দের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই বছরের শেষদিকে নিজেদের টি২০ লীগ চালু করবে দক্ষিণ আফ্রিকা, তারাও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের দলে পেতে আগ্রহী। এছাড়া আইপিএল তো আছেই। সিএ তাদের অবস্থান থেকে সরে না এলে এই লীগগুলোকে প্রাধান্য দেয়াটাই স্মিথ-ওয়ার্নারদের জন্য স্বাভাবিক হবে জানিয়ে নিকোলসন বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতায় বিশ্বজুড়েই আমাদের ক্রিকেটারদের প্রতি অন্য দেশগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সিএ যদি ক্রিকেটারদের চাকরিহীন করার হুমকি দেয় তবে অন্য দেশগুলো এটাকে একটা বড় সুযোগ হিসেবে দেখবে। সিএ খুব বড় একটা ভুল করতে যাচ্ছে, যেটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। পুরো পরিস্থিতি এর ফলে আরও জটিল হবে।’ ক্রিকেটারদের দাবির যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া দলের মূল খেলোয়াড়রা শুধু নিজেদের জন্য ভাবছে না। তারা এই লড়াই করছে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য, নারী ক্রিকেটের জন্য এবং তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেটের জন্য। তারা শুধু বর্তমান কাঠামোটাই অপরিবর্তিত রাখতে চায়। তারা নিজেদের জন্য ২২.৫ শতাংশ লভ্যাংশ চায়, তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেটের জন্যও ২২.৫ শতাংশ চায়। বাকি ৫৫ শতাংশ পাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যদি লোভী হতো তবে তারা নিজেদের ভাগ নিয়েই খুশি থাকত; কিন্তু তারা অস্ট্রেলিয়ার সব ক্রিকেটারের কথাই চিন্তা করছে। আমি খুশি যে তারা নিজেদের দাবিতে অনড় এবং সবাই একসঙ্গে এটার বিরোধিতা করছে।’ এই বিরোধিতায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটাররা (২৩০ ক্রিকেটার) বেকার হয়ে পড়লেন। দুইপক্ষই তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রিকেটারদের ছাড়া বোর্ড চলবে না, আবার বোর্ড ছাড়া ক্রিকেটাররাও অচল। কিন্তু দুইপক্ষই অনড় অবস্থানে আছে। এই অচলাবস্থা শেষ পর্যন্ত না কাটলে বাংলাদেশ সফর অনিশ্চয়তাতেই ঘিরে থাকবে।
×