ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ ইস্যুতে নিশ্চুপ কোহলি

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১ জুলাই ২০১৭

কোচ ইস্যুতে নিশ্চুপ কোহলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আপাতত কোন প্রধান কোচ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে থাকা এম. ভি শ্রীধরের অধীনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। কিংবদন্তি লেগস্পিনার অনিল কুম্বলে মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে পদত্যাগ করেন। তার কাজের ধরন নিয়ে অপমানজনক কথাই শুধু বলেননি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনায় স্পষ্ট ক্রোধ প্রকাশ করেছেন কোহলি। সে কারণে অনেকেরই সমালোচনার শিকার হয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। এবার তার মুখ বন্ধ রাখার সময় এসেছে। নতুন করে কোচ নিয়োগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আছে বিধিনিষেধ। শুধু ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) চাইলেই কোচ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন কোহলি। কুম্বলের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য টিম ডিরেক্টর ও সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী ছাড়াও আবেদন করেছেন সাবেক বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। সে তালিকায় আছেন বীরেন্দর শেবাগও। এবার নতুন করে আবেদন পাঠিয়েছেন সাবেক পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদও। বোলিং কোচ হিসেবে আগেও ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করেছেন প্রসাদ। ২০০৭ বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং দুই বছরের চুক্তিতে কাজ করেছেন তিনি। এবার প্রধান কোচ হওয়ার জন্যই করলেন আবেদন। এই মুহূর্তে তিনি ভারতের জুনিয়র জাতীয় দলগুলোর প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছর সেপ্টেম্বরে সেটার মেয়ার ফুরিয়ে যাবে। ভারতের হয়ে ৩৩ টেস্ট ও ১৬২ ওয়ানডে খেলেছেন প্রসাদ। তিনিই সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে ভারতের প্রধান কোচ হওয়ার আবেদন করলেন। শেবাগ, শাস্ত্রী ছাড়াও এ পদের জন্য আবেদন করেছেন লালচাঁদ রাজপুত, ডোডা গণেশ, রিচার্ড পাইবাস ও টম মুডি। এ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত কোচ হিসেবে আবেদন করার সময় আছে। আপাতত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কোচবিহীন আছে ভারতীয় দল। এ সফরে আর নতুন কোচ পাচ্ছে না তারা। তবে ২৬ জুলাই শুরু হতে যাওয়া শ্রীলঙ্কা সফরের আগেই নতুন কোচ নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে বিসিসিআই। কোচ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য নিয়ে টালমাটাল হয়ে পড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। এখনও গভীর ক্ষত হয়ে আছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে ফাইনালে শোচনীয়ভাবে ১৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা বরণ করে বিরাট কোহলির দল। সেটার পেছনে নাকি কোচ কুম্বলের সঙ্গে ফাইনালের দুই দিন আগে অধিনায়ক কোহলির তর্কাতর্কিই মূল কারণ। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেট শিকারি হিসেবে কিংবদন্তি কুম্বলেকে রীতিমতো অপমানই করেছেন ওই বৈঠকে কোহলি। ওই সময় সভায় বিসিসিআইয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই কুম্বলের কোচিং স্টাইল বিরক্তিকর বলে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে কোহলি এটাও দাবি করেন দলের কোন ক্রিকেটারই তাকে কোচ হিসেবে পছন্দ করেন না। এখন সব ক্রিকেটারই কোচ হিসেবে ফিরে পেতে চায় রবি শাস্ত্রীকে। অনেকেই মনে করছেন বর্তমানে টিম ডিরেক্টর শাস্ত্রীই আড়াল থেকে এই কলকাঠি নাড়ছেন। কারণ তিনি বেশ কিছুদিন অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব পালন করার পর তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন কুম্বলে। যদিও পূর্ণ মেয়াদে কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন শাস্ত্রী। কিন্তু বিসিসিআইয়ের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি পছন্দ করেছিল কুম্বলেকে। কোহলির এমন অপমানজনক আচরণের কারণে পদত্যাগই করেন কুম্বলে। ৩০ জুন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ ছিল এ সাবেক লেগস্পিনারের। ক্যারিবীয় সফরেও যেতে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোহলির অপমানজনক আচরণ ও কথাবার্তায় শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান তিনি। এবার আর সহজে কোচ বিষয়ে মুখ খুলতে পারবেন না কোহলি। কারণ কুম্বলে ইস্যুতে কথা বলে চরমভাবে ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন তিনি। এমনকি অনেকের তোপের মুখেও পড়ে গেছেন এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। সুনীল গাভাস্কার এমনকি কোহলিসহ বেশ কয়েকজনকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার কথাও বলেছেন দল থেকে। ভারতের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীরাও দাবি করেছেন কোহলির নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হোক। আর এসব কারণেই এবার কোহলির মুখ বন্ধ করার পদ্ধতি গ্রহণ করেছে বিসিসিআই। সে কারণেই ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে কিংবা চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারব না। আমরা দলগতভাবে শুধু কথা বলতে পারি, মতামত জ্ঞাপন করতে পারি যদি বিসিসিআই আমাদের কাছে কিছু জানতে চায়। এটাই একমাত্র পদ্ধতি যার মধ্য দিয়ে আমাদের দল চলে এবং দলগতভাবে সবকিছুকে আমরা সম্মানও করি। আলাদাভাবে কাউকে কখনও কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না, দলগতভাবে মতামত জানতে চাওয়া হয়। আমরা দলগতভাবে বিসিসিআইয়ের কাছে দায়বদ্ধ, তাই সেখান থেকে কিছু না বললে আমাদের কোন বিষয়ে মতামত দেয়ার কিছু নেই।’
×