ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে কেনাকাটা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২১ জুন ২০১৭

অনলাইনে কেনাকাটা বাড়ছে

দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র নেড়ে-চেড়ে দেখে, দাম-দস্তুর করে কেনাকাটা করা বাঙালী এখন অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহী হয়ে ওঠার পাশাপাশি অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও প্রসার ঘটছে অনলাইনে কেনাকাটার। ইন্টারনেট সহজ করে দিচ্ছে ক্রেতার জীবনাচরণ। যানজট ঠেলে এবং ভিড়-ধাক্কাধাক্কি পেরিয়ে কেনাকাটা করতে যাওয়ার ঝক্কি থেকে এই পদ্ধতি রেহাই দিচ্ছে বৈকি। চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ে নিজের অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি পেয়ে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই ব্যবস্থায়। হেন জিনিস নেই যা পাওয়া যায় না। পোশাক, দৃষ্টিনন্দন গহনা; ব্যাগ, প্রসাধন সামগ্রী, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ডাল, চালসহ শাকসবজির পাশাপাশি জায়গা-জমি, ফ্ল্যাট, আসবাবপত্র, মোবাইল, বইপত্র, কম্পিউটার; ইলেক্ট্রনিক পণ্য, নতুন-পুরনো সব ধরনের পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনে। ক্রেতারা ঘরে বসেই পছন্দের এই কেনাকাটায় স্বাভাবিক কারণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হয় না। তেমনি প্রবল বর্ষণে ভিজে একশা হয়ে কাদামাটি মেখে পণ্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে না। পছন্দের পণ্যটাতে ক্লিক করলেই পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতার ঘরে ঘরে যথাসময়ে। জায়গা-জমি থেকে শুরু করে পোশাক সবই এই বাজারে পাওয়া যাওয়ার কারণে ক্রেতারাও খুশি। যানজট থেকে নিষ্কৃতি, সময় বাঁচানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দিন দিন ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে বিভিন্ন মার্কেট থেকে আলাদা আলাদা পণ্য সংগ্রহ করার ঝামেলা থেকে রেহাই মেলে। একই জায়গায় সব ধরনের পণ্য পাওয়ায় যাচাই-বাছাই করার সুযোগও থাকছে। এ জন্য থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ। স্মার্টফোন যুগে এই সংযোগ আরও সহজ হয়েছে। ডিজিটাল যুগে কষ্ট কমিয়ে দিচ্ছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো। পিছিয়ে নেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক। অনলাইন শপিং শুনলেই অনেকেই মনে করেন, টাকা দিতে হবে ডেভিট বা ক্রেডিট কার্ডে। তবে সেই সমস্যাও এখন বলতে গেলে নেই। বেশিরভাগ অনলাইন শপই ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সার্ভিস দিয়ে থাকে। ফলে করতে হচ্ছে না খাটনি। বেঁচে যাচ্ছে সময়। এই আনন্দ এনে দিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। কেনাকাটার এই নয়া সংস্কৃতি নগর জীবনে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দিয়েছে। তবে এর প্রতি আগ্রহটা বেশি তরুণ প্রজন্মের। ২০০৯ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন লেনদেনকে বৈধতা দেয়। সেই সময় থেকে এ দেশে সূচনা হয় ই-কমার্সের। আর এখন দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। অপরদিকে দেশে ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স উদ্যোক্তার সংখ্যা দশ হাজারের বেশি। দেশের ই-কমার্সের প্রায় চল্লিশ ভাগ হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে প্রায় চার কোটি। অবশ্য বিশাল এ ব্যবহারকারীর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত। তাতেও এই মাধ্যমে বছরে পাঁচ শ’ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে এবার বিক্রি বাট্টা বেড়েছে ব্যাপক। এরই মধ্যে কেনাবেচার অঙ্ক তিন শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় ত্রিশ শতাংশ বেশি। চলতি বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক বর্ষণ আর রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়া এবং সীমাহীন যানজটের কারণে অনলাইনের কদর বেড়েছে। ক্যাশব্যাক অফার চলায় বিকাশে দাম ঢোকানো যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে পণ্যের দাম মার্কেটের দামের থেকেও কম থাকায় ক্রেতা আগ্রহী হয়ে উঠছে। দেশী সাইটগুলোতে প্রবাসীরা পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কিনে তা পাঠিয়ে দিতে পারছেন দেশে থাকা প্রিয়জনের কাছে। ডেলিভারির সময় অর্ডার দেয়া পণ্য পেয়ে তা যাচাই করারও সুযোগ রয়েছে। পছন্দসই পণ্য না পেলে অর্ডার বাতিল করা যায়। মুদ্রার এপিঠ ইতিবাচক হলেও অপর পিঠে নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ভুয়া ওয়েবসাইট চালু করে ক্রেতাদের চাহিদা, প্রয়োজন বা সুবিধার কথা বিবেচনা না করে অনেক সময় নিম্নমানের পণ্যও সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে অনেক ফাঁকফোকর থাকায় ক্রেতারা ভোগান্তির শিকারও হন। ব্যাংকের মধ্যমে লেনদেন করার কারণে লেনদেন ফি কেটে নেয়া হয় চার শতাংশ হারে। দেশের অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট বাড়লেও এখনও পর্যন্ত তা সুসংগঠিত নয়। নেই কোন নীতিমালা। সরকারের রাজস্ব আয়ের এই ক্ষেত্রটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ যেন উদাসীন না থাকেন এবং এক্ষেত্রে গণমুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
×