ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি

ঈদে লেনদেন দুই লাখ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৯ জুন ২০১৭

ঈদে লেনদেন দুই লাখ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদকে সামনে রেখে সেজে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব বিপণিবিতান। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে মার্কেটে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় ব্যস্ত। ফলে বাড়ছে ঈদ অর্থনীতি। টাকার অঙ্কে যা প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে ১২ লাখ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোনাস। এ পরিমাণ টাকার সবই ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হয়ে তাকে আরও চাঙা করছে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই ঈদে টাকার প্রবাহ বাড়ে। কারণ, ঈদে মানুষ নানাভাবে টাকা খরচ করে। নতুন পোশাক ছাড়াও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের জন্য খরচ বাড়ায়। ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামের বাড়ি যাওয়া-আসায় খরচ বাড়ে। ঈদে আনন্দ ও ভ্রমণেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করার প্রবণতা দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু নতুন পোশাক কেনাকাটায় যাচ্ছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যুক্ত হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। ধনীদের দেয়া জাকাত ও ফিতরার মাধ্যমে যোগ হচ্ছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। ইফতার ও সেহরি বাবদ যোগ হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ঈদকেন্দ্রিক বিনোদনে যুক্ত হচ্ছে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া পরিবহন খাতে ঈদের ঘরে ফেরা আর কাজে ফেরাতে যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত ৭০০ কোটি টাকা। বিপণি বিতানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের বাজার এখনও জমেনি। মানুষের আনাগোনা থাকলেও বেচা-বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। আগামী সপ্তাহ থেকে বেচাকেনা জমে উঠবে বলে ধারণা করছেন তারা। আর তা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের বাজার। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, বাজার ততই জমে উঠবে। তিনি বলেন, ঈদ-উল ফিতরে মানুষ মূলত পোশাক কিনতে পছন্দ করে বেশি। বিশেষ করে থ্রি পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি কেনার ঝোঁক বেশি থাকে। ঈদের বাজারে মানুষজন যেন দেশীয় পণ্য কেনায় আকৃষ্ট হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেল, ভারতীয় পোশাকে ক্রেতাদের আগ্রহটা বেশি। তবে শাড়ির দোকানগুলোতে তুলনামূলকভাবে ভিড় ছিল কম। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ‘মনে রেখ শাড়িজ’র ম্যানেজার সবুজ মিয়া বলেন, ভারতীয় ভিসা সহজ হওয়ায় দেশের বাজারে শাড়ির বিক্রি কমে গেছে। অনেকেই ঈদের শপিং করতে এখন ভারতে যাচ্ছেন। তারা আর দেশের বাজার থেকে শাড়ি কিনছেন না। তবে কমদামি শাড়ির চাহিদা আগের মতোই আছে। নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউসিয়া, ধানম-ি হকার্স, গাউসল আজম মার্কেট, রাইফেলস স্কয়ার, ক্যাপিটাল মার্কেট, ধানম-ি প্লাজা, মেট্রো শপিংমল, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজাসহ রাজধানীর কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক কেনায় আগ্রহী বেশি ক্রেতারা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন বলেন, মার্কেটগুলো ঈদের জন্য প্রস্তুত। বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। তবে অনেকে ঈদের কেনাকাটা করতে ভারতে যাচ্ছেন। এর প্রভাব রয়েছে বাজারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশেই নামি-দামি সব ধরনের পোশাকসহ ঈদের সব সামগ্রীই পাওয়া যায়। তবুও ঈদ এলে মানুষ কেন যেন ছুটে যায় পাশের দেশ ভারতে। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, গত রোজ ঈদের শপিং করতে দেড় লাখের মতো বাংলাদেশী ভারতে গিয়েছিলেন। গত বছরের চেয়ে এবার হয়তো আরও বেশি মানুষ যাবে। এতে ঈদ শপিংয়ের দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা চলে যাবে ভারতের বাজারেই।
×