ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মশা মারার দায়িত্ব কার

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৯ জুন ২০১৭

মশা মারার দায়িত্ব কার

রাজধানীতে মশার উপদ্রব কমবেশি বছরভরই থাকে, তবে সম্প্রতি মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া বিস্তার লাভ করায় মশক নিধনের বিষয়টি জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া উভয় রোগের বাহকই এডিস মশা। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা গেলেও পরে বিচ্ছিন্ন দু-একটি রোগী ছাড়া বড় বিস্তার ছিল না। তবে এ বছর ঢাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মশা নিধনে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে মাঠে নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইইডিসিআর ও দুই সিটি কর্পোরেশন এই কর্মসূচীতে সহায়তা করছে। এই উদ্যোগ কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও এ ধরনের কর্মসূচী নিতে এত দেরি কেন হলোÑ সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকার মশা নিধনের দায়িত্ব মশক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। কিন্তু এই দফতরের ব্যর্থতার পর এ কাজ এখন চলছে যৌথভাবে। অধিদফতরের মোট জনবলের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু জনবল যুক্ত করে যৌথভাবেই নগরীর মশা নিধনের কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না। কোনভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাজেটের দিকে নজর দিলে মনে হবে মশা মারার জন্য কামান দাগার প্রস্তুতি রয়েছে কর্তৃপক্ষের। গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মশা নিধন খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চলতি বছর (২০১৬-২০১৭) তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। একদিকে বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে, অপরদিকে পাল্লা দিয়ে ভয়ঙ্কর মশাও বেড়ে চলেছে। তাই এখাতে কোন দুর্নীতি হচ্ছে কিনা সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র বলেছিলেন, রাজধানী থেকে মশা দমন করাই হবে তাদের প্রধান কাজ। কিন্তু মশা দমনে তারা কি সাফল্য দাবি করতে পারবেন? রাজধানীর প্রতিটি এলাকাতেই ডোবা-নালা, নর্দমা এবং ড্রেন রয়েছে। যেগুলো থেকে মশা বংশবিস্তার করছে। সেগুলোতে সবসময় মশার ওষুধ স্প্রে করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সিটি কর্পোরেশন মাঝে মধ্যে যে ওষুধ স্প্রে করে নাÑ সে কথা আমরা বলছি না। কিন্তু এর ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায় না। এখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মশা নিধনের দায়িত্ব নিতে চাইছেন ঢাকার কাউন্সিলররা। জনগণের কাছে যেহেতু জনপ্রতিনিধিদেরই জবাবদিহি করতে হয়, তাই এ কাজের দায়িত্বও নিজের ঘাড়ে নিতে চান তারা। এ ব্যাপারে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে দেয়া হলে নগরীতে মশার উপদ্রব থাকবে না। সত্যিই কি তাই? সবে বর্ষাকাল শুরু হলো। সামনে পড়ে রয়েছে পুরো মৌসুম। এখনি জনসচেতনতা বাড়াতে না পারলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা কঠিন হবে। আমরা আশা করব, ঢাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের ব্যাপক বিস্তারের প্রেক্ষিতটি দুই মেয়র স্মরণে রাখবেন এবং মশা মারার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। এ কাজে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কিভাবে সক্রিয় সেবা নেয়া যায়, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেবেন।
×