ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে উপমা আহমেদ

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৩ জুন ২০১৭

জাতিসংঘে উপমা আহমেদ

ডিপ্রজন্ম : নিজের মুখে শুনতে চাই কি কি কাজের সঙ্গে জড়িত আপনি? উপমা আহমেদ : জাতিসংঘের নারী সংস্থার একটি প্রোজেক্ট হচ্ছে ‘এম্পাওয়ার ফর ওমেন।’ দীর্ঘ ৩ ধাপের অনলাইন পরীক্ষার পর সর্বমোট চারহাজার জন থেকে বিশ্বব্যাপী এক শ’ ২০ জন ঈযধসঢ়রড়হ ভড়ৎ ঈযধহমব নির্বাচিত হয়। এরমধ্যে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে নিজের নাম দেখে সত্যি বিস্মিত হয়েছিলাম। আসল প্রেরণাটা আসেন এখান থেকেই। বাংলাদেশে এসডিজি ৫ এর বাস্তবায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে কিছু আগ্রহী বন্ধুবান্ধব নিয়ে গড়ে তুলি ‘ইভোলিউশন ৩৬০’ এছাড়া নাইজেরীয় একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নারীর অধিকার সমর্থন এ কাজ করছি। এবং জাতিসংঘের অধীনে থাকা সংস্থা এষড়নধষ রহংঃরঃঁঃব ভড়ৎ ডড়সবহ ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ (এওডঊ) এগ্লোবালি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছি প্রথম এবং একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে। ডিপ্রজন্ম : জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে, কিভাবে বাংলাদেশের নারীদের জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে কাজে সহযোগিতা করেন? উপমা আহমেদ : আমি মূলত লিঙ্গ বৈষম্য দুরীকরণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বিস্তারে কাজ করছি। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন এরজন্য প্রথমেই দরকার তাদের নিজ নিজ কাজের যথাযথ স্বীকৃতি। ইউএন ওমেনের কাজের প্রসঙ্গ আমি বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী সংস্থা ও এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করি, তারাও সহায়তা করে। বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার সফল নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে তাদের সফলতার গল্প জাতিসংঘের #ঐবৎঝঃড়ৎু পধসঢ়ধরমহ এ প্রকাশ করি। এছাড়া ওয়ার্কশপ-এর মাধ্যমে সাধারণ নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার সহজ উপায় দেখিয়ে দেই। জাতিসংঘ থেকে আমাকে দেয়া গাইডলাইন অনুযায়ী তাদের সহজে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেতে সাহায্য করছি। এছাড়াও আমার #ঝঢ়বধশভড়ৎঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ পধসঢ়ধরমহ এ প্রায় ৭৬ জন তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেছে, যেখানে তারা নারীর ক্ষমতায়ন এর বিভিন্ন অভিনব উপায় উপস্থাপন করেছে। ডিপ্রজন্ম : ইভালুয়েশন ৩৬০ ডিগ্রীর প্রেসিডেন্ট আপনি। সংগঠনের কাজের পরিধি এবং সদস্যদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাই- উপমা আহমেদ : ‘ইভোলিউশন ৩৬০’ একটি নারী ও যুব ক্ষমতায়ন সংস্থা যার লক্ষ্য যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা। ৬ মাসের এই সংস্থায় বর্তমানে আমাদের মোট ৬৫ সদস্য আছেন, যাদের মধ্যে পনেরো জন এক্সিকিউটিভ মেম্বার। এ ছাড়াও এখন নতুন মেম্বার রিক্রুটমেন্ট চলছে। বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে, যেমন- লজিস্টিক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, পাবলিকেশন ইত্যাদি, যা একেক টিম পরিচালনা করে। আমরা মূলত বিভিন্ন ওয়ার্কশপ আয়োজন করে যুব সমাজকে এসডিজি৫ এর প্রয়োজন সম্পর্কে তাদের জানাই এবং এটা বাস্তবায়নের জন্য নানা পন্থা দেখাই। এছাড়া মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা যোগাই, পাশাপাশি যুবসমাজকে বোঝাই যে নারীর ক্ষমতায়নের মধ্যে শুধুমাত্র নিজের পায়ে দাঁড়ানো নয়, বরং তার মতো প্রকাশের স্বাধীনতাও। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো, আমাদের সংস্থার সব সদস্য একি আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করে। ইতোমধ্যে আমরা ঢাকার বাইরে ২টা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টা ওয়ার্কশপ নিয়েছি। আমাদের ফেসবুক এড্রেস : @ঊাড়৩৬০এষড়নধষ ডিপ্রজন্ম : এখন পর্যন্ত পাওয়া স্বীকৃতিগুলো- উপমা আহমেদ : ডড়সবহ ঊহঃৎবঢ়ৎবহবঁৎংযরঢ় অংংড়পরধঃরড়হ ইধহমষধফবংয (ডঊঅই) থেকে আমাকে ‘ইউথ লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা প্রদান করে বাংলাদেশের ১০ সাহসী নারীর একজন হিসেবে। এছাড়াও উটঘগটঘ ’১৬, ঔগটঘ ’১৬, ইটচগটঘ ’১৬, অঝঅগটঘ ’১৬ ও উরঢ়ষড়সধঃরপ ঈড়হপষধাব সহ বিভিন্ন ছায়া জাতিসংঘে অংশগ্রহণ করে ‘বেস্ট ডেলিগেট’ এবং ‘আউটস্ট্যান্ডিং ডেলিগেট’ হিসেবে সর্বমোট ৫টি আওয়ার্ড আছে। কিন্তু কলেজে পড়াকালীন ভিকারুননিসা থেকে পাওয়া ‘এ্যাসিস্ট্যান্ট হেডগার্ল’ এর স্মারকটি আমার সবচেয়ে প্রিয়। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে ‘কনফারেন্স এইড’ হিসেবে কাজ করার মধুর অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন রেডিও শো এবং ইউনিভার্সিটি তে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পাচ্ছি। ডিপ্রজন্ম : পরিবারের সহযোগিতা কেমন ছিল আজকের উপমাকে তৈরির ক্ষেত্রে? উপমা আহমেদ : আসলে একটি গাছ যেমন পরিচর্যা ছাড়া বড় হয় না, তেমনি পরিবারের সহায়তা ছাড়াও কেউ সফল হতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই আমি পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি। ২০১৪ সালে এইচএসসি দেয়ার পর সরকারী মেডিক্যালে চান্স পাওয়া সত্ত্বেও যখন ঢাবির ওই বছরের ‘২ জন চান্স পাওয়া’ বিখ্যাত ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হওয়ায় সবাই কটুকথা বললেও, তারা আমার পছন্দকে গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া এখনও তারা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে, তাই আজকের এই উপমাকে গড়ে তুলতে তাদের অবদান এ সবচেয়ে বেশি। ডিপ্রজন্ম : বাংলাদেশী তরুণদের নিয়ে কাজ করেন আপনি। স্বপ্ন দেখেন নারীদের স্বাবলম্বী করবেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক বিষয়গুলো কি মনে করেন? উপমা আহমেদ : যেই দেশে আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, সেই দেশে নারীর ক্ষমতায়ন এর আমি মনে করি অনেক সুযোগ আছে। আমার মতে একজন নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি। কেননা আমাদের সমাজে একজন নারীকে নানা বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, যা মোকাবেলা করতে দৃঢ় মনোবল দরকার। এছাড়া তাদের সুযোগ এর সৎ ব্যবহার করতে জানতে হবে। সেক্ষেত্রে একজন স্বাবলম্বী নারী যদি হিংসা ভুলে আরেকজন নারীকে সহায়তা করে, তবে আমাদের সমাজের এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ রুখতে পারবে না। আর সরকার যদি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য লোন নেয়ার প্রক্রিয়াটি আরেকটু সহজ করে তবে অনেকেই উৎসাহী হবে। ডিপ্রজন্ম : বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কথাগুলো বলছেন নিয়মিত, তরুণদের চিন্তাভাবনা জানছেন। বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা বলুন... উপমা আহমেদ : যেহেতু আমি নিজেই তরুণ সমাজের, তাই এই প্রজন্মকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপ এ অনেক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। এদের কারও কারও মধ্যে সমাজসেবামূলক কাজ করার স্প্রীহা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। অন্যদিকে এমন কিছু মানুষ ও আছে যারা এখনও ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ও ‘নারীবাদ’ কে নেতিবাচক চোখে দেখে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীর ক্ষমতায়ন মানেই পুরুষের বেকারত্ব নয়, বরং দুজনের সম্মিলিত প্রয়াসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এবং ‘নারীবাদ’ মানে নারীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নয়, বরং নারী ও পুরুষের সমতা, অর্থাৎ ‘মানবতার প্রতিষ্ঠা।’ এই আদর্শগুলো আমাদের যুবসমাজের মধ্যে থাকলে নিশ্চয় একদিন আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
×