ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাতারবাড়িতেই হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১১ জুন ২০১৭

মাতারবাড়িতেই হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে মহেশখালীর মাতারবাড়িতেই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বিনিয়োগে এ বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। প্রাথমিক সমীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ায় আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর হোক। এটি সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া কিংবা মাতারবাড়ি যেখানে হোক না কেন কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর হলে দেশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এছাড়া মাতারবাড়িতে এ বন্দর হলে যোগাযোগের কারণে দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন কক্সবাজারবাসী। গত এক দশক ধরে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে আলোচনা চললেও স্থান নির্ধারণে দেখা দেয় নানা জটিলতা। এছাড়া বিনিয়োগকারী দেশ নিয়েও ছিল টানাপোড়েন। এ অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার জন্য কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি এলাকা নিয়েই ছিল প্রতিবেশী বেশকটি দেশের আগ্রহ। ইতোমধ্যে মাতারবাড়িতে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ বেশকিছু শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য লোড-আনলোড করার জন্য জাইকার তত্ত্বাবধানে একটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জাইকার অর্থায়নে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিংও সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, ১০০ মিটার প্রশস্ত এবং এর মূল চ্যানেল হবে ৩২৫ মিটার প্রশস্ত ও ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এছাড়া ড্রেজিংও কম হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান মাতারবাড়ির। আর কক্সবাজার থেকে দূরত্ব ৪০ নটিক্যাল মাইলের কম। কক্সবাজারবাসী মনে করছে, এখানে বন্দর হলে যোগাযোগের কারণে দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, এখান থেকে ট্রান্সপোর্টেশন এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে চাকা সেটা কিন্তু ঘুরে যাবে। মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল গভীর সমুদ্রবন্দর। আর সরকারেরও পরিকল্পনা কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর হোক। প্রথমে এটি মহেশখালীর সোনাদিয়ায় হওয়ার কথা ছিল। কক্সবাজার উপকূলে সাগরের গভীরতা থাকায় গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য কক্সবাজারের সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া কিংবা মাতারবাড়ি যেখানে হোক না কেন এটি কক্সবাজার উপকূলে হলেই হল। এ গভীর সমুদ্রবন্দর হলে কক্সবাজারসহ পুরো দেশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্ত ঘটবে। বর্তমানে দেশের আমদানি-রফতানির ৯২ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সরকারের আগামীতে যে লক্ষ্য সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি নয়, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন জরুরী বলে মনে করে বিজিএমইএ। বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, আমরা আশা করছি ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে রূপান্তর সম্ভব। এজন্য বন্দরের সক্ষমতার পাশাপাশি গভীর সমুদ্রবন্দরেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৮ সালের শেষের দিকে বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করবে জাইকা। আর ২০২৪ থেকে ২৫ সালের মধ্যে পুরোদমে অপারেশনে যাবে এ বন্দর। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে গভীর সমুদ্রবন্দর।
×