ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেট যেখানে সাত নম্বর খেলা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১০ জুন ২০১৭

ক্রিকেট যেখানে সাত নম্বর খেলা

ইংল্যান্ড জাতীয় দলে এ মুহূর্তে ওয়েলসের কোন ক্রিকেটার নেই। তাতেই বোঝা যাচ্ছে ওয়েলসে ক্রিকেটটা এত জনপ্রিয় নয়। এখানে ক্রিকেটটা এতটাই জনপ্রিয়তাহীন যে সাত নম্বর খেলা ক্রিকেট। ওয়েলসে রাগবি সবচেেেয় জনপ্রিয়। এরপর ফুটবল। তারপর হচ্ছে এ্যাথলেটিক্স। তারপর বাস্কেটবল। তারপর বক্সিং। তারপর বেসবল। তারপর গিয়ে ক্রিকেট জনপ্রিয়। এখানে একটি ক্রিকেট ক্লাবই আছে। গ্ল্যামরগান কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব। আর এ ক্লাবটিই শুধু ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে হওয়া কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়। এই দলটি ওয়েলসের একমাত্র প্রথম শ্রেণীর দল। দলটি থেকে তাই ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে কোন ক্রিকেটার খেলাটা কঠিনই। ওয়েলসে ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে পরিচিত নামটি হচ্ছে জনি ক্লে। তিনি ১৯৩৫ সালেই ইংল্যান্ডের হয়ে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৭৩ সালে মৃত্যুবরণ করা এ ক্রিকেটার ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। অফস্পিন এবং লেগস্পিন; দুইভাবেই বল করতেন। এমনকি মিডিয়াম পেসারও ছিলেন। এরপর আছে রবার্ট ক্রফ। তিনি ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের হয়ে খেলেছেন। তিনি প্রথম ওয়েলস ক্রিকেটার যিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেছেন। ১ হাজার উইকেটও নিয়েছেন। ডানহাতি এ স্পিনার ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ২১টি টেস্ট ও ৫০টি ওয়ানডে খেলেছেন। এ দুই বিখ্যাত ক্রিকেটারের পর ১৫ টেস্টে ৪৪ উইকেট নেয়া জেফ জন্স, ২০০৫ সালে এ্যাসেজ জেতা দলের সদস্য সাইমন জন্স, এক টেস্ট খেলা অস্টিন ম্যাথুজ, হুগ মরিস, সাত টেস্ট খেলা গিলবার্ট পার্কহাউস, ২০ টেস্ট ও একটি ওয়ানডে খেলা পেট পোকক, পাঁচ টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলা গ্রেগ থমাস, নয় টেস্ট খেলা মওরিচ টার্নবুল, তিন টেস্ট ও চার ওয়ানডে খেলা স্টিভ ওটকিন, ১৫ টেস্ট খেলা এ্যালান ওটকিংস, চার টেস্ট ও ১৪ ওয়ানডে খেলা ম্যাথুউ মেইনার্ড ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলেছেন। ২০০৫ সালে সাইমন জন্স সর্বশেষ ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলেছেন। এরপর আসলে আর কোন ক্রিকেটার ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলতে পারেনি। ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও ওয়েলস জাতীয় দল আলাদাই ছিল। কিন্তু ১৯৯৭ সাল থেকে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস এক হয়ে গেছে। ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফিতে ওয়েলস জাতীয় দল খেলেছেও। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ওয়েলস ৫০ ওভারের ম্যাচও খেলেছে। ইংল্যান্ডকে একবার হারিয়েও দিয়েছে। কিন্তু এখন আর এই দলটি থেকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ক্রিকেটার দেখা যায় না। ঘরোয়া দলই যে মাত্র একটি। আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও তো মাত্র একটি। কার্ডিফ সোফিয়া গার্ডেন। যেটির নাম এখন পরিবর্তন হয়ে সোয়ালেক স্টেডিয়াম হয়ে গেছে। এ স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতাও আবার মাত্র ১৫ হাজার। শুক্রবার এখানেই বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি হলো। উপমহাদেশ ছাড়া সব স্থানেই এ সমস্যা। ক্রিকেটটা জনপ্রিয় নয়। জনপ্রিয় থাকলেও রাগবি, ফুটবল, এ্যাথলেটিক্স, বাস্কেটবল, বক্সিং, বেসবলের আগে ক্রিকেটটা আসে না। ওয়েলসেও একই সমস্যা। এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। নাম তার ফেইজাল। কেনিয়ায় তার জন্মস্থান। কিন্তু থাকেন কার্ডিফে। আছেন ৩০ বছর ধরে। তিনি জানালেন, ‘দেখেন এখানে (ওয়েলসে) ক্রিকেট আসলে এত জনপ্রিয় খেলা নয়। বলতে গেলে জনপ্রিয়তা নেই-ই। ওয়েলসে কেন, পুরো যুক্তরাজ্য জুড়েই ক্রিকেটটা জনপ্রিয় খেলা বলা যাবে না। প্রথম জনপ্রিয় এখানে রাগবি। এরপর ফুটবল। আরও কয়েকটি খেলা আছে। তারপর আসে ক্রিকেট। এখানে ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি নেই। ইংল্যান্ডে আবার ফুটবলটাই আগে। তারপরই ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কিন্তু ওয়েলসে ক্রিকেটটাকে নিয়ে কোন উত্তেজনা নেই। এখানে যে ক্রিকেট খেলা হয় সেটি অনেকে জানেই না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এখানে ক্রিকেটারদের তেমন আয়ও নেই। ধরতে পারেন সপ্তাহে ৫ হাজার পাউন্ড আয়। বা তারচেয়েও কম আয়। রাগবি খেলোয়াড়দের ওয়েলসে খুব দাম। তাদের আয় ক্রিকেটারদের চেয়েও অনেক বেশি। তবে পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে যদি হিসেব করা হয় তাহলে ফুটবলটা জনপ্রিয়। ইংল্যান্ডে তো ফুটবল নিয়ে চরম মাতামাতি। ওয়েলসে কেন যুক্তরাজ্য জুড়ে গ্যারেথ বেল যেমন সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার। এরপর আছেন ওয়েইন রুনি। এ দুই ফুটবলার এ মুহূর্তে অনেক জনপ্রিয়। তাদের আয় রাগবি, ক্রিকেটারদের চেয়েও ১০ গুণ বেশি।’ যতদূর জানা গেছে, আসলেই এখানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। যতখানি আছে সেটি উপমহাদেশের কোন দল খেললে মাতামাতি হয়। উপমহাদেশের দলগুলোর মানুষ যে যুক্তরাজ্যে বসবার করেন। তারাই খেলা দেখতে যান। স্টেডিয়ামও তাদের দিয়েই ভরে। ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে তো দর্শকই দেখা গেল না। যাবে কি করে। ওয়েলসে যে ক্রিকেটটা সাত নম্বর খেলা।
×