ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাটের নতুন নিয়মে বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৯ জুন ২০১৭

ভ্যাটের নতুন নিয়মে বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন কার্যকর হলে বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম। ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে বিক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব শুরু হলে এ খাতে ভ্যাটের পরিমাণ সিলিন্ডারের আকার ভেদে ১ হাজার ২৮ শতাংশ থেকে ১ হাজার ৫শ’ ৮৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের সিলিন্ডার ভেদে ৫৪ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় বহন করতে হবে। এ অবস্থায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিবেচনায় এলপি গ্যাসের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি চান ব্যবহারকারী ও উদ্যোক্তারা। বাড়তি ভ্যাট আরোপের ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলায় ২০১৯ সালের মধ্যে আবাসিক ও পরিবহন কাজে ৭০ শতাংশ গ্রাহকের কাছে এলপি গ্যাস সরবরাহে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে বলে মনে করেন তারা। জানা গেছে, ব্যবহার উৎসাহিত করে পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ওপর চাপ কমাতে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে এলপি গ্যাসের ট্যারিফ মূল্যের উপর ভ্যাট আরোপ করা হয়। বর্তমানে এ খাতে ভ্যাটের হার ট্যারিফ মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ। এর ফলে বাজারে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু নতুন (২০১২ সালের ভ্যাট আইন) ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট নির্ধারন পদ্ধতি প্রত্যাহার করে সার্বজনীন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের বিধান করা হয়েছে। নতুন আইনে ধারা-২৬ এর আওতায় প্রথম তফসিলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা বিবেচনায় বেশ কিছু পণ্যকে ভ্যাট অ্যবাহতি দেয়া হয়েছে। অব্যাহতি পাওয়া পণ্য ও সেবার মধ্যে রয়েছে মানুষের মৌলিক চাহিদা, কৃষি, মৎস্য, গবাদি পশু, স্থাবর সম্পত্তি, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি সংক্রান্ত পণ্য ও সেবা। তবে এই তালিকায় জ্বালানি সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবা, বিশেষ করে এলপি গ্যাসকে রাখা হয়নি। এ কারণে জ্বালানির অন্যতম উৎস এলপি গ্যাসের ওপরও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছেÑ যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। অব্যাহতির তালিকায় না রাখা এবং সার্বজনীন ভ্যাট হার কার্যকর হওয়ায় সব আকারের বাসা-বাড়ি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক বলেন, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ একেবারেই অপ্রতুল। বিদ্যুত ও সার উৎপাদনের জন্য এই গ্যাস প্রয়োজন। সরকার বাসা-বাড়ি ও হোটেল-রেস্তরাঁ, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতে পাইপলাইনে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। এসব কাজে এলপি গ্যাসের ব্যবহার উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্প খাতেও এই গ্যাস কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি ভ্যাটের কারণে দাম বাড়লে এলপি গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহে ভাটা পড়বে। এতে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে সরকারের চেষ্টা ব্যাহত হবে। এলপি গ্যাস নিয়ে সরকারের উদ্যোগ সফল করতে এ খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। ভোক্তা ও প্রান্তিক মানুষের পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় মাননাীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভ্যাট নির্ধারনে বিদ্যমান পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১০ কেজি আকারের সিলিন্ডারের ট্যারিফ মূল্য ধরা হয় ৩৫ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয় ৫ টাকা ২৫ পয়সা। ভ্যাট ছাড়া এই আকারের প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের বিক্রয় মূল্য ৩শ’ ৯৭ টাকা ৭৫ পয়সা। ভ্যাটসহ ব্যবহারকারীদের কাছে এই সিলিন্ডার ৪শ’ টাকায় সরবরাহ করা হয়। একইভাবে বর্তমানে ১১ থেকে ৩০ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ৯ টাকা ভ্যাটসহ সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ৮৯৭ টাকা। ৩১ থেকে ৪৫ কেজির সিলিন্ডারে ভ্যাট ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। এই সিলিন্ডারের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার ১শ’ ৩০ টাকা। অন্যদিকে নতুন পদ্ধতিতে বিক্রয় মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের ফলে ৫ থেকে ১০ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ভ্যাট আদায় করা হবে ৩১৬ টাকা ৬৯ পয়সা। এতে এই সিলিন্ডারের সরবরাহ মূল্য দাঁড়াবে ৪৫৪ টাকÑ যা বর্তমানের তুলনায় ৫৪ টাকা বেশি। একইভাবে নতুন হারে ১১ থেকে থেকে ৩০ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ভ্যাট ১৩৩ টাকা ২০ পয়সা এবং সরবরাহ মূল্য ১ হাজার ২১ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়াবে। যা বর্তমানের তুলনায় ১২৪ টাকা বেশি। ৩১ থেকে ৪৫ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ভ্যাট ৩১৬ টাকা ৬৯ পয়সা ও সরবরাহ মূল্য ২ হাজার ৪২৭ টাকা ৯৪ টাকায় দাঁড়াবে। এই আকারের সিলিন্ডারে দাম বাড়বে প্রায় ৩০০ টাকা।
×