ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমানতের সুদ আরও কমল

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৭ জুন ২০১৭

আমানতের সুদ আরও কমল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোনভাবেই আমানতের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। আমানতের সুদহার কমতে কমতে বর্তমানে তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরও আমানতের সুদহার কমা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও এ খাতে আমানতের গড় সুদহার কমেছে দশমিক ০৪ শতাংশ। সূত্র জানায়, ধারাবাহিক আমানতের সুদ কমায় ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তারা বেশি লাভের আশায় বিকল্প উৎসে টাকা খাটাচ্ছেন। এতে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকেও। আর্থিক খাতের এ অবিভাবক মনে করছে, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে যা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই আমানতের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা রোধে সব ব্যাংকে সক্রিয় থাকার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে একটি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ হার ঋণের সুদ হারের চেয়ে দ্রুততর হ্রাস পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আমানতের ওপর সুদহারের অত্যাধিক হ্রাস সঞ্চয় প্রবণতাকে ক্ষুণœ করছে এবং সঞ্চয়ের বদলে অপচয়মূলক ভোগ ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের প্রবণতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। এতে আরও বলা হয়, কোন অবস্থাতেই ঋণের নি¤œমুখী ধারা অব্যাহত রাখতে আমানতের সুদহার সংকোচন করা যাবে না। বরং ঋণের সুদহারের নি¤œমুখী ধারা অব্যাহত রাখার জন্য ইন্টামিডিয়েশন স্প্রেড সংকোচন করতে হবে। খেলাপিঋণ আদায়সহ ব্যবস্থাপনা দক্ষতার বিভিন্ন দিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংকই ঐ নির্দেশনা পরিপালন করেনি। সূত্র বলছে, অতি মুনাফা প্রবণতা ও খেলাপিঋণ বৃদ্ধির অজুহাত ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ কমিয়ে দিলেও ঋণের সুদ কমাচ্ছে না। তাদের এই দ্বৈত আচরণে আমানতকারি ও ঋণগ্রহীতা উভয় গ্রাহকই ঠকছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যা মার্চ মাসে ছিল ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। অন্যদিকে, এ মাসে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। যা মার্চ মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে (টানা ৪ বছর) ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার কমছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে গড় আমানতের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর একই বছরের এপ্রিল মাসে ছিল ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে তা নেমে এসেছে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এর মধ্যে ২০১৫ ও ২০১৬ সালেই আমানতের সুদহার দ্রুত কমেছে। চলতি বছরও তা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে তা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, ব্যাংকে টাকা রেখে কোন লাভ হচ্ছে না। কারণ আমানতের বিপরীতে প্রকৃত যে মুনাফা (সুদহার) পাওয়া যাচ্ছে তা মূল্যস্ফীতির হারের চেয়েও নীচে রয়েছে। এছাড়া আমানতের মুনাফায় উৎসে কর, ভ্যাট, আবগারি শুল্ক ও ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ কেটে রাখার পর মুনাফা বলে কিছুই থাকছে না। এর ওপর নতুন অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ টাকার বেশি এ্যাকাউন্টে আবগারি শুল্ক ৮০০ টাকা কর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা নিয়ে ব্যাংক আমানতকারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এদিকে আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদ কমায় এপ্রিল মাসে ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান স্প্রেড) দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যা মার্চ মাসে ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ সময়ে বেসরকারী ও বিদেশী খাতের অন্তত ১৫ ব্যাংকের স্প্রেড বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত সীমার বাইরে রয়েছে। এগুলো হলো-দ্য সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, উরি ব্যাংক ও এইচএসবিসি ব্যাংক।
×